অশ্বগন্ধার বৈজ্ঞানিক নাম ‘উইথানিয়া সোমনিফেরা (এল) ডুনাল’। এটিএকটি ভেষজ উদ্ভিদ। আয়ুর্বেদে একে বলা হয় বলদা ও বাজিকরি বা শীতকালীন চেরি। যদিও এর পাতা সাধারণত আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রে ঔষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয় তবুও এর ব্যবহার যে নিরাপদ এবং কোনো রোগের ঔষধে হিসেবে কার্যকর সে ব্যাপারে যথেষ্ট ডাক্তারি তথ্য নেই।
অশ্বগন্ধা গাছের উপকারিতা আয়ুর্বেদ জগতে বিশেষ স্থান অধিকার করে রেখেছে। অশ্বগন্ধা স্নায়ুতন্ত্রের, এন্ডোক্রাইন গ্রন্থিগুলি এবং ইমিউন সিস্টেমের মধ্যে স্বাস্থ্যকর ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে, এইভাবে শরীরের দীর্ঘমেয়াদী চাপের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি হ্রাস করে।
গাছের বিবরণ:-
এই গাছ সাধারণত ২ ফুট থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। গাছের শাখাগুলি গোলাকার এবং চারিদিকে বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে থাকে।
পাতা : পাতাগুলি ২ ইঞ্চি থেকে ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। এবং আগের দিকটা ক্রমশ সরু দেখা যাই।পাতায় সরু সরু লোম দেখা যাই। পাতার বোঁটা প্রায় আধ ইঞ্চি মতো লম্বা হয়।
ফুল : ফুল পাতার বোঁটা থেকে বের হয়। ফুল ছোট হয় ।তবে বেশ নরম ও লোমযুক্ত। ফুলের রং সবুজ আভাযুক্ত।
ফল : ফল মোটর দানার নোট গোলাকার। পাকার পর লাল রং হয়ে ওঠে।
বীজ : বীজ আকারে খুব ছোট ওপরের আভরণ মসৃন ও চ্যাপ্টা।
শিকড় :কাঁচা অবস্থায় শিকড় থেকে ঘোড়ার গায়ের মতো গন্ধ বের হয় – এই জন্য যায় নাম অশ্বগন্ধা।
উপকারিতা:-
ভালো ঘুমের জন্য অশ্বগন্ধা গুঁড়ো চিনিসহ ঘুমানোর আগে খাওয়া যেতে পারে। সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পেতে অশ্বগন্ধার মূল গুঁড়ো করে খাওয়া যেতে পারে। চোখের ব্যথা দূর করতে অশ্বগন্ধা বিশেষ উপকারী।
ক্রনিক ব্রংকাইটিসের ক্ষেত্রেও অশ্বগন্ধা একটি কার্যকর ওষুধ। অশ্বগন্ধার মূল অন্তর্ধুমে পুড়িয়ে (ছোট মাটির হাঁড়িতে মূলগুলো ভরে সরা দিয়ে ঢেকে পুনঃমাটি লেপে শুকিয়ে ঘুটের আগুনে পুড়ে নিতে হয়। আগুন নিভে গেলে হাঁড়ি থেকে মূলগুলো বের করে গুঁড়ো করে নিতে হয়) ভালো করে গুঁড়িয়ে নিয়ে আধা গ্রাম মাত্রায় একটু মধুসহ চেটে খেলে ক্রনিক ব্রংকাইটিসে উপকার হয়।
মানসিক ও শারীরিক দুর্বলতা, যেমন মাথা ঝিমঝিম করে ওঠা, সংজ্ঞাহীনতা, অবসাদ প্রভৃতি দূর করে অশ্বগন্ধা। মনোযোগ বাড়ায়। ক্লান্তি দূর করে সঞ্জীবনী শক্তি পুনরুদ্ধার করে।
অশ্বগন্ধার ফল অম্বল-অজীর্ন, পেট ফাঁপা এবং পেটের ব্যথা নিরাময় সহ যকৃতের জন্য ভীষণ উপকারী । হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে অশোধিত অশ্বগন্ধা গুঁড়ো বা পাউডার হজমে গোলমাল সৃষ্টি করে। এর ফলে তলপেটে ব্যথা উঠতে পারে। সুতরাং যাদের হজমশক্তি দুর্বল, তাদের অবশ্যই ভালো মানের অশ্বগন্ধা সেবন করতে হবে।
ব্যবহার:-
মূলত ৮ টি প্রধান রোগে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হয় আর সেগুলি হলো :-
১. ক্ষয় রোগে
২.শোথ রোগে
৩.বাত ও পিত্ত রোগে
৪.শ্বাস রোগে
৫.অনিদ্রা রোগে
৬. স্বপ্ন দোষে
৭.আঘাত পেলে ও ফুলে গেলে
৮. শিশুদের রিকেট রোগে
১.ক্ষয় রোগে :–
অশ্বগন্ধার মূল গুঁড়ো করে মধু মিশিয়ে প্রত্যেকদিন ৩ বার করে চেটে খেতে হবে। ১৫ দিনের মধ্যেই আর ফল আপনি বুঝতে পারবেন।
২. শোথ রোগে অশ্বগন্ধা গাছের উপকারিতা :-
শোথ রোগে অশ্বগন্ধা গাছের উপকারিতা অতুলনীয়। অশ্বগন্ধার মূল গুঁড়ো করে গাওয়া ঘি ও মধু মিশিয়ে সকাল ও বিকেলে দুইবার করে কয়েকদিন খাওয়া উপকারী।
৩.বাত ও পিত্ত রোগে :–
অশ্বগন্ধার মূল গুঁড়ো করে তার সঙ্গে তিলের তেল মিশিয়ে সকালে ও সন্ধ্যায় খাওয়া উপকারী।
৪.শ্বাস রোগে অশ্বগন্ধা গাছের উপকারিতা :-
শ্বাস রোগে অশ্বগন্ধা গাছের উপকারিতা অকল্পনীয়। অশ্বগন্ধার মুখের ক্ষার গাওয়া ঘি ও মধু মিশিয়ে প্রত্যেকদিন ২/৩ বার চেটে খেতে হবে।
৫. অনিদ্রা রোগে অশ্বগন্ধা গাছের উপকারিতা :-
অনিদ্রা রোগে অশ্বগন্ধা গাছের উপকারিতা অদ্বিতীয়। গাওয়া ঘি এক চামচ , চিনি ১ চামচ এবং অশ্বগন্ধার মুখের গুঁড়ো ২ চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে হয়। এতে ঘুম খুবই ভালো হয়।
৬.স্বপ্ন দোষে:
রাতে শুতে যাবার আগে এক কাপ গরুর দুধের সঙ্গে ৩ গ্রাম অশ্বগন্ধা গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে রোগটি চিরদিনের মতো ভালো হয়। তবে ওষুধ খাবার পর কুচিন্তা কুঅভ্যাস এবং অশ্লীল দৃশ্য দেখা ত্যাগ করা দরকার।
৭. আঘাত পেলে ও ফুলে গেলে :
অশ্বগন্ধা গাছের পাতা ও মূল ফলের ওপর লাগালে যন্ত্রণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাই এবং আঘাত লাগা ফুলোও কমে যাই। কার্বাঙ্কল ও বিষাক্ত ক্ষতে ওই ভাবে ওষুধ লাগালে উপকার আসে।
আরও পড়ুন - যষ্টিমধু কি? কেন খাবেন এটি? জানুন বিস্তারিত (Health Benefits Of Liquorice)
৮) শিশুদের রিকেট :
গরুর দুধ ফুটিয়ে ঠান্ডা করে , গাওয়া ঘি আধ চামচ আর সঙ্গে ১ গ্রাম অশ্বগন্ধার শুকনো দল ও শুকনো পাতার গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে হবে তারপর ১ বার করে শিশুকে খাওয়াতে হবে। ওই শিশুর রিকেট রোগ সেরে যাবে এবং শিশু ক্রমশ সুস্থ ও সবল হয়ে উঠতে থাকবে।
আরও পড়ুন - জানুন বিশেষ ঔষধি গুণ সম্পন্ন মেহগনি বীজের উপকারিতা (Benefits Of Mahogany Seeds)
Share your comments