শরীর-স্বাস্থ্য, ত্বক, চুল এসব কিছু ভালো রাখতে ফলের ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ প্রকৃতির অকৃপণ এই দানে আমরা উপকৃত হচ্ছি প্রতিনিয়ত৷ গোটা বা কেটে বা জুস করে যেভাবেই ফল খান না কেন খাদ্যতালিকায় মরসুম ভিত্তিক ফল রাখলে উপকার পাবেন প্রত্যেকে৷ কিন্তু জানেন কি এমন বহু ফল আমরা খাই কিন্তু খোসা ফেলে দিই, অথচ সেই ফলের খোসাতেই রয়েছে প্রচুর গুণ যা আমাদের অজানা৷ সেই অজানা কিছু তথ্যই তুলে ধরা হল নীচে, জেনে নিন আপনিও৷
কলার খোসা- পাকা কলার খোসা ফেলে দেওয়া হয়, কিন্তু এই খোসা দিয়েই অনেক কাজ করা যায়৷ কলার খোসার ভিতরের দিকটি দিয়ে এক মিনিট দাঁত মাজলে তা দাঁতকে প্রাকৃতিক উপায়ে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে৷ প্রতিদিন পাঁচ মিনিট ব্রণর ওপর হালকা করে এই খোসা ঘষলে এক সপ্তাহের মধ্যেই ফলাফল দেখতে পাবেন৷ বলা হয়, ছারপোকা কামড়ে দিলে তার ওপর এই খোসা কিছুক্ষণ ঘষলে আরাম পাওয়া যায়৷ শরীরে কোনও স্থানে চুলকুনি হলে সেই স্থানেও কলার খোসা ঘষতে পারেন৷ কলার খোসা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ যা হজমের পক্ষেও সহায়তা করতে পারে৷
পাতিলেবুর খোসা- পাতিলেবুর রস আমরা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে থাকি৷ তা জুস করে হোক, বা রান্না, ম্যারিনেট করতে, অথবা জামা কাপড় থেকে দাগ তুলতে, এমনই বহু কাজে সাহায্য করে লেবুর রস৷ তবে জানেন কি লেবুর খোসাতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন যা হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে৷ কোলেস্টেরলের ভারসাম্য বজায় রাখে৷ দাঁত এবং মাড়িও ঠিক রাখে পাতিলেবুর খোসা৷ সেই সঙ্গে পাতিলেবুর খোসার ব্যবহারে বাড়ে ত্বকের ঔজ্জ্বল্যও৷ শরীরকে সুস্থ রাখা ছাড়াও, পাতিলেবুর খোসা জলের কল, সিঙ্ক পরিষ্কার করতেও সাহায্য করে৷ এমনকি কিছু ক্ষেত্রে দুর্গন্ধও দূর করতেও লেবুর খোসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷
আমের খোসা- ফলের রাজা আম৷ এই ফল খান না এমন মানুষ হয়তো হাতে গোনা! এই ফলের খোসাও কিন্তু খুবই উপকারী৷ আমের খোসাতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের ত্বক, চোখ এবং হার্টের পক্ষে ভালো৷ আমের খোসা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে৷
তরমুজের খোসা- গরমে তরমুজ যেমন সহজলভ্য তেমনই এর গুণাগুণও প্রচুর৷ তরমুজের মধ্যে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, সি এবং বি, যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে শরীরে বাড়তি শক্তির জোগান দেয়৷ তরমুজে জলের পরিমাণ প্রচুর মাত্রায় থাকায় তা গরমে শরীরকে যেমন ঠাণ্ডা রাখে তেমনই খাবার হজমে সাহায্য করে, দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্য৷ কিন্তু তরমুজের খোসা? হ্যাঁ, এই খোসাতেও রয়েছে প্রচুর গুণ৷ অনেকেই তরমুজের খোসার সাদা অংশ দিয়ে তরকারি করে খান৷ কেউ কেউ স্যালাডে ব্যবহার করেন৷ মনে করা হয়, এই খোসাতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে৷ এছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট৷ তরমুজের খোসা কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি করে বলে দাবি করা হয়৷ এতে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনিশিয়াম, জিঙ্ক যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়৷ এটি রক্তচাপের সমস্যা ঠিক করতে সহায়তা করে৷
কমলালেবুর খোসা- কমলালেবু তো খান, কিন্তু জানেন কি এই ফলের খোসাও খুব উপকারী কারণ এতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়৷ যেমন কফ ও পিত্তের সমস্যা দূর করতে এর খোসার ব্যবহার করা যেতে পারে৷ পিলারে করে এর খোসা কিছুটা গ্রেট করে তা চা-এ দিয়ে এবং সঙ্গে একটু আদা দিয়ে ফুটিয়ে খাওয়া যেতে পারে৷ দিতে পারেন একটু মধুও৷ প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধুর সঙ্গে এই গ্রেট করা খোসার কিছুটা অংশ খেলে তা বমি বমি ভাব এবং পেটের সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে৷ কোলন ক্যান্সার এবং অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগকেও দূরে রাখতে সাহায্য করে৷ এছাড়া এই ফলের খোসার গুঁড়ো কাশির সমস্যা দূর করতেও সহায়তা করে৷ তাই চেষ্টা করুন ফলের খোসা ফেলে না দিয়ে তা কাজে লাগাতে৷
বর্ষা চ্যাটার্জি
Share your comments