করলা স্বাদে তিক্ত হলেও অন্যতম স্বাস্থ্যকর একটি সব্জি। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে পরিপূর্ণ এই সব্জির রস করে অথবা রান্না করেও খাওয়া যেতে পারে। করলার বেশ কিছু গুণাবলী রয়েছে। নিয়মিত এর সেবন সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং ডায়রিয়া, চোখের ছানি, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সারের মতো অনেকগুলি রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
করলার স্বাস্থ্যগুণ -
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাল -
তিক্ত স্বাদযুক্ত করলায় একটি যৌগ থাকে, যা ইনসুলিন গঠনের মতো কাজ করে। আসলে, করলা টাইপ I এবং টাইপ II ডায়াবেটিস উভয় ক্ষেত্রেই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস করে। এটি এতই কার্যকর যে করলার এক গ্লাস রস নিয়মিত সেবন, ডায়াবেটিস রোগীদের তাদের ওষুধের ডোজ কমাতে সাহায্য করে।
ত্বক এবং চুলের যত্নে করলা -
করলা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ, যা ত্বকের জন্য ভাল। এটি ত্বক থেকে বার্ধক্যের রেখা অপসারণ করে এবং ব্রণ এবং ত্বকের যে কোন দাগ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি বিভিন্ন ত্বকের সংক্রমণের যেমন দাদ, সোরিয়াসিস এবং চুলকানি নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারেলার রস চুলের জন্যও উপকারী। এর ব্যবহার চুল পড়া, খুশকি এবং চুলের ডগা ফাটা রোধ করে চুলকে স্বাস্থ্যজ্জ্বল করে তোলে।
লিভার ক্লিনজার -
তিতা করলা লিভার ডিটক্সিফাই করে। এটি লিভারের এনজাইমগুলিকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে ফ্যাটি লিভারের মতো সমস্যার থেকে আপনি সহজেই দূরে থাকবেন।
হজমের পক্ষে ভাল –
খাবার হজম করতে সহায়ক এবং হজম শক্তি বর্ধক এই সব্জি। তবে শুধু হজম শক্তিই নয়, করলা ফাইবারে পূর্ণ হওয়ায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।
হার্ট ভালো রাখে -
এর তিক্ত রস এলডিএল অর্থাৎ খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করে।
প্রস্টেট ক্যান্সার -
করলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অ্যালার্জি ও যে কোন রোগের সংক্রমণ রোধ করে। এটি ক্যান্সার কোষের বিস্তার রোধ করে। নিয়মিত করলা খেলে স্তন ক্যান্সার (Breast cancer), কোলন ক্যান্সার (Colon cancer) এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের (Prostate cancer) ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ (Weight control) -
ক্যালরি ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় করলা ওজন হ্রাসে সহায়তা করে। এটি অ্যাডিপোজ কোষ যা দেহে ফ্যাট সংরক্ষণ করে, তার গঠন এবং বৃদ্ধি বন্ধ করে। এটি পরিপাক ক্রিয়া উন্নতি করে এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি শরীরকে ডিটক্সাইয়েটে সহায়তা করে যাতে চর্বি হ্রাস করতে পারে।
ক্ষত নিরাময়ে করলা -
করলার দুর্দান্ত একটি বৈশিষ্ট্য এটি। কোন স্থানে ক্ষত হলে করলার ব্যবহার তৎক্ষণাৎ ওই স্থানের রক্ত প্রবাহ এবং রক্ত জমাট বাঁধা নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে ক্ষতের দ্রুত নিরাময় হয়।
রক্ত পরিশোধক -
করলাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সহায়তা করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
দেহে শক্তি জোগায় -
নিয়মিত করলা সেবনে দেহের স্ট্যামিনা এবং শক্তির মাত্রা উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পায়।
দৃষ্টি শক্তির উন্নতি করে -
করলা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ, এটি ছানি প্রতিরোধ করে এবং দৃষ্টি শক্তিশালী করে।
এছাড়াও এটি অনিদ্রার মতো সমস্যা হ্রাস করে। ডায়রিয়া ও পেটের অন্যান্য সমস্যাও কমাতে সহায়ক এই সব্জি। আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেমকে (Immune system) বাড়িয়ে তুলে শরীরকে রোগে সংক্রামিত হওয়ার থেকে সুরক্ষা প্রদান করে করলা।
তবে এই পুষ্টিগুণ থাকা সত্ত্বেও গর্ভবতী মহিলাদের করলা খাওয়া একদমই অনুচিত। কারণ এটি জরায়ুর সংকোচন ঘটায়। তাই গর্ভাবস্থায় এই সব্জি এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
স্বপ্নম সেন
Share your comments