পুঁইশাক একটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু শাক। আমাদের দেশে প্রায় সকল স্থানেই পুঁইশাকের চাষ করা হয়। ম্যাক্রোনিউট্ট্রিয়েন্ট এই শাকে সম পরিমাণে থাকে। এই শাকে প্রতি ১০০ গ্রামে রয়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ ক্যালোরি, ৩.৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ৩ গ্রাম এবং ২.৪ গ্রাম ফাইবার।
আমরা এর চাষ পলি ব্যাগে, শ্যালো টবে, সিমেন্টের পাত্রে, মাটির টবে বা কোনো বালতিতেও করতে পারি। কারণ এর জন্যে প্রচুর গভীর মাটির স্তর প্রয়োজন হয় না। মাত্র ৪-৬ ইঞ্চি পুরু মাটিতে এই চাষ হয়ে যায়। এর মধ্যে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ছাড়াও পাওয়া যায় আইরন ক্যালসিয়াম এবং প্রচুর পরিমানে এ এবং সি ভিটামিন।
আসুন জেনে নেওয়া পুঁইশাক চাষ করার পদ্ধতি।
প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি (Climate and soil) :
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে পুঁইশাক জন্মে। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া এবং রোদ পুঁইশাক গাছের পছন্দ। কম তাপমাত্রায় গাছের বৃদ্ধি ও ফলন কম হয়। সব ধরনের মাটিতেই পুঁইশাক জন্মে। তবে পুঁইশাক সুনিকাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ থেকে এটেল দোআঁশ মাটিতে সবচেয়ে ভাল হয়। তাই বাণিজ্যিকভাবে পুঁইশাক চাষের ক্ষেত্রে দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ ও এঁটেল মাটিযুক্ত জমি বেছে নিতে হবে।
কিভাবে চারা তৈরি করবেন:
পুঁইশাকের বীজ থেকে এর চারা তৈরি করা যায়। বর্ষায় এর চাষ ভাল হয়। বীজ ১২ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রেখে পরে মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। আবার চারা তৈরির জন্য বেডে বা পলিব্যাগে বীজ বোনা হয়। চারা দু সপ্তাহের হলে সেগুলো তুলে মূল জমিতে লাগানো যায়।
সার প্রয়োগ (Fertilizer Application) -
চারার বয়স ১০-১২ দিন হলে ইউরিয়া সার স্বল্প পরিমাণে প্রয়োগ করা যেতে পারে। ৩০-৪০ দিন পর এবং প্রথমবার ফলন তোলার পর গোবর সার, সরিষার খোল, সবজীর খোলা পচা জল, মাছের আঁশ ধোয়া জল ইত্যাদি শাকের ভালো ফলনের জন্য প্রয়োগ করা যাতে পারে।
আগাছা পরিষ্কার - -
ফলন বেশি পেতে হলে বাউনি দিতে হবে। পুঁইশাক গাছের গোড়ায় দূর্বা ঘাস জাতীয় আগাছা জন্ম নেয়। আগাছা জন্মালেই তা হাত দিয়ে তুলে ফেলতে হবে। মাটি খুরপি দিয়ে খুঁড়ে নিয়ে সমস্ত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগদমন -
পুঁইশাকে পাতায় বিটল বা ফ্লি বিটল ছাড়া আর কোনো পোকা তেমন ক্ষতি করে না। এই পোকা পুঁইশাকের পাতায় ছোট ছোট ছিদ্র করে ফেলে। এছাড়া সারকোস্পোরা পাতার দাগ পুঁইশাকের একটি মারাত্মক রোগ। এছাড়া গাছের গোড়ায় পিঁপড়ে হয়ে গেলে তা গাছের রস শোষণ করে। এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ক্লোরোপাইরিফস সাইপারমেথ্রিন সহযোগে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন - Papaya Farming – অতিরিক্ত আয় করতে খুব সহজেই করুন বাগানে পেঁপে চাষ
ফলন -
পুঁইশাক গাছের ডগা মাঝে মাঝে কেটে দিতে হবে। এতে শাক আপনি নিতেও পারবেন আবার গাছে নতুন ডগাও বের হবে। তবে হাত দিয়ে টেনে না ছিঁড়ে ডগা ধারালো কিছু দিয়ে কেটে নেওয়া ভালো।
Share your comments