দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ত রুটিন আর লক্ষ্য ভেদের তাগিদে ঝড়ের বেগে এগিয়ে চলা। দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে চাপা টেনশন-স্ট্রেস, শরীরও পড়ছে ভেঙে। যার ফলে আসছে অনিদ্রার মতন রোগ--ইনসোমনিয়া। এই রোগে ঠিকমতন ঘুম আসতে চায় না। অনিদ্রার এই রোগে শুধুমাত্র স্ট্রেসজনিত কারণই দায়ী নয়। বেডরুমের অস্বস্তিজনক পরিস্থিতি অথবা বেঠিক তাপমাত্রাও এই রোগের কারণ বলে ধরা হয়।
চিকিৎসকদের মতে, অক্সিজেনের অভাব কম হলেই বিভিন্ন রোগের সূত্রপাত হয়। গাছপালা শরীরের অক্সিজেন বৃদ্ধিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষকদের মতে শোওয়ার ঘরে বিশেষ কয়েকটি গাছ রাখলে এই অনিদ্রাঘটিত রোগ দূর হয়। ঘরের বাতাস এই বিশেষ গাছগুলি বিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য করে, যার ফলে ঘর অথবা বেডরুমের টক্সিনের আধিক্য কমে আসে এবং অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
আজকের প্রতিবেদনে এরকমই কয়েকটি গাছ নিয়ে আলোচনা করা হল। যেই গাছগুলি আপনার বেডরুমের পরিবেশ বিশুদ্ধ করে তুলে ঘরের শোভাও বাড়িয়ে তুলবে। আপনি যদি এই গাছগুলিকে ঘরে রাখেন তাহলে দাবি সহকারে বলা যায়, বাতাস পরিষ্কার রাখার সাথে সাথে এই শোভাবর্ধক গাছগুলি আপনার রাতের ঘুমেরও সহায়ক হবে।
১. অ্যালোভেরা – (Aloe Vera)
অ্যালোভেরা গাছের ওষধি গুণ নিয়ে আমরা সবাই ওয়াকিবহাল। কিন্তু হয়তো অনেকেই জানেন না, অ্যালোভেরা বেঞ্জিনের মতো টক্সিন পরিবেশ থেকে শুষে নিতে পারে এবং এরই সঙ্গে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। তাই আপনার বেডরুমে রাখার জন্য এই গাছ আদর্শ। অক্সিজেন সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর পরিবেশে ঘুম তো আসবেই সঙ্গে ঘরের শোভাও অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলবে এই গাছ, তা নিয়ে কোনও দ্বিধা নেই।
২. স্নেক প্ল্যান্ট- (Snake Plant)
গাছের নাম শুনে গা শিরশির করে উঠলেও ভয়ের কিছু নেই। বরং এই গাছ বেডরুমে রাখলে ঘুমের আর ঘাটতি থাকবে না। এই গাছের পরিচর্যা কম করলেও কোনও অসুবিধা নেই। টবে লাগিয়ে বেডরুমের এককোণে রেখে দিলেই হল। রাতের বেলায় ঘরের অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে এই স্নেক প্ল্যান্টের জুড়ি মেলা ভার। স্নেক প্ল্যান্ট বেঞ্জিনের মতো টক্সিক গ্যাস দূর করে অনেকাংশে সাহায্য করে।
৩. তুলসী- (Tulsi)
ওষধি গুণ সমৃদ্ধ তুলসী গাছ। যার পাতার মানবশরীরে সর্দিকাশি থেকে বিভিন্ন জটিল অসুখ দূর করতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্বাস্থ্য ধরে রাখতেও এই গাছের পাতার জুড়ি মেলা ভার। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরের উঠোনে এই গাছকে দেখা যায়, যা গুরুত্বসহযোগে আজও পূজিত হয়ে আসছে।
তুলসী গাছ যদি আপনি বেডরুমে রাখেন, তাহলে ঘরের ৯০% ধূলোকণা এই গাছ শুষে নিতে পারে। এর সাথে ঘরের অক্সিজেনের মাত্রাও বাড়িয়ে তোলার মতন গুণও রয়েছে এই ওষধি বৃক্ষের। তুলসী গাছ ঘরে থাকলে মন শান্ত করা আধ্যাত্মিক পরিবেশও তৈরী হয়, যাতে ঘুম আসতে বাধ্য।
৪. রাবার গাছ-(Rubber Plant)
বেডরুমে রাখার দিক থেকে সবথেকে জনপ্রিয় এই গাছ, বাতাসের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু নাশ ঘটাতে পারে। এই বিশেষ প্রজাতির গাছ ঘরের বাতাস ৭০% বিশুদ্ধ করে তোলার ক্ষমতা রাখে। এই গাছটিও খুব কম পরিচর্যায় বেড়ে উঠতে পারে। রাবার গাছের চকচকে পাতা ঘরের শোভাও অনেকটা বাড়িয়ে দেয়।
৫. এরিকা পাম গাছ (Areca Plam)-
এই গাছও ঘরের বাতাস পরিষ্কার করে তোলার অন্যতম দাবিদার। এরিকা পাম, ঘরের কার্বন-ডাই-অক্সাইড অনেকাংশে দূর করে ঘরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে অক্সিজেনে রূপান্তরিত করে তুলতেও সক্ষম এই গাছ। অভূতপূর্ব এই গাছ সৌন্দর্য্যেরও প্রতীক বটে।
আরও পড়ুন: Hair Care - জেনে নিন এই বর্ষায় চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় কিভাবে কলার প্যাক ব্যবহার করবেন
৬. স্পাইডার প্ল্যান্ট- (Spider Plant)
নামটা শুনে প্রথমে একটু ধাক্কা খেলেও, এই গাছ ঘরের বাতাসের ৯৫% টক্সিন শুষে নিতে পারে। তাই অকাতরে ঘুমের জন্য এই গাছ বেডরুমে রাখা যেতেই পারে। দিনের বেলায় এরা খুব ভালো পরিমাণে অক্সিজেনের যোগান দেয়। এই গাছ স্ট্রেসজনিত রোগ কমাতেও সাহায্য করে।
৭. পিস লিলি- (Peace Lily)
গাছের নামটা শুনলেই মনে শান্তির ভাব উদয় হবেই হবে। এই গাছটিও আপনি আপনার বেডরুমে রাখতে পারেন। অপূর্ব দেখতে ফুল সমৃদ্ধ এই গাছ ঘরের অক্সিজেনের পরিমান অনেক্টা বাড়িয়ে তোলার ক্ষমতা রাখে। গবেষণায় প্রমাণিত, ঘরের আর্দ্রতা ৫-৬% বাড়িয়ে তুলতেও এই গাছ সক্ষম।
৮. বোস্টন ফার্ন- (Boston Fern)
এই প্রজাতির ফার্ন গাছ ঘরের অক্সিজেন তো বাড়িয়ে তোলেই সাথে সাথে ফরম্যালডিহাইডের মতন টক্সিনের মাত্রাও কমিয়ে দেয়। আলাদা করে দেখভালের কোনও দরকারই পড়ে না, ঘরের এক কোণে বসিয়ে দিলেই হল। এছাড়াও ঘরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতেও এই গাছের তুলনা নেই।
শোওয়ার ঘর সবসময় আরামদায়ক, শান্তির হওয়া উচিত। বেডরুমে পৌঁছে বিছানায় গা এলিয়ে শারীরিক ক্লান্তি না মিটলে, দুঃখের আর কিছু বাকি থাকে না। তাই ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঘরে সুগন্ধি রুম ফ্রেশনার ছেটানোর আর কোনও দরকারই নেই। বেডরুমে যদি এই গাছগুলির মধ্যে একটিও থাকে, তাহলেই এবার থেকে আপনি একঘুমে রাত কাবার করে দিতে পারবেন।
Share your comments