জলবায়ুর পরিবর্তনে সমগ্র বিশ্বের পরিবেশ আজ বিপর্যস্ত। এই কারণে পরিবেশ সম্পর্কিত সমস্যাগুলি প্রায় সকলেরই দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনীয় দু’মুঠো খাবারের জন্য সমগ্র বিশ্বে পরিবেশবান্ধব কৃষি এখন সময়ের জ্বলন্ত একটি ক্ষেত্র। আর এই পরিবেশবান্ধব কৃষি কার্যক্রমের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হল জৈব কৃষি। জৈব কৃষি হল এমন একটি উৎপাদন ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে বাস্তুবিদ্যার বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও প্রাকৃতিক জৈবিক প্রক্রিয়া চর্চার আধুনিক বিজ্ঞান ও সনাতন জ্ঞানের মধ্যে সুন্দর একটি যোগসূত্র স্থাপিত হয়। সংহিতা মতে, জৈব কৃষি একটি সার্বিক উৎপাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, যা জৈব বৈচিত্র্য, জৈবিক চক্র এবং মাটির জৈবিক কার্যকলাপ সহ কৃষি বাস্তু শাস্ত্র বৃদ্ধি করে। আন্তর্জাতিক জৈব কৃষি আন্দোলন ফেডারেশন (IFOAM)- এর মতে জৈব কৃষি একটি কৃষি ব্যবস্থা, যা পরিবেশগত ভাবে, সামাজিকভাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে খাদ্য, তন্তু, কাঠ ইত্যাদি উৎপাদনকে উন্নীত করে। ইউনাইটেড স্টেট্স কৃষি দপ্তর (USDA) আবার জৈব কৃষিকে সংজ্ঞায়িত করেছে এভাবে – একটি পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা, যা জিব বৈচিত্র্য, জৈবিক চক্র এবং মাটির জৈবিক কার্যকলাপ বাড়ায়।
আধুনিক কৃষি ব্যবস্থায় উৎপাদন বেড়েছে অথচ প্রতিদিন ক্রমাগত মাটির উর্বরতা ও উৎপাদিকা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। রাসায়নিক সার, কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক –এর বহুল ব্যবহার ছাড়া উন্নতমানের ফলন পাওয়া সম্ভব নয়, চাষিদের এই বদ্ধমূল ধারণা এবং সময়ের অগ্রগতি, এই দু’য়ের কারণে এগুলির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চমাত্রায় এই রাসায়নিকগুলির লাগামছাড়া ব্যবহারের ফলে মাটি ও কৃষি পণ্যের উপর তার কুপ্রভাব পড়েছে। সাথে সাথে পরিবেশ ও জৈব বৈচিত্র্যের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। দশ হাজার বছরের কৃষিতে ন’হাজার ন’শো বছরে মাটির জৈব পদার্থ ৫ – ৩.৫ শতাংশে নেমে এসেছিল। গত ১০০ বছরে তা আরো হ্রাসপ্রাপ্ত হয়ে ০.৫ – ১ শতাংশে নেমে এসেছে বর্তমান কৃষি ব্যবস্থায়। এ কারণে, মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা ঠিক রাখতে, রাসায়নিকগুলির বহুল ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হওয়া রোধ করতে, পৃথিবীর বুকে নিরাপদ জীবন-যাপন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও মাটির গুণাগুণ বজায় রাখার জন্যে জৈব কৃষি ব্যবস্থার একান্ত প্রয়োজন। সর্বোপরি, আমাদের নির্মল পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বাঁচার জন্যে পরিবেশবান্ধব কৃষি আবশ্যকীয়ভাবে দরকার। আর পরিবেশবান্ধব কৃষির বাস্তবায়ন করতে হলে জৈব কৃষির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
নিম্নে ঘরোয়া পদ্ধতিতে খুব সহজে প্রস্তুত করা যায়, এমন কিছু জৈব সার, বৃদ্ধিবর্ধক ও কীটনাশক তৈরীর পদ্ধতি বর্ণনা করা হল। এই জৈব উপাচারসমূহ, রাসায়নিক কৃষি বিষগুলির খুব ভালো বিকল্প রূপে কাজ করে এবং সবচেয়ে বড় কথা, এগুলি পরিবেশবান্ধবও বটে।
১) জিবাম্রুত – একটি ব্যারেলে ১০০ লিটার জলের মধ্যে ১০ কেজি টাটকা গোবর ও ১০ লিটার গোমূত্র মিশিয়ে একটি কাষ্ঠের ডণ্ডের মাধ্যমে মিশ্রণটি ভালোভাবে ঘেঁটে দিতে হবে। এরপর এই মিশ্রণে দু’ কেজি ঝোলা গুড় ও দু’ কেজি ছোলা অথবা অন্য কোন ডালের গুঁড়ো মিশিয়ে সমগ্র মিশ্রণটি ঘেঁটে দিতে হবে। জারিত হওয়ার জন্য মিশ্রণটি ৫ - ৭ দিন রেখে দিতে হবে ও প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ - ৪ বার করে নাড়াতে হবে। মিশ্রণটি ৩ বার প্রয়োগ করা যায়, যথাঃ প্রথমবার বীজ বোনার আগে, দ্বিতীয়বার বীজ বোনার ২০ দিন পর ও তৃতীয়বার বীজ বোনার ৪৫ দিন পর।
২) বীজামৃত - একটি ব্যারেলে ৫ কেজি গোবর, ৫ লিটার গোমূত্র, ১ কেজি গরুর দুধ, ২৫০ গ্রাম চুন ও ১০০ লিটার জল মিশিয়ে ভালো করে ঘেঁটে সারারাত রেখে দিতে হবে। পরেরদিন সকালে মিশ্রণটি বীজের উপর ছড়িয়ে শুকিয়ে নিয়ে বুনলে বীজের অঙ্কুরোদগম বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ও বীজবাহিত রোগগুলির হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
৩) পঞ্চগব্য – ৪ কেজি তরল গোবর, ১ কেজি টাটকা গোবর, ৩ লিটার গোমূত্র, ২ লিটার গরুর দুধ, ২ কেজি দই ও ১ কেজি দেশী গরুর ঘি ভালোভাবে মিশিয়ে একসাথে জারিত হওয়ার জন্য ৭ দিন রেখে দিতে হবে। জারিত হয়ে গেলে ১০০ লিটার জলের সাথে ৩ লিটার পঞ্চগব্য মিশিয়ে মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। এক একর জমিতে প্রয়োগ করার জন্য ২০ লিটার পঞ্চগব্য প্রয়োজন। বীজ শোধনের জন্য এটি ব্যবহার করলে পঞ্চগব্য দিয়ে বীজ মাখিয়ে ২০ মিনিট রেখে তারপর বীজ বুনতে হবে।
৪) পঞ্চপাতন – মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকলে ফসলের ফলনও ভালো হয়, তার সঙ্গে উৎপাদিত ফসলের রোগপোকার আক্রমণও কম হয়। এক্ষেত্রে পঞ্চপাতন পদ্ধতিটি বেশ কার্যকর। নিমপাতা ৫০০ গ্রাম, আকন্দ পাতা ৫০০ গ্রাম, ভেরনা (রেড়ি) পাতা ৫০০ গ্রাম এবং অড়হর/ভ্যাট (ঘেঁটু) পাতা ৫০০ গ্রাম একত্রে কোন বালতিতে ৫ লিটার জলের সঙ্গে মেশাতে হবে। এরপর পাত্রে ১ লিটার গোচনা মিশিয়ে ৭ দিন মুখবন্ধ অবস্থায় রাখতে হবে। ৭ দিন পর ছেঁকে নিয়ে ওই দ্রবণ ১০ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে শাক-সব্জীর পোকামাকড় দমন করতে ১৫ দিন ব্যবধানে স্প্রে করতে হবে।
৫) ব্রহ্মাস্ত্র – ৩ কেজি নিম পাতা থেঁতো করে বা বেটে নিয়ে ১০ লিটার গোমূত্রের সাথে মেশাতে হবে। ২ কেজি আতা পাতা, ২ কেজি পেঁপে পাতা, ২ কেজি ডালিম/বেদানা পাতা, ২ কেজি পেয়ারা পাতা আলাদা আলাদাভাবে থেঁতো করে বা বেটে মেশাতে হবে। এবারে বর্ণিত মিশ্রণ দুটি একসাথে মিশিয়ে সমগ্র মিশ্রণটি আগুনে খেপে খেপে ৫ বার ফোটাতে হবে, যতক্ষণ না মিশ্রণের পরিমাণ অর্ধেক হয়। ফোটানো হয়ে গেলে মিশ্রণটি ঠাণ্ডা করে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেওয়ার পর নিংড়ে ছেঁকে নিয়ে প্রাপ্ত নির্যাস কাঁচ বা প্লাস্টিক বোতলে রাখতে হবে। নির্যাসটি ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। প্রতি একর জমির জন্যে ১০০ লিটার জলে ২-২.৫ লিটার নির্যাস ব্যবহার করলে এটি চোষি পোকা (Sucking Pests), ফল ছিদ্রকারী পোকা (Fruit Borer) ও শুঁটি ছিদ্রকারী পোকা (Pod Borer) নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
৬) আগ্নেয়াস্ত্র – ১ কেজি কলমি পাতা, ৫০০ গ্রাম পাকা/ঝাল লঙ্কা, ৫০০ গ্রাম রসুন, ৫ কেজি নিম পাতা আলাদা আলাদা থেঁতো করে বা বেটে নিয়ে একসাথে মেশানোর পর এর সাথে ১০ লিটার গোমূত্র মেশাতে হবে। সমগ্র মিশ্রণটি আগুনে খেপে খেপে ৫ বার ফোটাতে হবে, যতক্ষণ না মিশ্রণের পরিমাণ অর্ধেক হয়। ফোটানো হয়ে গেলে মিশ্রণটি ঠাণ্ডা করে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেওয়ার পর নিংড়ে ছেঁকে নিয়ে প্রাপ্ত নির্যাস কাঁচ বা প্লাস্টিক বোতলে রাখতে হবে। প্রতি একর জমির জন্য ১০০ লিটার জলে ২-৩ লিটার নির্যাস ব্যবহার করতে হবে। আগ্নেয়াস্ত্র পাতা মোড়ানো পোকা (Leaf Roller), কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা (Stem Borer), ফল ছিদ্রকারী পোকা (Fruit Borer) ও শুঁটি ছিদ্রকারী পোকা (Pod Borer) নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী।
৭) সঞ্জীবক – ১০-২০ কেজি গোবর, ১০ লিটার গোমূত্র, ৫০ গ্রাম ঝোলা গুড়, ৩০ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ৫০ লিটারের একটি ড্রামে মুখবন্ধ করে রাখতে হবে। মিশ্রণটি জারিত হওয়ার জন্য এই অবস্থায় ১০ দিন রেখে দিতে হবে। ১০ দিন পর মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে, মিশ্রণটির সাথে ২০ গুণ জল মিশিয়ে সমগ্র মিশ্রণটি মাটির উপর স্প্রে করা যাবে, অথবা সেচের জলের সাথে প্রয়োগ করা যাবে। সঞ্জীবক মাটিকে অণুজীব সমৃদ্ধ করার জন্যে ও শস্য অবশেষের পচনে সাহায্য করে।
৮) অমৃত জল/অমৃত পানি – একটি মাটির পাত্রে ১০ লিটার জল নিয়ে তার সাথে ২ কেজি টাটকা গোবর ও ১ লিটার গোমূত্র মিশিয়ে ভালো করে নাড়তে হবে। এরপর এর মধ্যে ১০০-২০০ গ্রাম গুড় নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে মিশ্রণটি আবার ঘেঁটে দিতে হবে। এরপর যে কোন পাকা ও মিষ্টি ফল (২০০ গ্রাম) মিশ্রণটিতে যোগ করে সেটিকে ভালো করে মিশিয়ে মাটির পাত্রটি ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। ৮ ঘণ্টা অন্তর অন্তর একটি বাঁশের কঞ্চি দিয়ে এটিকে ভালোভাবে নেড়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি এভাবে ২৪ ঘণ্টা রাখতে হবে এবং তারপর থেকে ১০০ মিলি/লিটার জলে মিশিয়ে মাঠে প্রয়োগ করতে হবে। এটি গাছের ফুল ঝরা রোধ করে ও গাছে আনুখাদ্যের (Micronutrient) যোগান দেয়।
৯) একটি জারে ১০-১৫ টি লেবুর রসের মধ্যে ৫ টি ডিম ছেড়ে দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে, যাতে লেবুর রসের মধ্যে ডিমগুলি নিমজ্জিত হয়। এবার জারের মুখটি বন্ধ করে ১০ দিন রেখে দেবার পর ডিমগুলি ফাটিয়ে ভালোভাবে ঘেঁটে নিয়ে প্রাপ্ত মিশ্রণের সমপরিমাণ গুড়ের সিরাপের সাথে মেশাতে হবে এবং আরও ১০ দিন রেখে দিতে হবে। এরপর মিশ্রণটি ছেঁকে নিতে হবে। এই নির্যাস উদ্ভিদ বৃদ্ধি সহায়ক অ্যামাইনো অ্যাসিড-এর গুরুত্বপূর্ণ উৎস। প্রতি লিটার জলের সাথে ২-৩ মিলি. নির্যাস মিশিয়ে ফসল ক্ষেতে স্প্রে করলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরন ত্বরান্বিত হয়।
১০) ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে। এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
১১) বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা (Leaf Eating Caterpillar) ও জাব পোকা (Aphids) নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
১২) কুমড়ো ও কুমড়ো গোত্রীয় ফসলের কাচপোকা (Red Pumpkin Beetle) ও বাঘা পোকা (Epilachna Beetle) নিয়ন্ত্রণের জন্য ১ কেজি তাজা গোবর, ১০ লিটার জলের সাথে ভালোভাবে গুলে একটি চটের বস্তার সাহায্যে ছেঁকে নিতে হবে। প্রাপ্ত মিশ্রণের সাথে ৫ লিটার জল মিশিয়ে পুনরায় ছেঁকে নিতে হবে ও আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
১৩) অল্টারনেরিয়া, সারকোস্পোরা, কলিটোট্রাইকাম, কারভুলেরিয়া, হেলমিনথোস্পোরিয়াম জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য ১ কেজি ডাঁটা পাতা (Amanranthus) কুচিয়ে নিয়ে ভালো ভাবে থেঁতো করে ৩ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে ও আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
১৪) ধানের বাদামী শোষক পোকা এবং অন্যান্য ফসলের শোষক পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ১ কেজি কালো কচুর পাতা কুচি করে কেটে নিয়ে ৫ লিটার জলের মধ্যে ৩০ মিনিট সেদ্ধ করে নিয়ে মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
১৫) রস চুষে খায় এমন ধরণের পোকা এবং দয়ে পোকা (Mealy Bug) নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫ কেজি নিম পাতা পিষে/বেটে ৫ লিটার গোমূত্র ও ২ কেজি গোবরের সাথে মিশিয়ে একটি পাত্রে মুখ ঢেকে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে জারিত হওয়ার জন্যে। এই সময় মিশ্রণটি মাঝে মাঝে ঘেঁটে দিতে হবে। এরপর মিশ্রণটি কচলে ছেঁকে নিয়ে ১০০ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।
জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়। জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ। দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই সকলে মিলে জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
প্রবন্ধ লেখক - শুভ্রজ্যোতি চ্যাটার্জ্জী
সহ লেখক - দেবমালা মুখার্জ্জী, শান্তনু লায়েক (গবেষক) এবং পার্থ চৌধুরী (সহযোগী অধ্যাপক)
Share your comments