সজনে গাছ হল পুষ্টির খনি। এই গাছের বহু ঔষধি গুণ আছে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটিরিয়াল উপাদান লিভার ও কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া সজনের চাষ বেশ লাভজনক। বহু গুণসম্পন্ন এই গাছটি অবশ্যই চাষ করা উচিত।
প্রথম পর্ব:
সজনে বা সজিনা এক অতি পরিচিত গাছ। আমাদের দেশে এর আর এক নাম ‘শোভাঞ্জন’ (যার অর্থ খুব শুভ গাছ)। সজনে ডাঁটা আমাদের অতি পরিচিত সুস্বাদু সবজি। এই গাছের উপকারিতা অনেক। সজনে গাছের কোনও কিছুই ফেলা যায় না।
সজনে ডাঁটা, সজনে পাতা, সজনে গাছের ফুল, মূলের ছাল সবই খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই গাছের পাতা, ফুল এবং ডাঁটা থেকে আমরা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, জিংক, আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ইত্যাদি পাই।
জলবায়ু ও মাটি:
প্রতিকূল পরিবেশেও সজনে চাষ করা সম্ভব। এই গাছ চরম প্রাকৃতিক অবস্থা সহ্য করতে সক্ষম। খুব ঠান্ডার জায়গা ছাড়া আর প্রায় সব জায়গায় এই গাছ জন্মায়। তবে ২০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সজনে চাষের জন্য উপযোগী। যেসব এলাকায় কম (বছরে ২৫০ মিলিমিটার) বা স্বাভাবিক (বছরে ১৫০০ মিলিমিটার) বৃষ্টিপাত হয় সেখানে এই গাছ ভাল জন্মায়। মাটি বেলে-দোঁআশ বা দোয়াঁশ হলে ভাল এবং মাটির পিএইচ ৫.০ হতে ৮.৫ এর মধ্যে থাকলে এর চাষ সম্ভব। পলি মাটি সজনে চাষের জন্য সবচেয়ে ভাল। তবে এই গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। বেশি জল হলে গাছ মরে যেতে পারে। বাগানে বা উঠোনে যদি জায়গা থাকে তাহলে সেখানে সজনে গাছ লাগানো যায়। যে কোনও পতিত জমি, পুকুর পাড়, জমির আল, রাস্তা বা বাঁধের ধারে বা যে কোনও ফাঁকা জায়গায় এই গাছ বাণিজ্যিকভাবে লাগানো যায়। এমনকী ফ্ল্যাটের ব্যালকনি কিংবা ছাদে টবে এই গাছ লাগানো যায়।
আরও পড়ুন -Sugarcane farming: আখ চাষে ব্যাপক সাফল্য বাংলদেশের কালীগঞ্জের কৃষকদের
জাত:
সজনে ডাঁটা দু’ধরনের। এক প্রকারের সজনে গাছে বছরে একবার ফলন পাওয়া যায়। এই প্রকার সজনের ভাল জাত হল, পিকেএম-১, পিকেএম-২, কেএম-১, ধনরাজ, ভাগ্য, এবং অনুপমা। আর এক প্রকার সজনে গাছে বছরে ৩-৪ বার ডাঁটা (ফল) পাওয়া যায়। এই প্রকার সজনে-কে নাজনে বা বারোমাসি সজনে নামে ডাকা হয়। এই প্রকার সজনের ভাল জাত হল ওডিসি-৩। বারোমাসি সজনে বেশি খরা সহনশীল।
বীজ বপন / চারা রোপণ পদ্ধতি:
বীজ থেকে বংশবিস্তার সম্ভব হলেও বীচন বা কাটিং থেকে নতুন চারা তৈরি করাই সহজ এবং উত্তম। আর বীজ থেকে তৈরি গাছে ফল আসতে ৩-৪ বছর সময় লাগে। তাছাড়া বীজ থেকে চারা তৈরি ব্যয়বহুল, কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। জুলাই-আগষ্ট মাসে বীজতলায় অথবা পলি ব্যাগে বীজ বোনা হয়। বীজ থেকে চারা বের হতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে।
এক হেক্টর জমিতে চাষ করার জন্য মোটামুটি ৫০০ গ্রাম বীজ লাগে। চারার বয়স ৫০-৬০ দিন হলে তা জমিতে লাগানো হয়। সজনে চাষের ক্ষেত্রে ডাল পুঁতে অঙ্গজ উপায়ে বংশবিস্তার পদ্ধতিটি বেশি ব্যবহার করা হয়। এটি করতে তেমন দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। আর খরচও কম। বীচন বা কাটিং লাগানোর উপযুক্ত সময় হল এপ্রিল থেকে মে মাস। কারণ, এই সময়ে সজনে ডাঁটা তুলে ফেলার পর গাছের ডালপালা ছেঁটে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন -Coriander leaves farming: জেনে নিন টবে কিভাবে ধনেপাতা চাষ করবেন
Share your comments