পশ্চিমবঙ্গে পেঁপে খুবই জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এখানে পেঁপে কাঁচা সবজি হিসাবে চাষ হয়। পেঁপের কতগুলো বৈশিষ্ট রয়েছে- প্রথমত এটি স্বল্প মেয়াদী, দ্বিতীয়ত কেবল ফলই নয় সবজি হিসেবেও এর ব্যপক চাহিদা রয়েছে, তৃতীয়ত পেঁপে অত্যান্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ঔষধি গুণ সম্পন্ন। কাঁচা পেঁপেতে পেপেইন নামের উৎসেচক আছে যা আমাদের খাবার হজম করতে সহায়তা করে।
রেড লেডি হাইব্রিড পেঁপে জাতের বৈশিষ্ট্যঃ (Characteristics of Red Lady Hybrid Papaya variety) -
এটি তাইওয়ানের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির পেঁপে। রেডলেডি জাতের প্রত্যেকটি গাছে পেঁপে ধরে । রেডলেডি জাতের পেঁপে গাছ সর্বোচ্চ ১০’ ফিট হয়। গাছের উচ্চতা ৬০-৮০ সেঃ মিঃ হলে ফল ধরা শুরু হয়। প্রতিটি গাছে ৫০-১২০ টি পর্যন্ত ফল ধরে, ৫-৬ মাসের মধ্য ফুল আসে এবং প্রথম ফল পাওয়া যায় ৭-৯ মাসের মধ্যে। এই জাতের পেঁপে গুলি বেশ বড়, ফলের রং লাল-সবুজ, এক একটি ফলের ওজন ১.৫ থেকে ২ কেজ, মাংস বেশ পুরু, গাঢ় লাল, স্বাদে বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধযুক্ত। কাঁচা ও পাকা উভয়ভাবে বাজারজাত করা যায়। পাকা অবস্থায় সহজে নষ্ট হয় না বলেই, দূর দুরান্তে বাজারজাত করা যায়। এই জাতের পেঁপের রিং স্পট ভাইরাস রোগ সহ্য ক্ষমতা আছে। এই জাতের গাছের জীবন কাল ২ বছরের বেশী।
চাষ পদ্ধতি (Cultivation Method)-
(১) বীজের হারঃ-
প্রতি গ্রামে বীজের সংখ্যা ৬০-৭০টি। হেক্টর প্রতি ৭০-১০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন। সে হিসেবে ৩০০০-৩২০০ চারা দিয়ে ১ হেক্টর জমিতে পেঁপে চারা লাগানো যায়।
(২)চারা তৈরিঃ-
বীজ থেকে বংশ বিস্তার করা যায়। বীজের প্যাকেট কেটে ২ ঘন্টা রোদে শুকানোর পর ২ ঘন্টা রোদে শুকানোর পর ঠান্ডা জায়গায় রেখে ঠান্ডা করে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা জলে ভেজানোর পর পলেথিন ব্যাগে চারা তৈরি করতে হবে। পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপনের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ৫X৬ সেঃ মিঃ আকারে ব্যাগে সম পরিমাণ বেলে দোয়াশ মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ ভর্তি করে, ব্যাগের তলায় ২-৩ টি ছিদ্র করতে হবে। তারপর এতে সদ্য সংগৃহীত বীজ হলে একটি এবং পুরাতন বীজ হলে ২টি বীজ বপন করতে হবে। ১টি ব্যাগে এক এর অধিক চারা রাখা উচিৎ নয়।
(৩) চারা রোপণ-
১.৫ থেকে ২ মাস বয়সের চারা রোপন করা হয়। ২ মিটার দূরে দূরে ৬০X৬০X৬০ সেঃ মিঃ আকারে গর্ত করে রোপনের ১৫ দিন পূর্বে গর্তের মাটির সার মিশাতে হবে। জমির জল নিষ্কাশনের জন্য ২ সারির মাঝখানে ৫০ সেঃ মিঃ নালা রাখতে হবে।
(৪) সারের পরিমানঃ-
প্রতি পেঁপে গাছে নিন্মরূপ সার ব্যবহার করতে হবে।
(৫) রোপনের সময়ঃ-
চারা লাগানোর পর নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস অন্তর প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুণ হবে। শেষ ফল সংরহের পূর্বেও সার প্রয়োগ করতে হবে।
(৬) অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ-
বাগান সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গাছের গোড়া থেকে আগাছা তুলে ফেলে দিতে হবে। গাছের গোড়া মাটি কোদাল দিয়ে হালকা করে দিতে হবে। গাছে অতিরিক্ত ফল ধরলে কিছু ফল পেরে নিয়ে হালকা করে দিলে, বাকি ফল গুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। পেঁপে গাছে বিভিন্ন হরমোন প্রয়োগ করে বেশ সুফল পাওয়া যায়।
(৭) ফল চয়ন -
পেঁপে গাছে সাধারণত ৫-৬ মাসের মধ্য ফুল আসে এবং প্রথম ফল পাওয়া যায় ৭-৯ মাসের মধ্যে। পুষ্ট হওয়ার সময় কোন কোন ফলে হলুদ রং ধারন করবে। পুষ্ট ফলে কিছু দিয়ে খোচা দিলে হালকা জলের মত তরল আঠা বের হবে। অপুষ্ট ফল থেকে দুধের মত ঘন আঠার মত হবে।
Image Source - Google
Related Link - সাশ্রয়ী মূল্যের মিনি ট্রাক্টর (Affordable Mini Tractors) – এই ট্রাক্টর ব্যবহারে কৃষিকাজে কৃষকের ব্যয় কম ও অধিক ফলন
বর্তমান সময়ে জল সংরক্ষণ (Importance of water conservation)-এর গুরুত্ব
Share your comments