জাপানি কোয়েল। হ্যাঁ, এই জাপানি কোয়েল এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে প্রান্তিক চাষিদের। দক্ষিন দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের বটুন গ্রাম পঞ্চায়েতের আজইর গ্রাম "দীন দুঃখিনী ফার্মার্স ক্লাব" জাপানি কোয়েল পাখি চাষ করে গ্রামের মানুষদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পথ দেখাচ্ছে।
অন্য যে কোনও পোল্ট্রি ব্যবসার তুলনায় কোয়েল চাষ করে অতি দ্রুত মুনাফা লাভও সম্ভব বলে জানিয়েছেন চাষিরা। হাতে কলমে সেই ফলও পাচ্ছেন। বিকল্প আয়ের পথ হিসেবে কৃষিকাজের সঙ্গেই তাই বাড়িতে কোয়েল পাখির চাষ করেছেন অনেকেই। দিশা দেখাচ্ছে এলাকারই দীন দুঃখিনী ফার্মাস ক্লাব।
ফার্মার্স ক্লাবের সম্পাদক জাহিরুল শেখ জানান, তাঁরা প্রথম স্থানীয় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে এই জাপানি কোয়েল চাষের কথা শোনেন। তারপরই হাতে কলমে চাষ শুরু করে দেন। জাহিরুলের কথায়, ''এই চাষে ঝক্কি কম। খরচ কম। অথচ, কম সময়ে প্রায় দ্বিগুন লাভ!'' আর তা দেখেই স্থানীয় গরিব মানুষও বিকল্প আয়ের জন্য এই চাষের দিকেই ঝুঁকছেন।
আরও পড়ুনঃ এই ফল চাষ করলে বছরে ২৫ লাখ টাকা লাভ হবে
কিভাবে চাষ করতে হয়? সমস্যা কী থাকে? লাভই বা কেমন?
জাহিরুল জানাচ্ছেন, সব চেয়ে মজার কথা হল, জাপানি কোয়েল পাখি পালন করতে বেশি জায়গার প্রয়োজন নেই। ঘর লাগোয়া অল্প জায়গা হলেই করা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু একটা খাঁচার। যাতে এদিক সেদিক না পালাতে পারে। সাপ, বেজি বা অন্যান্য বন্য প্রাণী না খেয়ে ফেলতে পারে।
জাপানি কোয়েলের রোগজ্বালাও প্রায় হয় না বললেই চলে। উল্টে এই কোয়েল পাখি খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। ব্রয়লার কোয়েলকে ৪ সপ্তাহেই বাজারে বিক্রি করা যায়। ৪ সপ্তাহ বয়সে ওজন ১২৫ গ্রাম ও ৫ সপ্তাহে ওজন ১৪০ - ১৫০ গ্রাম ওজন হয়। ৭টি কোয়েলে ১ কেজি মাংস হয়। কোয়েল ৬ - ৭ সপ্তাহ বয়স থেকে ডিম দিতে শুরু করে। এর পাশাপাশি এক ফুট বাই চার ফুট বা ৩ ফুট খাঁচায় ৬ ০টির মতো কোয়েল পাখি রাখা যায়। কোয়েল তার জীবনচক্রে ৬০০ গ্রামের মতো খাবার খায়। কোয়েলের তেমন কোনও রোগ-ব্যাধি নেই। ফলে টিকা দেওয়া কিংবা ওষুধের খরচও সেভাবে নেই বললেই চলে। আরও লক্ষণীয় বিষয় হল, ভারতীয় জলবায়ুতে পাখি পালনের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়। কোয়েল পাখিরা সব ধরণের পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে বলেও তিনি জানেন।
আরও পড়ুনঃ চায়ের প্যাকেট থেকে জন্মাবে গাছ, জেনে নিন এই ব্যক্তির বিস্ময়কর কীর্তির কাহিনী
জাহিরুলের কথায়, এক একটি কোয়েলের বাচ্চা কিনতে ১২ থেকে ১৭ টাকা খরচ হয়। ৪৫ দিন পর্যন্ত পালন করতে বাচ্চা পিছু গড়ে ১২-১৫ টাকা খরচ। তার মধ্যে খাবার ও অন্যান্য খরচ মিলিয়েই ওই খরচ। অর্থাত্ বাচ্চা প্রতি ৪৫ দিনে গড় খরচ ৩০-৩৫ টাকার মতো। কিন্তু সেটি ৪৫ দিন পর বিক্রি করলে এক একটি পাখি পিছু ৬০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত মেলে। জাহিরুল বলেন, ''দ্বিগুন লাভ প্রায় নিশ্চিত বলা যায়। তাই আমরা সমস্ত বেকার যুবক-যুবতী থেকে সকলেই এই চাষে উত্সাহিত করছি।''
আর লাভ দেখে এই চাষে ঝুঁকছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের বহু মানুষ। কোয়েল পাখি চাষি মর্জিনা বিবি বলেন, ''ভালোই লাভ পাচ্ছি। এই চাষে ঝক্কিও কম। আমি বাড়ির কাজ করেও পাখির দেখভাল করতে পারি। ফলে স্বামী অন্য যে কাজ করতো সেটা করতে পারে। এতে আমাদের অতিরিক্ত আয় বেড়েছে।''