বাজারে সারাবছর লাউ (Bottle Gourd) পাওয়া গেলেও তা জৈব না অজৈব পদ্ধতিতে চাষ করা তা জানা আপনার পক্ষে সম্ভব না। আর রাসায়নিক পদ্ধতিতে চাষ করা ফসল আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকারক। বর্তমানে সকলেই ঝুঁকছেন জৈব চাষে উৎপাদিত ফসলে।
জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন সবজি আপনি হাতের কাছে না পেলেও এখন নিজেই তৈরি করতে পারেন। বাড়ির ছাদে শাক-সবজি চাষের শখ থাকলে আপনি লাউ বাড়ির ছাদেও চাষ করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন খুব সহজেই৷
অনেকেই বাড়িতে লাউ ফলান৷ বাড়িতে ফলানো সম্ভব এমন বেশ কিছু সবজির মধ্যে লাউ অন্যতম৷ এর চাষে যেমন বেশি সমস্যা নেই তেমনই এই সবজির গুণাগুণও অনেক৷ এবং সেই সঙ্গে বিক্রি করলে লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনাও রয়েছে৷ চলুন প্রথমে দেখে নেওয়া যাক লাউ-এর গুণাগুণ সম্পর্কে৷
লাউ-এর গুণ- জানা যায় এই সবজির জন্ম আফ্রিকায়৷ শুধু লাউ নয়, লাউ-এর পাতা, এর খোসা সব কিছুই খুব পুষ্টিকর এবং তা খাওয়াও হয়৷ লাউ-এর থেকেও বেশি পুষ্টিকর এর শাক ৷
বাড়িতে সহজে কি করে লাউ ফলানো সম্ভব৷ এর জন্য বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, নিচে বিস্তারিত দেওয়া হল সেগুলি৷ বাড়ির ছাদে আপনি চাইলে টবে বা ড্রামে লাউ চাষ করতে পারেন৷
বাড়ির ছাদে লাউ চাষ (Bottle Gourd Rooftop Farming) -
প্রথমে মাটি তৈরি করে নিতে হবে- এক্ষেত্রে মাটি যেন নরম হয় এবং জল ধরে রাখতে পারে গাছের চাহিদা অনুযায়ী সে দিকে নজর রাখতে হবে৷ লাউ চাষের জন্য জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ, এঁটেল দো-আঁশ মাটি খুবই উপযুক্ত৷ ২ ভাগ দোআঁশ মাটির সঙ্গে ২ ভাগ জৈব সার মিশিয়ে বীজতলা তৈরি করে নিতে হবে৷ এই সবজি চাষের ক্ষেত্রে ভালো সার হল টিএসপি, এমপি, বোরক্স, সেই সঙ্গে প্রয়োজনে গোবর সারও ব্যবহার করতে পারেন৷
এবার বীজ থেকে চারা তৈরির পদ্ধতি দেখে নেওয়া যাক৷ এই বীজ বপনের কম করে এই লাউবীজকে ১২ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে৷ তারপর সার মেশানো মাটি পলি ব্যাগে ভরে তার বেশ কিছুটা ভিতরে বীজ রাখতে হবে৷ প্রতিদিন নিয়ম করে দু বার এতে জল দিতে হবে৷ মনে রাখবেন প্রতি পলি ব্যাগে মাত্র ২ টো করেই বীজ দিতে পারবেন৷ ১৬-১৭দিন বয়সের চারা ড্রামে লাগানোর জন্য উপযুক্ত৷ তবে মনে রাখবেন একটি চারার জন্য একটি ড্রাম বরাদ্দ করলে ভালো হয়৷ এবং সেই ড্রামগুলিকে নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখতে হবে এবং ভালো ফলনের জন্য মাচা তৈরি করে দিলে ভালো হয়।
ছাদে লাউ চাষের জন্য হাফ ড্রাম যদি ব্যবহার করেন তাহলে ওই হাফ ড্রামের তলায় ৪ থেকে ৫ টি ছিদ্র করতে হবে যাতে সহজেই অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যেতে পারে। ড্রামের তলার ছিদ্রগুলো ছোট ছোট ইটের টুকরো দিয়ে বন্ধ করে রাখতে হবে৷ চারা রোপনের পর ড্রামে চারদিকের মাটি একটু চেপে চেপে দিতে হবে এবং ধীরে ধীরে এতে জল দেওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে কারণ লাউ গাছের প্রচুর জলের প্রয়োজন হয়। সঙ্গে এও দেখে নেবেন যাতে ড্রামের মধ্যে আগাছা না জন্মায়৷ জন্মালে তা অবশ্যই তা তুলে ফেলতে হবে সাবধানে যাতে লাউ গাছটির কোনও ক্ষতি না হয়৷
লাউ গাছের পরিচর্যায় কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির ব্যবহার করতে পারেন৷ যেমন এর মাচায় পাখি বসার ব্যবস্থা তা অনেকটা প্রাকৃতিকভাবে পোকা দমন করতে সাহায্য করবে৷ অনেক সময় পিঁপড়ে লাউ গাছের ফুলে আক্রমণ করতে পারে, তাই পিঁপড়ে সরাতে ছাই ব্যবহার করতে পারেন৷
আরও পড়ুন - Areca Nut Farming: জেনে নিন বাংলাদেশে কোন জাতের সুপারি গাছ চাষ লাভজনক
কিছু দিন পর পর লাউ গাছের মাটি একটু হালকা করে খুঁচিয়ে দেবেন তাতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ভিতরে প্রবেশের সুযোগ পায়৷ লাউ গাছের ছোট ছোট ডালপালা কেটে দিতে হবে সাবধানে, কারণ এগুলি গাছের ভালো ফলনে ব্যাঘাত ঘটায়৷
আরও পড়ুন - Bottle Gourd - বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লাউ চাষের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও পোকামাকড় দমনের পদ্ধতি
Share your comments