করলা একটি অতি পরিচিত গ্রীষ্মকালীন সব্জি | স্বাদে তেঁতো হলেও, এর পুষ্টিগুণ বহুল | এই সব্জিটির ভেষজ গুন্ও বেশি | করলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। এতে আছে যথেষ্ট পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন। এ বিটা ক্যারোটিন চোখের দৃষ্টি ভালো রাখে এবং চোখের নানা সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। এছাড়া করলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা দাঁত ও হাড় ভালো রাখে।
বাজারে সারাবছরই করলার চাহিদা থাকে, তাই কৃষকরা করলো চাষে (Karela Cultivation) আগ্রহীও হয়ে থাকেন |
মাটি (Soil):
জল জমেনা এ ধরনের প্রায় সব রকমের মাটিতেই করলার চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থযুক্ত দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি করলা চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
জলবায়ু (Climate):
উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় করলা ভাল জন্মায়। মোটামুটি শুষ্ক আবহাওয়াতেও এটি জন্মানো যায়, তবে বৃষ্টিপাতের আধিক্য এর জন্য ক্ষতিকর। জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে পরাগায়ন বিঘ্নিত হতে পারে।
জমি তৈরী:
জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে | প্রতি শতাংশে জমি তৈরির সময় ৪০ কেজি পচা গোবর সার মিশিয়ে দিতে হবে। মই দিয়ে সমান করার পর ১ মিটার চওড়া বেড করে তার মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া করে নালা কাটতে হবে। জমি যতটুকু লম্বা ততটুকুই লম্বা বেড হতে পারে। খুব বেশি লম্বা হলে মাঝখানে খণ্ড করা যেতে পারে। করলার ক্ষেত্রে ১.৫ মিটার দূরে দূরে মাদা তৈরি করতে হবে। সব দিকে ৪০ সেন্টিমিটার করে মাদা তৈরি করতে হবে। বীজ বোনার ৭ থেকে ১০ দিন আগে মাদায় পচা গোবর ও সার মাদার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
বীজের পরিমান:
সাধারণত প্রতি শতকে করলা চাষের জন্য ১৫ থেকে ২০ গ্রাম এবং প্রতি হেক্টরে ৩-৪ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
চাষের সময়:
করলার বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস। তবে আগাম ফসলের জন্য ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে করলার বীজ বপন করা যায়।
রোপণ:
করলার বীজের ত্বক শক্ত ও পুরু। তাই দ্রুত অঙ্কুরোদগমের জন্য বপনের আগে ৪৮ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। প্রতিটি মাদায় ৩-৪টি করে বীজ ২ থেকে ৩ সেমি গভীরতায় বপন করে ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। তবে মাদায় সরাসরি বীজ বপন না করে পলি ব্যাগে চারা তৈরি করে সেসব চারা মাদায় রোপণ করা যেতে পারে। এতে বীজের পরিমাণ কম লাগে এবং মাদায় গাছের প্রয়োজনীয় সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়।
পরিচর্যা:
করলা গাছ বড় না হওয়া পর্যন্ত আগাছা দমন করতে হবে। প্রতি মাদায় ২টি করে চারা রেখে বাকি চারাগুলো তুলে ফেলতে হবে। করলার চারা ১০-১৫ সেমি লম্বা হলে গাছের গোড়ার কাছাকাছি মাটিতে বাঁশের কঞ্চি বা কাঠি পুঁতে একদিকে কাত করে বেঁধে দিতে হবে। এরপর গাছ ৫০ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হলে ১.৫ মিটার উঁচু করে মাচা তৈরি করে দিতে হবে। এছাড়া মাঝে মধ্যে মাটি কুপিয়ে আলগা করে গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে উঁচু করে দিতে হবে এবং জমিতে আর্দ্রতা রক্ষায় করলা গাছের গোড়ায় জাবড়া দিতে হবে।
রোগবালাই ও দমন (Disease management system):
মাছি পোকা:
স্ত্রী মাছি পোকা কচি ফলের গায়ে ২-৫টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে পোকার কিড়াগুলো আক্রান্ত ফলে ভেতর ঢুকে এবং ফলের শাঁস খায়। আক্রান্ত ফল অকালে ঝরে পড়ে।
দমন :
আক্রান্ত ফল কিড়াসহ সংগ্রহ করে মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে। বিষটোপ ও ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। একটি মাটির পাত্রে ১০০ গ্রাম থেতলানো মিষ্টি কুমড়ার সঙ্গে ০.২৫ গ্রাম সেভিন ৮৫ ডাবিস্নউপি মিশিয়ে বিষটোপ তৈরি করতে হবে। বিষটোপ ৩-৪ দিন পর পর পরিবর্তন করতে হবে।
ডাউনি মিলডিউ:
পাতার ওপর ছোট ছোট হলুদ দাগ পড়ে। পাতা ঝলসে ও কুচকে যায়। পাতার নিচে গোলাপি দাগ দেখা যায়।
প্রতিকার:
রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার জলের সঙ্গে ২ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ মিশিয়ে গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্র্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন - Onion Farming: স্বল্প ব্যয়ে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা
ফসল সংগ্রহ:
বীজ বপনের ৫০-৬০ দিন পর গাছে ফল ধরে। ফল ধরার ১২-১৫ দিন পর করলা সংগ্রহ করতে হয়। সঠিক পরিচর্যায় হেক্টরপ্রতি ১২-১৫ টন পর্যন্ত করলার ফলন পাওয়া যায় |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Citrus Crop - লেবু গোত্রীয় ফসলে কৃমি জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ-এর সহজ উপায়
Share your comments