টিস্যু কালচার কলা কী ?
প্রথাগত তেউড় বাদে সুস্থ, নীরোগ, উন্নত গুণমানের, পরীক্ষিত ‘মা’ গাছের অংশ নিয়ে, অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিতে, কৃত্রিম উপায়ে টেস্টটিউবের মধ্যে বাড়িয়ে, এক সঙ্গে হাজার হাজার উন্নত কলার চারা, পরিবেশে খাপ খাইয়ে, ছোট পলিপ্যাকে উৎপাদনই হল টিস্যু কালচার কলা। বর্তমানে জায়ান্ট গভর্নর বা সিঙ্গাপুরির মত টিস্যু কালচার কলার উন্নত জাত গ্র্যান্ডনাইন বহুল জনপ্রিয় ও অধিক বড় কাঁদিতে, অতি উন্নত কলার সঙ্গে, বিঘাতে লাখ টাকারও বেশী লাভ দিতে সক্ষম।
প্রথাগত তেউড়ের তুলনায় টিস্যু কালচার কলার সুবিধা – প্রথাগত তেউড়ের তুলনায় টিস্যু কালচার কলার চাষে কিছু সুবিধা পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি নিম্নে পর্যালোচনা করা হল –
- এই পদ্ধতিতে এক সাথে অনেক চারা তৈরি করা সম্ভবপর হয়।
- চারা সম্পূর্ণ রোগমুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
- প্রথাগত তেউড়ের তুলনায় তুলনামূলক তাড়াতাড়ি, ৮ থেকে ৯ মাসের মধ্যে ফল আসে।
- প্রথাগত সিঙ্গাপুরির তুলনায় ফলন দেড় থেকে দুই গুণ বেশী হয়, কাঁদির গড় ওজন হয় প্রায় ৫০-৫৫ কেজি।
- এই পদ্ধতির আর একটি সুবিধা হল, এক সাথে ফল আসে ও একেবারে কাঁদি কাটা যায়।
- একটি কাঁদিতে প্রায় ২২০ থেকে ২৪০ টি কলা থাকে।
কীভাবে বিশেষ পদ্ধতিতে চাষ করা হয় টিস্যু কালচার কলা, তার বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে দেওয়া হল –
টিস্যু কালচারের কলা চারা টেস্টটিউবে কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে পলি ট্রে ও পরে হার্ডেনিং করে ছোট কালো পলিপ্যাকে পাওয়া যায়। এতে শিকড় প্রথাগত তেউড়ের তুলনায় কিছুটা কম থাকে ও তেউড়ের মত নীচের অংশ ভারী হয় না। তাই চারা রোপণের সময় কিছুটা বিশেষ প্রযুক্তি পদ্ধতির প্রয়োজন হয়।
চারা রোপণ পদ্ধতি : মূল জমিতে ৬ ফুট দূরে দূরে এক কোদাল মাটি সরিয়ে নালা করতে হবে। সেই নালাতে ৬ ফুট দূরে ফুট খানেকের গর্ত করে তাতে টিস্যু কালচার কলার চারা বসাতে হবে।
চারা রোপণের উপযুক্ত সময়কাল : এই চারা রোপণের প্রকৃষ্ট সময় হল ফাল্গুন মাস, যাতে শীতের সময় কলা বাজারজাত করে বেশী মূল্য পাওয়া যায়। তবে বর্ষাকাল অবধি চারা লাগানো যেতে পারে।
প্রাথমিক সার : মূল জমি তৈরির সময় বিঘা প্রতি ২০-৩০ কুইন্ট্যাল গোবর / ১০-১৫ কুইন্ট্যাল কেঁচোসারের সঙ্গে ট্রাইকোডার্মা + সিউডোমোনাস ১ কেজি করে ও ২০০ কেজি নিম বা সরষে খোল প্রয়োগ করলে ভালো হবে। প্রতি গর্তে চারা বসানোর সময় ১০-১৫ কেজি গোবর / কেঁচো সার + ৫০ গ্রাম সি.সু.ফসফেট + ৫০ গ্রাম মিউরেট অফ্ পটাশ + ১০ গড়াম দানা বিষ দিয়ে প্যাকেট মুক্ত করে বসাতে হবে।
টিস্যু কালচারের কলার সার ব্যবস্থাপনা : এই কলা চাষ করার সময় মনে রাখতে হবে যে, এর হজম শক্তি বেশী ও সার গ্রহণ করে ফলন দেওয়ার ক্ষমতা চমৎকার। তাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিয়মিত সার দিয়ে গেলে টিস্যু কালচার জি-নাইন (গ্র্যান্ড নাইন) কলা আশাতীত ফলন দিতে সক্ষম। নিম্নে ছকের মাধ্যমে সার ব্যবস্থাপনা চাষীদের জন্য দেওয়া হল –
সার প্রয়োগের সময় |
রাসায়নিক সার |
পরিমাণ (গ্রাম / গাছ) |
লাগানোর ৩০ দিন পর |
ইউরিয়া সি.সু.ফসফেট মি.অ.পটাশ অনুখাদ্য মিশ্রণ
|
২৫ ১০০ ৫০ ২ |
লাগানোর ৬০ দিন পর |
ইউরিয়া সি.সু.ফসফেট মি.অ.পটাশ |
৫০ ১০০ ৫০ |
লাগানোর ৯০ দিন পর |
ইউরিয়া সি.সু.ফসফেট মি.অ.পটাশ অনুখাদ্য মিশ্রণ |
৬৫ ১০০ ৫০ ২ |
লাগানোর ১২০ দিন পর |
ইউরিয়া মি.অ.পটাশ |
৬৫ ১০০ |
লাগানোর ১৫০ দিন পর |
ইউরিয়া মি.অ.পটাশ |
৩০ ৬০ |
লাগানোর ১৮০ দিন পর |
ইউরিয়া মি.অ.পটাশ |
৩০ ৬০ |
লাগানোর ২১০ দিন পর |
ইউরিয়া মি.অ.পটাশ |
৩০ ৬০ |
লাগানোর ২৪০ দিন পর |
ইউরিয়া মি.অ.পটাশ |
৩০ ৬০ |
লাগানোর ২৭০ দিন পর |
ইউরিয়া মি.অ.পটাশ |
৩০ ৬০ |
লাগানোর ৩০০ দিন পর |
ইউরিয়া মি.অ.পটাশ |
৩০ ৬০ |
অন্যান্য পরিচর্যা : চারা লাগানোর মাস খানেকের মধ্যে প্রথম চাপান দেওয়ার সময় নালা বুজিয়ে ভেলী তুলে দিতে হবে।
জলসেচ, আগাছা নিয়ন্ত্রণ, ঠেক দেওয়া, মোচা কাটা, কাঁদি ঢাকা ইত্যাদি পদ্ধতি সাধারণ কলা গাছের মতই একই পদ্ধতিতে করতে হবে। যদিও টিস্যু কালচার কলার ক্ষেত্রে পরবর্তী তেউড় রাখা মানা, তবে অধিক লাভের জন্য একটি তেউড় রাখবেন এবং তার পরের বছর বাকি তেউড় কেটে একটি তেউড়, এভাবে ক্রমান্বয়ে তিন বছরই ফল সংগ্রহ কার্য চলবে।
ফলন : প্রথম বছর – ৯ – ১০ ছড়া / কাঁদি
দ্বিতীয় বছর – ১২ - ১৩ ছড়া / কাঁদি
কলার সংখ্যা – ১৬০ – ১৬৫ টি (প্রথম বছর), কাঁদি ৩০ - ৩৫ কেজি (প্রথম বছর)
২১০ – ২৪০ টি (দ্বিতীয় বছর), কাঁদি ৫০ – ৫৫ কেজি (দ্বিতীয় বছর)
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishjagran.com)
তথ্যসূত্র - শুভদীপ নাথ (সহ উদ্যানপালন আধিকারিক, উত্তর ২৪ পরগণা)
Share your comments