কলা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী, একথা সবারই জানা। তবে কলা নিয়ে বিতর্কেরও শেষ নেই। অনেকেরই ধারণা, কলা খেলে ওজন বেড়ে যায়, আবার এই ফল খেলে ঠান্ডা লাগে ইত্যাদি। যদিও কলায় ক্যালোরি বেশি থাকে। এ কারণে অনেকেই কলা এড়িয়ে যান। একটি কলায় থাকে প্রায় ১২১ ক্যালোরি। তবে মনে রাখবেন, কলায় ক্যালোরি যেমন বেশি ঠিক তেমনই এতে থাকে বিভিন্ন পুষ্টিগুণও বেশি। যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কলা পটাসিয়াম, মিনারেল, ভিটামিন সি’তে পরিপূর্ণ। এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর একটি ফল। ভিটামিন, মিনারেলের পাশাপাশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও পাওয়া যায় কলায়। এই নিবন্ধে কলার গুনাগুন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো,
১। হার্ট-
কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে হার্ট সুস্থ থাকে। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
২। এনার্জি-
ন্যাচারাল সুগার, সলিউবল ফাইবার ও পটাশিয়াম থাকা কারণে যে কোনও রকম এনার্জি ড্রিঙ্ক, এনার্জি বুস্টারের থেকে অনেক বেশি, অনেক ন্যাচারাল এনার্জি জোগায় কলা। এক্সারসাইজের আগে ও পরে তাই অবশ্যই কলা খান। অ্যাথলিট, টেনিস প্লেয়াররাও এনার্জির জন্য সবচেয়ে বেশি কলার উপরই ভরসা রাখেন।
৩।হজম-
ডায়েটারি ফাইবার থাকার কারণে কলা হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে পেট পরিষ্কার রাখে। হজমের সমস্যায় অ্যান্টাসিডের থেকে অনেক ভাল কাজ করে কলা। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে সকালে উঠে দুটো কলা খেয়ে নিন।
৪।আলসার-
কলার মধ্যে থাকা প্রয়োজনীয় খনিজ ও উপাদান হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের ক্ষরণ রুখতে সাহায্য করে। ফলে স্টমাক অলাসারের সমস্যায় ভাল কাজ করে কলা।
আরও পড়ুন -Azolla cultivation guide: বেকার সমস্যা দূরীকরণে অ্যাজোলা চাষে লাভ করুন দ্বিগুন
৫।ভিটামিন বি ৬-
কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি ৬। যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে ভিটামিন বি ৬। অ্যামাইনো অ্যাসিডের সিন্থেসিস বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৬।ভিটামিন ও মিনারেল-
ভিটামিন বি ৬ ও পটাশিয়ামের পাশাপাশি কলায় রয়েছে ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়োডিন, সেলেনিয়াম ও জিঙ্ক। ফলে প্রতি দিনের ডায়েটে কলা থাকলে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি অনেকটাই মেটে।
৭।কলার খোসা-
শুধু শাঁস নয়। কলার খোসাও দারুণ উপকারী। সোরেসিস, অ্যাকনের মতো ত্বকের সমস্যায় ভাল কাজ করে কলার খোসা। সদ্য ছাড়ানো টাটকা কলার খোসা ত্বকের সোরেসিসের উপর ঘষে নিন। সারা রাত রেখে দিন। সকালে উঠে মুখে ধুয়ে ফেলুন।
৮।ক্যানসার-
সম্পূর্ণ পাকা কলার মধ্যে রয়েছে টিউমর নেক্রোসিস ফ্যাক্টর।এই সাইটোকিন কমপাউন্ড রক্তের শ্বেতকণিকা বাড়াতে সাহাযিয করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
৯।স্ট্রেস-
স্ট্রেস কমাতে অব্যর্থ কলা। এর মধ্যে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড ট্রিপটোফ্যান যা শরীরে সিরোটোনিমে পরিণত হয়।এই সিরোটোনিন স্ট্রেস কমিয়ে মুড ভাল করতে সাহায্য করে।অতিরিক্ত চাপের সময় কলা খেয়ে নিন। চাপ কমবে।
১০।হ্যাংওভার-
এক্সারসাইজে যেমন কাজে আসে কলা, তেমনই পার্টিতেও কাজে আসে কলা। পার্টি হ্যাংওভার কাটাতে কলার থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে না। ব্লেন্ডারে দুটো কলা ও বরফ একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন, কয়েকটা বেরি, নারকেলের দুধ বা গরুর দুধ মিশিয়ে শেক বানিয়ে খেয়ে নিন। হ্যাংওভার কেটে যাবে।
কখন কলা খাবেন?
ভারি খাবারের সঙ্গে কলা খাবেন না। খাবার খাওয়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে কলা খাবেন। কলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এ সময়ের ব্যবধানে খেলে ফাইবার সহজেই শরীর গ্রহণ করতে পারবে। অনেকে সরাসরি কলা খেতে পছন্দ করেন না। তারা কলার স্মুদি বানিয়ে খেতে পারেন। আবার সকালের নাস্তায় কলা ও ওটসের স্মুদিও খেলে সারাদিন তরতাজা থাকবেন। পেট ঠান্ডা রাখতে কলা ও সাবু মেখে খেয়ে নিন। যাদের অসুস্থতার কারণে তরল খাবার খেতে হচ্ছে তারা কলার স্মুদি অনায়াসেই খেতে পারেন।
আরও পড়ুন -Tulsi leaves for diabetes: ডায়াবেটিস বশে রাখার সেরা উপায় তুলসী পাতা
Share your comments