পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর জমিতে ভুট্টাচাষ হয়। ভারতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্র (আইসিএআর) জানিয়েছে যে, তারা ভুট্টার ৮ টি নতুন হাইব্রিড জাত শনাক্ত করেছে। দেশের বিভিন্ন মরসুমে ও কৃষি-পরিবেশে এই জাতগুলি উন্নত ফলন দেবে। তথ্য অনুযায়ী, সারা ভারত থেকে সমন্বিত গবেষণা প্রকল্পের (এআইসিআরপি) ডিজিটাল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষি বিজ্ঞানীদের সাথে আলোচনার পরে ভুট্টার জাতগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। এই আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন দেশের প্রায় ১৫০ জন বিজ্ঞানী।
কর্মশালায় বক্তৃতাকালে ডঃ ত্রিলোচন মহাপাত্র (ICAR Director) কোভিড -১৯ মহামারীর সময়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ভুট্টা বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তিনি আইসিএআর-ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মেইজ রিসার্চ (আইসিএআর-আইআইএমআর), লুধিয়ানাকে শস্যের গুনমান এবং ফলনের আরও উন্নতির জন্য মৌলিক, কৌশলগত এবং প্রয়োগিত গবেষণা প্রলম্বিত রাখার পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন যে, ‘দেশের আগামী দিনের ফসল হিসাবে ভুট্টা তৈরিতে এআইসিআরপিকে প্রধান ভূমিকা নিতে হবে’।
অন্যান্য ফসলের মত ভুট্টাতেও রোগ পোকার আক্রমণের কারণে প্রায় ১৫-২০% ফসলের ক্ষতি হয়ে থাকে। ভুট্টায় আক্রমণকারী পোকার মধ্যে উল্লেখ্য হেলিকোভার্পা আর্মিজেরা ও স্পেডোপটেরা লিটুরা। তবে স্পেডোপটেরা গোত্রের অন্য একটি বিদেশী ল্যাদার আক্রমণ বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছে, যার নাম ফল আর্মি ওয়ার্ম বা স্পোডপটেরা ফ্রুগিপারা। এই পোকার আক্রমণে আমাদের রাজ্যে কোচবিহার, নদীয়া ইত্যাদি বিভিন্ন জেলায় ভুট্টা উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে গিয়েছে এবং ফসল ব্যাপক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে৷ কৃষি মন্ত্রক থেকে দেশের সকল রাজ্যে এই পোকার জন্য সতর্কতা জারী করা হয়েছে।
স্পোডপটেরা ফ্রুগিপারা –
এই পোকাটি সর্বভুক ও বিভিন্ন প্রচলিত কীটনাশকের বিরুদ্ধে সহনশীল। ফলত, পোকাটির বিস্তার রোধে বিশেষভাবে সচেষ্ট হওয়া জরুরি।
পোকা চেনার উপায় -
১) লার্ভার মাথায় উল্টো Y চিহ্ন এবং পিছনের দিকে ৪ (চার)টি কালো টিপ দাগ বর্গাকারে সজ্জিত থাকে।
২) মাঠে পোকার উপস্থিতি - গাছের পাতায় বিভিন্ন আকারের ছিদ্র ও পোকার মল দেখে বোঝা যায় আক্রমণ শুরু হয়েছে।
নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা –
(ক) বীজ বোনার পূর্বে পুত্তলী নষ্ট করার জন্য গভীর চাষ দেওয়া প্রয়োজন।
(খ) মাঠে একর প্রতি ন্যূনতম ১০ (দশ)টি হিসাবে পাখি বসার ব্যবস্থা করা দরকার।
(গ) বীজ শোধনকারী কীটনাশক সানট্রানিলিপ্রোল ১৯.৮% + থায়োমিথোক্সাম ১৯.৮% এফএস ৪ (চার) মিলি প্রতি কেজি বীজে মিশিয়ে বীজ শোধন করা উচিত।
(ঘ) প্রতিষেধক ব্যবস্থা হিসাবে অ্যাজাডিরেক্টিন ১৫০০ পিপিএম @৫মিলি/লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।
(ঙ) ১-৫% গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হলে। ইটিএল ছাড়িয়ে গেলে নিম্নলিখিত কীটনাশকগুলি নির্দিষ্ট মাত্রায় স্প্রে করার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে।
লার্ভা গুলি যখন ছোটো থাকে (২য় বা ৩য় ইনস্টার দশায়) তখন উল্লিখিত ওষুধগুলি প্রয়োগ করতে পারেন - স্পিনেটোরাম ১১.৭% এস.সি @ ১মি.লি প্রতি লিটার বা ক্লোরাট্রানিলিপ্রোল ১৮.৫% এস.সি @ ১মি.লি / ৩ লিটার থায়োমিথোক্সাম ১২.৬ % ল্যামডা সায়হ্যালেখ্রিন ৯.৫% জেড.সি @ ০.৫ মি.লি / লিটার।
বিশেষ সতর্কতা -
-
একই কীটনাশক বার বার ব্যবহার করা অনুচিত।
-
শেষ স্প্রে করার ৩-৪ সপ্তাহ পর ফসল কাটা উচিত।
-
বন্ধু পোকাদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন - কলার উন্নত জাত গ্র্যান্ডনাইন চাষে অধিক উপার্জন (High Yielding Varieties Of Banana)
Share your comments