একাঙ্গী এই উদ্ভিদটির উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ চীন অথবা ভারত বলে মনে করা হয়। ঔষধিগুণে সমৃদ্ধ এই উদ্ভিদের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। এই উদ্ভিদ চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
একাঙ্গী - এই উদ্ভিদটির পাতা পুরু, গোলাকৃতি এবং মাটির সঙ্গে লাগানো অবস্থায় থাকে। গাছের গোড়া থেকে একসঙ্গে ৯-১০টি পাতা বের হয়। নতুন পাতা ক্ষুদ্র রাইজোম থেকে বের হয়। গ্রীষ্মকালে ১-২টি সাদা রঙের ফুল ফোটে। শীতকালে পাতা মরে যায় এবং রাইজোম সুপ্ত অবস্থায় চলে যায়।
উচ্চফলনশীল জাত:
একাঙ্গীর উচ্চফলনশীল জাতগুলির মধ্যে রজনী, কস্তুরি সুপরিচিত।
রোপণ সময় :
চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস একাঙ্গীর কন্দ বসানোর উপযুক্ত সময়। গোটা কন্দ থেকে দু-একটি চোখ রেখে টুকরো টুকরো করে কেটে আলুর মতো করে বসানো যেতে পারে।
বীজের হার ও বীজশোধন :
এক বিঘা জমিতে রোপণ করতে প্রায় ১০০ কেজি কন্দ প্রয়োজন। পচন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বপনের সময় অবশ্যই কন্দ শোধন করে নিতে হবে। এজন্য প্রতিলিটার জলে ৫ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি মিশিয়ে সেই দ্রবণে ৫-১০ মিনিট কন্দ ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ছায়ায় সেই কন্দ শুকিয়ে নিতে হবে।
জমি তৈরি ও রোপণ দূরত্ব:
একাঙ্গী চাষের জন্য জমিতে ভাল করে ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে এবং মাটি ঝুরঝুরে করে জমি প্রস্তুত করতে হবে। ২০ সেন্টিমিটার × ১৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে এবং ২-৩ সেমি গভীরতায় কন্দ বপন করা উচিত। কন্দ বপনের পর প্রথমবার নিড়ানি না দিয়ে আগাছানাশক ব্যবহার করা উচিত। সেক্ষেত্রে গ্লাইফোসেট ৪১ এসএল প্রতিলিটার জলে ৮ গ্রাম দেওয়া যেতে পারে।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি :
জমি প্রস্তুত করার সময় শেষ চাষের আগে বিঘায় ৪-৫ গোরুর গাড়ি গোবরসার ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। দু’বার রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে তা লাভজনক। কন্দ বসানোর ৪৫ দিন পর প্রথমবার ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি ইউরিয়া, কন্দ বসানোর ৯০ দিন পর ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি ইউরিয়া দিতে হবে। প্রতিবার সার প্রয়োগের আগে জমি আগাছা মুক্ত করতে হবে।
Related link - Ekangi (Kaempheria galanga L.) একাঙ্গী চাষের জন্য উপযুক্ত জলবায়ু, মাটি শোধন প্রক্রিয়া ও সেচ পদ্ধতি
আন্তঃপরিচর্যা:
মাটিতে আর্দ্রতা কম থাকলে বীজ রোপণের পরপরই সেচ দিতে হবে। একাঙ্গীর সঠিক বৃদ্ধি ও জলনিষ্কাশনের জন্য দুই সারির মাঝের মাটি গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে। ফসলের সাথে আগাছার প্রতিযোগিতা রোধ করার জন্য জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। এভাবে যতবার সম্ভব প্রয়োজন অনুসারে ফসলকে আগাছামুক্ত করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি না হলে একাঙ্গীর জমিতে সেচ দিতে হবে। জমিতে এমনভাবে সেচ দিতে হবে যাতে জমিতে পরিমিত রস থাকে, কিন্তু জমি অতিরিক্ত ভেজা/দাঁড়ানো জল না থাকে।
আন্তঃফসল চাষ :
একাঙ্গী বেশি সূর্যালোক পছন্দ করে না। কাজেই একাঙ্গীর সঙ্গে আন্তঃফসল হিসেবে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, লালশাক, শিম, লাউ ইত্যাদি ফসল চাষ করা যায়। এছাড়া নতুন ফলের বাগানে সারি ফলগাছের মাঝে আন্তঃফসল/মিশ্র ফসল হিসেবে একাঙ্গীর চাষ করা যায়। একাঙ্গীর সঙ্গে মুগ, অড়হরডাল ও মাচায় পটল চাষ করা যেতে পারে।
Image source - Google
নিবন্ধ লেখনী - তনুশ্রী সাহা ও ডঃ সার্থক ভট্টাচার্য্য (গবেষক ও সহকারী অধ্যাপক)
(বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মোহনপুর, নদীয়া ও দি নেওটিয়া ইউনিভার্সিটি, সরিষা, দঃ ২৪ পরগণা)
Share your comments