কৃষিজাগরন ডেস্কঃ সর্পগন্ধা একটি চিরহরিৎ গুন্ম জাতীয় উদ্ভিদ।আমাদের দেশের সব জায়গায় এটি দেখা যায় না।বন জঙ্গলে অযত্নে অবহেলায় গাছটি বেড়ে ওঠে।সর্প গনাধাকে চন্দ্রা, নাকুলি, সুগন্ধা, রক্তপত্রিকা, ঈশ্বরী, অহিভুক, সর্পদনী নামেও ডাকা হয়।সর্পগন্ধা বাংলাদেশে, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, নেপাল, ভূটান, থাইল্যন্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় দেখা যায়।
জাত পরিচিতি
সর্পগন্ধার ফল, বাঁশ, রুট সব কিছুই ব্যবহার করা যায়। সর্পগন্ধার অনেক প্রজাতি রয়েছে এগুলির মধ্যে রাববোলফিয়া সারপেন্টিনা প্রধান। রাববোলফিয়া টিট্রাফিলাস আর একটি প্রজাতি যা প্রধানত ঔষধি উদ্ভিদ রূপে ব্যবহৃত হয়। সর্পগন্ধার মূল ঔষধ রূপে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া রেসরপিন, সরপেজিন, রোলভেনিন, আদি অ্যালকালাইড ইত্যাদি প্রজাতিও দেখা যায়।
চাষের জন্য তাপমাত্রা
১০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড – ৩৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত তাপমাত্রা সর্পগন্ধা চাষের জন্য উপযোগী। পর্যাপ্ত সময়কাল জুন থেকে আগস্ট মাস, সঠিকভাবে চাষের জন্য ১২০০-১৮০০ মিটার এলাকা প্রয়োজন। বীজ, কলম এবং রুটের দ্বারা সহজেই সর্পগন্ধার চাষ করা যেতে পারে। কৃষিক্ষেত্রে এটির চাষ করে খুব সহজেই কৃষকেরা লাভ করতে পারেন।
চারা তৈরির পদ্ধতি
এই উদ্ভিদটির বীজ সংরক্ষণ করেও চারা তৈরি করা যায়, আবার কলম করেও চারা করা যায় । মে এবং জুন মাস থেকে বীজ তৈরি করে রেখে পরে আগস্ট মাসে সেই বীজ বপন করতে হবে। এক হেক্টর জমির জন্য ৮-১০ কেজি বীজ প্রয়োজন। বীজ বপন করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অঙ্কুরোদগম হয়ে যায়। ২০-২৫ সে.মি. দূরত্বে ২ সে.মি গভীরে বীজগুলি বপন করতে হবে। ২ মাস পরে রোপণ পদ্ধতি শুরু করতে হবে।
মনে রাখবেন, বীজ বপনের পূর্বে তা ২৪ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। মে মাসে বীজতলায় বীজ বপন করলে তা প্রায় ৩০-৪০ দিনের মধ্যে চারা গজায়। বীজ ভালো মানের হলে তা থেকে অঙ্কুরোদগম হার শতকরা ৪০ ভাগ পর্যন্ত।
কলম তৈরির পদ্ধতি
সর্পগন্ধার কলমের জন্য কাণ্ডটি ২.৫ – ৫ সে.মি পুরু হতে হবে। ছোটো ছোটো টুকরো করে ৫ সে.মি গভীরে রেখে দিতে হবে। এর তিন সপ্তাহ পরে কাণ্ড বড় হয়ে গেলে সেটিকে ক্ষেতে রোপন করতে হবে। গাছটি তৈরির জন্য কাণ্ডটি ১৫-২০ সে.মি পুরু হতে হবে, ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে স্থায়ীভাবে এটি প্রস্তুত হয়ে যাবে এরপর এটিকে ক্ষেতে রোপন করতে হবে।
আরও পড়ুন - Profitable Papaya Farming - জানুন হাইব্রিড পেঁপের লাভজনক চাষ পদ্ধতি
জমি তৈরী ও চারা রোপন
মাটি প্রস্তুত করার সময় গোবর ও সার মিশিয়ে বীজতলা তৈরী করা হয়। বীজ বপনের ৩০-৪০ দিনের মধ্যে চারা জন্মায়। চারার বয়স ৩-৪ মাস হলে চারা তুলে রসযুক্ত মাটিতে রোপন করতে হয়। বড় গাছের ছায়ায় এর চাষ ভাল হয়।
কৃষকরা যদি ফসল চাষের পাশাপাশি সর্পগন্ধা চাষ করেন, তবে তিনি চাষে ১লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারেন। সর্পগন্ধা ১৮ মাসের মধ্যে প্রস্তুত হয় এবং এটি একটি কার্যকরী ঔষুধ। কে.ভি.কে –এর কৃষি বিজ্ঞানীদের পরামর্শে চাষ করলে কৃষকদের জন্য তা আরও লাভজনক হয়। সর্পগন্ধা এক একর জমিতে প্রায় ২৫-৩০ কুইন্ট্যাল উৎপাদিত হয় এবং প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা মূল্যে বিক্রি হয়।
আরও পড়ুন - Pangas Fish Farming - জেনে নিন সহজ পদ্ধতিতে পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষের কৌশল
সর্পগন্ধার ঔষধি গুণ
(১) সর্পগন্ধা পাতার নির্যাস চোখের ছানি কাটাতে সাহায্য করে।
(২)বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ নিরাময়েও এর শিকড়ের রস কার্যকর।
(৩)বার্ধক্যজনিত রোগও এর পাতার নির্যাস দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।
(৪)চোখের ছানি অপসারণের ক্ষেত্রে সর্পগন্ধার পাতার নির্যাস সেবন কার্যকরী।
(৫)শিকড় ও পাতার রসে আছে অ্যালকালয়েডস, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
(৬)হাইপারটেনশন, ইনসমোনিয়া, জ্বর, বাতজ্বর এবং ব্যথাবেদনায় সর্পগন্ধার মূলচূর্ণ ফলপ্রদ।
Share your comments