কুমড়ো, আমাদের পছন্দের বিভিন্ন সবজির মধ্যে অন্যতম৷ যা সারাবছরই পাওয়া যায়৷ এই ফল জাতীয় সবজির উৎপত্তিস্থল মধ্য আমেরিকা৷ তবে সারা বিশ্বেই নানা জাতের কুমড়োর চাষ (Pumpkin Farming) হয়৷ এর বৈজ্ঞানিক নাম Cucurbita moschata. মিষ্টি কুমড়ো দেখতে সাধারণত হলুদ, বা সবুজ-হলুদ বর্ণের হয়৷ এর ভিতরের অংশ উজ্জ্বল কমলা বর্ণের হয়, এবং অনেক বীজ থাকে ভিতরে৷ এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হলেও, মিষ্টি কুমড়ো দিয়ে স্ন্যাক্স তৈরি করা যেতে পারে, আবার মিষ্টিও তৈরি করা হয়৷ হ্যালোউইনে এই কুমড়োর প্রচুর চাহিদা (Usage of Pumpkin) থাকে ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে৷ আবার বাদ্যযন্ত্রও তৈরি করা হয় এই কুমড়ো দিয়েই৷
এটি একপ্রকারের লতানো গাছ, এর ফল গোলাকার, ডিম্বাকার, বিভিন্ন আকৃতির হয়৷ এর ফুলও খাওয়া হয়৷ কুমড়ো খেতে অনেকেই পছন্দ করেন এবং এটি অর্থকরীও৷ আর এই সবজির চাষ কিন্তু বাড়ির ছাদেই সম্ভব৷ কম সংখ্যক কুমড়োর প্রয়োজন হলে নিজেই চাষ করে ফেলতে পারেন৷ তবে কীভাবে তা চাষ করবেন তা জানার আগে একটু জেনে নেওয়া যাক, কেন এটি চাষ করব, অর্থাৎ আমাদের শরীরের জন্য (Health Benefits of Pumpkin) এটি কতটা প্রয়োজনীয়৷
কুমড়ো শরীরে রোগ প্রতিরোধ (Immune System) ক্ষমতা বৃদ্ধি করে৷ সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা লাগার হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে৷ এছাড়া হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ প্রতিরোধেও সাহায্য করে৷ পাশাপাশি কুমড়ো উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহয়তা করে এবং সেই সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়৷ এক কথায় আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে কুমড়োর ভূমিকা অনস্বীকার্য৷
এবার দেখে নেওয়া যাক এর চাষ পদ্ধতি (Home Farming)৷ পলিব্যাগে কুমড়োর চারা প্রথমে তৈরি করে নিতে হবে৷ মিষ্টি কুমড়োর বীজ প্রথমে ১২ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে৷ অন্যদিকে ৬:৪ অনুপাতে দোআঁশ মাটির সঙ্গে গোবর-ছাই মিশিয়ে নিয়ে বীজতলা তৈরি করে নিতে হবে৷ এবার চার থেকে পাঁচটি কুমড়ো বীজ এতে বপন করে ওপর থেকে পাতাল সুতির কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং রোজ একটু একটু করে জল দিতে হবে৷ কয়েক দিন পরেই এর থেকে চারা বেরিয়ে আসবে৷ যা দু সপ্তাহ পর টবে রোপনের জন্য উপযুক্ত হয়ে যাবে৷ যে চারাগুলি অপেক্ষাকৃত শক্তপোক্ত সেগুলি তুলি টবে রোপন করতে হবে৷
বড় সাইজের টব বা অর্ধেক ড্রামে ১ থেকে ২টি চারা রোপন করুন৷ এটি লতানো গাছ তাই চারাকে সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য খুঁটি প্রয়োজন৷ মাচা করতে পারলে ফলন আরও ভালো হবে৷ টবের মাটিও উপরোক্ত অনুপাতে তৈরি করে নিতে হবে৷ এতে ৫০ গ্রাম ইউরিয়া সারা দেওয়া যেতে পারে৷ কয়েকদিন এভাবে রেখে মাঝেমাঝেই মাটি খুঁচিয়ে তা নরম করে দিতে হবে৷ তারপর চারাটি বসাতে হবে৷ টবের নিচে অবশ্যই ছিদ্র করে দিতে হবে যাতে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যায়৷ আলো-বাতাস-জল এই তিনটি জিনিস যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে গাছটি পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ সেই সঙ্গে গাছের গোড়ার চারপাশ থেকে আগাছাগুলি সাবধানে পরিষ্কার করে দিতে হবে নিয়মিত৷ কুমড়ো গাছে বাড়িতে তৈরি জৈব সার দিতে পারেন৷ যেমন, তরকারির খোসা, পাখির বিষ্ঠা, কাঠ কয়লা ছাই প্রভৃতি৷
কুমড়োর চারা রোপনের তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়৷ কুমড়োতে হলদে ভাব এলে তা সংগ্রহ করা যেতে পারে৷
মনে রাখতে হবে, কুমড়ো গাছে কিন্তু মাছি পোকার উপদ্রব দেখা যায়৷ এই পোকা দেখা মাত্রই মেরে ফেলতে হবে অথবা পোকামাকড় ধরার ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে৷ অথবা নিম তেল, সাবান গোলা জল স্প্রে করা যেতে পারে৷
বর্ষা চ্যাটার্জি
Share your comments