শাক সবজি খুবই পচনশীল এক পণ্য। আর, এই পচনশীল ধর্মের কারণে এসব কৃষি পন্যের স্থায়িত্ব কাল বাজারে নিতান্তই কম। ইন্ডিয়ান ইনস্টটিউট অফ হর্টিকালচার রিসার্চ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী পচনশীলতা এবং অনুপযুক্ত ও অপ্রকৃত সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার জন্যে প্রতিবছর মোট উৎপাদিত শাক সবজির প্রায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশ অপচয় ঘটে। আর তাছাড়া, মোট উৎপাদিত শাক সবজির খুব নগণ্য পরিমাণ ব্যবহৃত হয় প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে (১ শতাংশেরও কম)। স্বামিনাথন কমিটি (১৯৮০) এক গবেষণায় উল্লেখ করেছে যে, আমাদের দেশে ৩৫-৪৫ শতাংশ ফল ও সবজি নষ্ট হয় কেবল বেঠিক সংগ্রহত্তোর সংরক্ষণ ও পণ্য পরিবহনের সময় এবং প্রতি বছর টাকার অঙ্কে সেই ক্ষতির পরিমাণ ৪০,০০০ কোটি টাকা।
সবজির সংগ্রহত্তোর অপচয় সংঘটিত হয় বিভিন্ন পর্যায়ে,সেগুলো হলো –
১. ফার্মার্স ফিল্ড (১৫-২০%)
২. প্যাকেজিং (১৫-২০%)
৩. স্থানান্তর করন বা ট্রান্সপোর্টেশন (৩০-৪০%)
৪. মার্কেটিং বা বাজারজাতকরণ (৩০-৪০%)
সংগ্রহের পরবর্তী সময় থেকে খাদ্যদ্রব্য হিসেবে গ্রহণের আগ অবধি কিছু গুরুত্বপূর্ণ শাক সবজি র আনুমানিক অপচয়ের পরিমাণ দেওয়া হলো - পেয়াজ (২৫-৪০%), রসুন (৮-২২%), আলু (৩৫-৪০%), টমেটো (৫-৩৪%), লঙ্কা (৫-৩৫%), মুলো (৩-৫%) এবং গাজর (৫-৯%)।
আরও পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার ৫টি আশ্চর্যজনক উপকারিতা জানেন ?
আর, এসব গুরুত্বপূর্ণ শাক সবজি যা কিনা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পুষ্টি চাহিদা পূরণে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে চলেছে, তাদের সংগ্রহ পরবর্তী এই সুবিপুল অপচয়ের কারণ খুঁজতে গিয়ে উদ্যানপালন বিদ রা যেসব বিষয়ের কথা বলেছেন, সেগুলো হলো -
১.মাঠ থেকে সংগ্রহ পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিক বিপাকীয় ক্রিয়া (শ্বসন এবং প্রস্বেদনের দরুন বেশি পরিমাণ ইথিলিন সংশ্লেষিত হওয়ার কারণে পণ্য সামগ্রীর ওজন কমে যায়।
২.অপ্রকৃত সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার জন্যে ও ট্রান্সপোর্টেশন বা স্থানান্তর কালে ম্যাকানিক্যাল ইনজুরি বা যান্ত্রিক আঘাত (ঘর্ষণ জনিত অপচয়)
৩.সংগ্রহশালায় আলু কিংবা পেয়াজের অনিচ্ছাকৃত উদ্গম বা স্প্রাউটিং,
৪.পরাশ্রয়ী ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, কীট - পতঙ্গ দ্বারা ক্ষতি, (সংরক্ষণের সময় সবজির প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা পদ্ধতির অপ্রতুলতা এবং বেশি পরিমাণ আর্দ্রতা র দরুন রোগজীবাণুর আক্রমণ বেড়ে যায়।
৫.সংগ্রহশালায় খনিজ উপাদানের অভাবজনিত কারণে শারীরবৃত্তীয় পতন (বার্ধক্য এবং অত্যধিক পরিপক্কতার কারণে উৎসেচকের ক্রিয়াকলাপ বেড়ে যায়),
৬.অপ্রকৃত উপায়ে বাজারজাতকরণের জন্যে পন্যের চাহিদা হ্রাস ইত্যাদি।
এরকম অবস্থায় শাক সবজির অপচয় রোধ কল্পে আমাদের কাছে চার প্রকার পন্থা আছে। সবজি সংরক্ষণ মূলত চার প্রকার। যথা-
১) টাটকা অবস্থায় সংরক্ষণ : শাকসবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে নিম্ন তাপমাত্রা ও উচ্চআর্দ্রতায় রাখা যায়। এতে সবজির স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিমান প্রায় অপরিবর্তিত থাকে। তবে এটা খুব ব্যয়বহুল ও হিমাগারের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নেই। যেমন- টমেটো, আলু, মিষ্টি আলু, গাজর, মটরশুঁটি ইত্যাদি হিমাগারে সংরক্ষণ করা যায়।
২) শুকিয়ে সংরক্ষণ : সতেজ ও রসাল হওয়ার কারণে শাকসবজিতে দ্রুত পচন ধরে। তাই শুকিয়ে শাকসবজিতে আর্দ্রতা র পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারলে এগুলো সহজে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় না ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। যেমন- সজিনা পাতা, ধনিয়া পাতা, বিলাতি ধনিয়া, মাশরুম, শিমের বিচি ইত্যাদি ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে অসময়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব। পাকা শিমের বিচি ও বরবটির বিচি শুকিয়ে সারা বছর সংরক্ষণ করা যায়। শিমের বিচি ভেজে খাওয়া যায় ও ভেজে গুঁড়া করে ডাল হিসেবেও রান্না করে খাওয়া যায়। পটোলের পাতা দিয়ে বড়া, স্যুপ ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। পটোলের পাতা ঔষধিগুণ সম্পন্ন বিধায় শুকিয়ে গুঁড়া করে সারা বছর সংরক্ষণ করে খাওয়া যায়।
৩) ব্ল্যানচিং(পান্ডু বর্ন) পদ্ধতিতে সংরক্ষণ : প্রায় সব সবজি যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, মুলা, আলু, মিষ্টিআলু ইত্যাদিকে ছোট করে কেটে ব্ল্যানচিং করে রেখে প্রায় ৩-৫ মাস সংরক্ষণ করা যায়। ব্ল্যানচিং হলো একটি পাত্রে জল ফুটিয়ে তার মধ্যে কাটা সবজি ৩-৪ মিনিটের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। তারপর আধাসিদ্ধ সবজিগুলো ছাঁকনিতে ঢেলে জল ঝরিয়ে এবং পরে তাতে ঠাণ্ডা জল দিয়ে ঠাণ্ডা করে সম্পূর্ণ জল ঝরিয়ে অন্য একটি পাত্রে ঢালতে হবে। সবজিগুলো সম্পূর্ণভাবে ঠাণ্ডা হলে বায়ুরোধক পাত্রে ভরে ডিপফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায় অথবা ব্ল্যানচিং করা সবজিগুলো সূর্যের আলোতে শুকিয়ে ও বায়ুরোধক পাত্রে সংরক্ষণ করা যায়।
আরও পড়ুনঃ পিসিওডি কী, কেন হয়, এর লক্ষণ কী? রইল পিসিওডি-র সম্পূর্ন ডায়েট চার্ট
৪) প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণ : প্রক্রিয়াজাত করেও শাকসবজি সংরক্ষণের বহু পদ্ধতি প্রচলিত আছে। প্রক্রিয়াজাত করার দরুন শাকসবজির মূল গঠন পরিবর্তিত হয় এবং পচন থেকে রক্ষা করার জন্য কোনো না কোনো মাধ্যম বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করতে হয়। শাকসবজি প্রক্রিয়াজাত করে দীর্ঘদিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়। বানিজ্যিক ভিত্তিতে কিংবা পারিবারিক পর্যায়ে শাক সবজি প্রক্রিয়াজাতকরনের দ্বারা ফসলের সঠিক ব্যবহার সুনিশ্চিত করে পণ্য সামগ্রীর অপচয় রোধ, সামাজিক পুষ্টি র উন্নতিসাধন, কর্মসংস্থানের নতুন দিশা তৈরি, ক্ষুদ্র শিল্প তথা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠা, সর্বোপরি দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো সম্ভব।
এই প্রবন্ধে সবজির অপচয় রোধে আমাদের দেশের সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সংরক্ষণের বেশ কিছু মাধ্যম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হলো।
ক. চিপস : আলু ও কাঁচাকলা ও মাশরুম ইত্যাদি সবজিকে পাতলা স্লা্ইস করে কেটে রোদে শুকিয়ে চিপস তৈরি করা যায়। যা দিয়ে মুখরোচক খাবার তৈরি করে বাচ্চাদের আকৃষ্ট করা যায় এবং সারা বছর এর প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।
খ. চিনি ও লবণের দ্রবণে শাকসবজি সংরক্ষণ : ক্যাপসিকাম, মাশরুম, কচি শসা ইত্যাদি চিনি ও লবণের দ্রবণে সংরক্ষণ করা যায়।
গ. রস আকারে সংরক্ষণ : টমেটোর রস তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়।
ঘ. জ্যাম, জেলি : চুকুর, আলু, মিষ্টিআলু, মিষ্টিকুমড়া ইত্যাদির জ্যাম জেলি তৈরি করা যায়।
ঙ. আচার, সস, চাটনি : বেগুন, টমেটো ইত্যাদির আচার, সস, চাটনি করা যায়। অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বেগুনের আচার করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। টমেটোর সস সর্বজন স্বীকৃত ও বহুল প্রচলিত, যা অনেক দিন সংরক্ষণ রাখা যায়।
চ. মোরব্বা : চালকুমড়া, পেঁপে ইত্যাদির মোরব্বা করা যায়।
ছ. বিভিন্ন ডাল ও মিষ্টিকুমড়া দিয়ে বড়ি বানিয়ে সংরক্ষণ করা যায়।
বিভিন্ন শাকসবজি সংরক্ষণ কৌশল:
মিষ্টিকুমড়া : ১০০-১২০ দিনের পাকা মিষ্টিকুমড়া সারা বছর সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া ও পাকা মিষ্টিকুমড়া দিয়ে বড়ি তৈরি করে ও ভালোভাবে শুকিয়েও অসময়ের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য সংরক্ষণ করা যায়।
চালকুমড়া : এটি রবি ও খারিফ দুই সিজনেই মাচা, চালা ও ভূমিতে জন্মায়।প্রচলিত সবজি গুলোর মধ্যে চালকুমড়া বা অ্যাশ গোর্ড এ সবচাইতে বেশি পরিমাণ জল থাকে এবং সব চেয়ে দীর্ঘদিন ঘরের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়। চালকুমড়ার বোঁটার কাটা মাথায় মোম লাগিয়ে সংরক্ষণ মেয়াদ আরও বাড়ানো যায়। পাকা চালকুমড়া দিয়ে মোরব্বা তৈরি করে রেখেও অসময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যায়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন উপায়ে ও নিরাপদ জল ব্যবহার করে এসব পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করলে পুষ্টিমান বজায় থাকবে।
বাঁধাকপি : সাধারণত হিমায়িত গুদামে ৩ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া শীতকালে সাধারণ তাপমাত্রায় বাতাস চলাচল উপযোগী ছায়াযুক্ত স্থানে প্রায় ৩-৪ সপ্তাহ সংরক্ষণ করা যায়। সাওয়ারক্রত এর (Sauerkraut) মাধ্যমে ও বাঁধাকপি কে প্রক্রিয়া জাত করা হয়। বাঁধাকপি কুটে লবণযুক্ত করে টক না হওয়া পর্যন্ত সন্ধান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বোতলে ভরে রেখে দিয়ে সাওয়ারক্রত তৈরি করা হয়।
ফুলকপি : জমি থেকে ফসল তোলার প্রায় ৭ দিন আগে নেপথালিন অ্যাসেটিক অ্যাসিড পাতায় ছিটিয়ে পরে ঠাণ্ডা স্থানে রাখলে প্রায় এক থেকে দেড় মাস ফুলকপি ভালো অবস্থায় থাকে।
টমেটো : সংরক্ষণের সময় পাকা টমেটো মেঝেতে খড় বিছিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। অনেক সময় খাঁচায় খড় বিছিয়ে টমেটো ঢেকে রাখা যায়। এভাবে স্থানীয় জাতের ক্ষেত্রে ৫-৭ সপ্তাহ ও হাইব্রিড জাতের টমেটোর ক্ষেত্রে ২০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়াও টমেটো দিয়ে প্রক্রিয়াজাতকৃত সস, চাটনি করে সারা বছর সংরক্ষণ করা যায়। আর তাজা টমেটো হিমাগারে রেখেও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। অসময়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে ও চাহিদা মেটানো সম্ভব।
কুমড়া জাতীয় সবজি : বারোমাসী জাত রোপণ করে অসময়ে বিভিন্ন কুমড়াজাতীয় সবজি পাওয়া যায়।
স্বল্প ব্যয়ে কৃষক পর্যায়ে আলু সংরক্ষণের কৌশল: আলু তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডা এবং বায়ু চলাচল করে এমন কোনো কক্ষে বা স্থানে রাখা যায়। সংরক্ষিত আলু ১০-১৫ সেন্টিমিটার (৪-৬ ইঞ্চি) উঁচু করে মেঝেতে বিছিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া বাঁশের তৈরি মাচায়, ঘরের তাকে বা চৌকির নিচেও আলু বিছিয়ে রাখা যেতে পারে। সংরক্ষিত আলু ১০-১৫ দিন পর পর নিয়মিত পরিদর্শন ও বাছাই করে রোগাক্রান্ত, পোকাক্রান্ত ও পচা আলু আলাদা করে নিতে হবে।
বালি কণা দিয়ে ঢেকে রেখে আলুর সংরক্ষণ : পরিষ্কার শুকনো বালু দিয়ে আলু ঢেকে ও সংরক্ষণ করা যায়। এক্ষেত্রে আলু-বালু-আলু পর্যায়ক্রমিকভাবে স্তর করে রাখা যায়। এ ব্যবস্থায় টিউবার মথের আক্রমণ হতে আলু রক্ষা পায় এবং অংকুর শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত গুদামে নিরাপদে রাখা যায়। ছোট আকারের বীজ আলুও মাটি দিয়ে তৈরি পাত্রে রেখে ঘরের শীতল স্থানে সফলভাবে গুদামজাত করা যায়।
বীজ আলুর গুদাম জাতকরণ: বীজ হিসেবে রাখা আলুর অংকুর গজানো শুরু হলেই আলাদাভাবে গুদামজাত করতে হবে। যেখানে দিনের আলো পড়ে এমন স্থানে তাক বা মেঝের ওপর ২-৩টি স্তরে আলু গুদামজাত করা যায়। দিনের প্রখর আলো গোলআলুর অংকুরকে ১০-১৫ মিলিমিটারের বেশি দীর্ঘ হতে বাধা দেয়। অংকুর ছোট থাকলে বীজ আলু আরও কিছুদিন নিরাপদ রাখা ও গুদামজাত করা যায়।
আমাদের দেশের প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের বর্তমান অবস্থা ও সম্ভবনা:
আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে শিল্পশালায় নির্মিত বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পন্য র(জ্যাম, জেলি, আচার, নিরূদ বা ডি-হাইড্রেটেড খাদ্যদ্রব্য, ফল দিয়ে তৈরি পানীয় প্রভৃতি) চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। আর, বহির্বাজারে ও ভারতের সবজি থেকে বানানো বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত দ্রব্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে। ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে (আমেরিকা,ইউরোপ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া) রপ্তানিকৃত প্রক্রিয়াজাত সবজি গুলোর মধ্যে ছোট শশা বা ক্ষীরা (ঘারকিন) র তৈরি আচার, ওয়েস্টার এবং প্যাডি স্ট্র মাশরুম, ডি- হাইড্রেটেড রসুন পাউডার, শুকনো অ্যাসপারাগাস, শুকনো আলুর ফিঙ্গার চিপস, লবণ দ্রবণে সবুজ লঙ্কা , শুকনো বিনস, ডি- হাইড্রেটেড মটরশুঁটি প্রভৃতি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
ভারত এখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রক্রিয়াজাত সবজি পন্যের এক বিশিষ্ঠ রপ্তানিকারক রূপে পরিচিতি লাভ করে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। ভারত সরকারের বানিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের অধীনস্থ স্বাধীন এক সংস্থা - এগ্রিকাচারাল অ্যান্ড প্রসেসড ফুড প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি প্রক্রিয়াজাত সবজি র বিপণন ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৮-১৯ সালে ভারত মোট ২,৪৮,১২১.৮৮ মেট্রিক টন প্রক্রিয়াজাত সবজি আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করেছে এবং তা থেকে ভারতীয় মুদ্রায় ২,৪৭৩.৯৯ কোটি টাকা বা ৩৫৪.৬৫ মার্কিন ডলার অর্জন করেছে।
বর্তমানে ভারতের ৪০০ টি বড়ো বড়ো প্রক্রিয়াকরণ ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের মোট উৎপাদনের মাত্র ১-২% শুধুমাত্র ব্যবহৃত হয় প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে, যেখানে আমেরিকার মতো রাষ্ট্রে মোট উৎপাদনের ৭০-৮০% প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্যে বরাদ্দ থাকে। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমাদের দেশে প্রক্রিয়াজাত ফল ও সবজির বার্ষিক নি:শেষনের পরিমাণ হলো ৫০,০০০ টন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং নামী দামী রেস্তোরাঁ ও হোটেল গুলো বার্ষিক ১৫,০০০ টন প্রক্রিয়াজাত ফল ও সবজি পণ্য ব্যবহার করে। আর, বাকি ৩৫,০০০ টন প্রক্রিয়াজাত ফল ও সবজি বরাদ্দ থাকে নাগরিকদের জন্যে। আমাদের দেশের জনসংখ্যার নিরিখে বার্ষিক নি: শেষণ র পরিমাণ হিসেব করলে দাঁড়ায় ৪০গ্রাম/জন/বছর। ভারত সরকার প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ, বহুজাতিক সংস্থা গুলোর সাথে যৌথ চুক্তি স্থাপন এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে পরিকাঠামো উন্নয়নে যথেষ্ট তৎপর হয়েছে।আর, এভাবেই অভ্যন্তরীণ ও বহির্বাজারে প্রক্রিয়াজাত পন্যের চাহিদা বিবেচনা করে নির্দ্বিধায় বলা যায় আমাদের দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্যে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে।
Share your comments