ডায়াবেটিস, আজ ভারতবর্ষ সহ সমগ্র বিশ্ব এই মারণরোগের সাথে ভীষণভাবে পরিচিত। বর্তমান বিশ্বের প্রায় ৯.৩ % মানুষ এই রোগের কবলে। ডায়াবেটিস এ ভারতবর্ষ বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। এই দেশ বর্তমানে ৭৭ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগীর আবাসস্থল। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন এর রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি ৬ জন ডায়াবেটিস রোগীর ১ জন ভারতীয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই বহুল চর্চিত ডায়াবেটিস আসলে কি?
ডায়াবেটিস হল রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধিকারী একটি মারণরোগ, যা আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেমকে সম্পূর্ণ রূপে নষ্ট করে দেয়, ফলে দেহ তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সাধারণত ডায়াবেটিস দুই প্রকার, টাইপ I ও টাইপ II, এর মধ্যে ৯০% ডায়াবেটিসই টাইপ II প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং বাকি ১০% ডায়াবেটিস টাইপ I প্রকৃতির ।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের শর্ত
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের প্রধান শর্ত হল ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ। ডায়াবেটিস রোগীর খাবার অবশ্যই কম স্নেহপদার্থ ও কার্বোহাইড্রেট যুক্ত এবং ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়া উচিত। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকা শশা-কুমড়ো গোত্রভুক্ত সব্জি যেমন লাউ, চালকুমড়ো, শশা, পটল, চিচিঙ্গা, উচ্ছে, মিষ্টিকুমড়ো, ঝিঙে, কুঁদরি ,স্কোয়াশ, কাকরোল, তরমুজ, খরমুজ ইত্যাদির একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণ জল, খনিজ লবণ (পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম), ভিটামিন ও ফাইবার থাকে এবং শর্করা ও স্নেহপদার্থের পরিমাণ যথেষ্ট কম হওয়ায় এগুলো ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ভীষণভাবে উপাদেয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শশা-কুমড়ো (Cucurbits) গোত্রভুক্ত কিছু সব্জির ভূমিকা নিম্নে বর্ণনা করা হল-
উপরিউক্ত সব্জি গুলোর পাশাপাশি মেথি, মেথিশাক, ঢেঁড়স, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, টম্যাটো, সয়াবিন, ছোলা, মটর, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, পেয়ারা, নাশপাতি, আপেল, কমলালেবু, বাতাবি লেবু, স্ট্রবেরি, চেরি, গমের আটা, জোয়ার, বাজরা, বার্লি , টক দই, ছানা ইত্যাদি ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় স্থান পেতে পারে । খাবার নিয়ন্ত্রণের সাথেসাথে প্রাতঃভ্রমন ও শরীরচর্চা ডায়াবেটিস কমাতে বিশেষভাবে উপকারি।
ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ রূপে নিরাময় এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়ে ওঠেনি, তবে ঠিকমতো খাদ্য-খাবার মেনে চললে এবং নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণ, শরীরচর্চার ও যোগাসনের মাধ্যমে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
নিবন্ধ - বর্ষা সরকার (গবেষক, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মোহনপুর, নদীয়া)
Share your comments