আঙুর একটি বহুবর্ষজীবি বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এটি পূর্বে আমাদের দেশে ব্যাপক পরিমাণে চাষ না হলেও বর্তমানে বেশ কিছু জায়গায় আঙুরের চাষ করা হচ্ছে। আপনি চাইলে এই রসালো সুমিষ্ট ফলটি আপনি আপনার বাড়ির ছাদে (Rooftop Gardening) অথবা উঠোনেই চাষ করতে পারেন।
আপনার কি ছাদবাগানের শখ রয়েছে? তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক, বিভিন্ন গাছের সাথে কিভাবে দ্রাক্ষার চাষ করবেন নিজের বাড়িতেই।
দ্রাক্ষা চাষের পদ্ধতি (Grapes Home Farming) -
মাটি তৈরি (Soil Preparation) :
আঙুর চাষের জন্য কিছু মাটি বাছাই করতে হয়। এক্ষেত্রে দো-আঁশযুক্ত লালমাটি অথবা জৈব সার সমৃদ্ধ কাঁকর জাতীয় মাটি এছাড়াও পাহাড়ের পাললিক মাটিতে আপনি আঙুর চাষের জন্য বাছাই করতে পারেন। কারণ এতে আঙুর চাষ ভালো হয়।
টব/পাত্রের আকৃতি বাছাই (Pot Size) :
আঙুর একটি অতিলতানো গাছের ফল। সাধারণত আঙুর চাষের জন্য আপনি ছোট টব বা পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আপনি মাঝারি সাইজের টব বা বড় বোতল বা অন্য কোন পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। আপনি ইচ্ছা করলে আপনার বাড়ির উঠোনে বা আঙ্গিনায় মাচা করে এই আঙুরের চাষ করতে পারেন।
বীজ বপন ও জল সেচ (Seed Sowing & Water Management) :
আঙুর লাগানোর ক্ষেত্রে আপনাকে সর্বপ্রথম চারা সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটস্থ নার্সারীতে যোগাযোগ করতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে যেখানে প্রচুর সূর্যের আলো পড়ে এমন যায়গায় আঙুর চারা লাগাতে হবে। এরপর আঙুর চারা গোড়ার মাটির বলসহ গর্তে রোপন করতে হবে। চারা লাগানোর পর একটি কাঠি
আঙুর গাছ পরিচর্যা -
আঙুর চারা লাগানোর পর এর বৃদ্ধির জন্য সময়মতো বাড়তি সার প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাড়িতে তৈরি জৈব সার দিতে পারেন। তবে গাছে দোকান থেকে কিনে আনা সারও প্রয়োগ করা যেতে পারে। মনে রাখবেন, আঙুর গাছ লতা জাতীয় গাছ তাই উদ্ভিদ একটু বড় হলেই তা সঠিক ভাবে বাড়ার জন্য মাচা করে দিতে হবে।
চারা লাগানোর একবছর পর আঙুর গাছ ছাটাই করতে হবে। গাছ ছাটাই করার অন্তত সাত দিন আগে গাছের গোড়ায় হালকা সেচ দিতে হবে। আঙুর গাছে পটাশ সার ব্যবহার করলে আঙ্গুর মিষ্টি হয় এবং রোগ বালাইয়ের উপদ্রব কম হয়।
পোকামাকড় দমন ও কীটনাশক (Pest Management) :
আঙুর গাছে সাধারণত পিঁপড়া ও বিভিন্ন ধরণের পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে। এসব পিঁপড়া ও পোকামাকড়ের হাত থেকে আঙুর গাছ কে রক্ষা করতে হলে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করে দিতে হবে।
পোকার আক্রমণ -
গুবরে পোকা : এরা কচি পাতা খেয়ে ফেলে। পাতার শিরার অংশ বাকি রেখে পুরো পাতা খেয়ে থাকে।
দমন : ম্যালাথিয়ন ৪০০ মিলি প্রতি ১৫০ লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে৷
থ্রিপস এবং জ্যাসিড : এরা মূলত পাতা ও ফলের রস শোষন করে। পাতার নিচের অংশের রস খেয়ে ফলে ফলে পাতার উপরে সাদা দাগ পড়ে।
দমন: এক্ষেত্রেও ম্যালাথিয়ন ৪০০ মিলি প্রতি ১৫০ লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
হলুদ ও লাল বোলতা : পরিপক্ক ফলকে ছিদ্র করে এবং খেয়ে ফেলে।
দমন: কুইনাফোস ৬০০ মিলি প্রতি ১৫০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন - Terrace Farming – বাড়ির ছাদেই করুন লেটুস শাকের চাষ, জেনে নিন চাষের পদ্ধতি
সংগ্রহ :
আঙুর ফল মূলত যখন ফল পরিপক্কভাবে পাকে তখনই সংগ্রহ করতে হয়। তবে এপ্রিল-মে মাসে ফুল দেখা দেয় এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে পুরোপুরি ভাবে আঙুর ফল পাকে। সাধারণত গ্রীষ্মকালে আঙুর ফল সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যেন আঙুর ফল পাকতে পাকতে বর্ষাকাল না চলে আসে। কারণ বর্ষা চলে এলে ফল মিষ্টি হয় না। সঠিক ভাবে পরিচর্যা করা হলে এক একটি আঙুর গাছ কমপক্ষে ৩০ বছর ফলন দিতে পারে। আর একটি গাছ থেকে আপনি কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ কেজি ফল পেতে পারেন।
আরও পড়ুন - Thankuni Leaves - সঠিক নিয়মে বাড়ির টবেই থানকুনি চাষের কৌশল
Share your comments