বর্তমান সময়ে খণ্ডিত ফুল রূপে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ফুলগুলির মধ্যে একটি হল জারবেরা। বর্তমানে, ভারতবর্ষে সারা বছর জুড়ে শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ অঞ্চলেও এর চাহিদা এবং ব্যবহার উভয়ই ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ফুলের অসাধারণ বর্ণ, তুলনামূলক বৈচিত্র্য এবং অন্যান্য ফুলের তুলনায় এর দীর্ঘস্থায়িত্বের কারণে মানুষ এই ফুলটিকে বেশি পছন্দ করে। তবে, কৃষকেরা এই ফুলের চাষ করেন উচ্চ লাভের কারণে, চাষকৃত ফুল সংগ্রহ করার পর অন্য ফুলের তুলনায় এই ফুলের সতেজতা ও স্থায়িত্ব দীর্ঘকৃত হওয়ায় এই ফুল চাষে অধিক লাভ হয়। সম্প্রতি অনেক মানুষই তাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং বর্ণময় উত্সব উদযাপনের ক্ষেত্রে জারবেরা ফুল ব্যবহার করেন এবং এই ফুলের ব্যবহারের প্রতি তাদের গভীর আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। হাই-টেক জারবেরা চাষে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, যেমন প্রাথমিক বিনিয়োগ অনেক বেশি, প্রযুক্তিবিদ্যার শৃঙ্খল যথেষ্ট পরিমাণে সীমাবদ্ধ, নিয়মিত তদারকির প্রয়োজন হয় এবং সমস্ত স্থানীয় উত্সবগুলির জন্য বিপণনের প্রয়োজনীয় চাহিদা, উৎপাদনের প্রকৃত পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এই প্রযুক্তিটিকে ব্যবসা রূপে গ্রহণ করতে চাইলে, তা বাস্তবায়নের জন্য, ব্যবহারকারীদের প্রথমে বিভিন্ন উত্পাদন কেন্দ্র দেখে, সেই সম্পর্কে তাদের যথেষ্ট পরিমাণে জ্ঞান অবগত করতে হবে। প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিশদ তথ্যগুলি সংক্ষিপ্ত ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা এই ক্ষেত্রে কৃষকদের সহায়তা প্রদান করতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তিগুলি এমনভাবে বিকশিত হয়েছে, যে প্রায় সারা বছর ফুলের উৎপাদন সম্ভব।
পলিহাউসের অধীনে জন্মানো জারবেরিয়ার বিভিন্ন ধরণের বর্ণ-ভিত্তিক জাতসমূহ: (sub heading)শুভ্র বর্ণ : ব্যালেন্স, ডোনা টেলা, হলুদ বর্ণ : প্যারাডিসো, ব্রিলেন্স, ড্যানা ইলেন, ফ্রেডিকিং, নাদ্জা, ইউরেনাস, কমলা বর্ণ : গ্যালিয়্যাথ, মেরুন ক্লিমেন্টাইন, গোলাপী বর্ণ : রোজালিন, প্রি ইনটেনজ্, পিঙ্ক এলিগ্যান্স, ফ্লেমিংগো, ফ্রিডেইসি, টেরাকুইন, ভ্যালেন্টাইন, ইন্টেন্স, ব্রিক রেড বর্ণ : ওয়ালহালা এবং রক্তিম বর্ণ : জাফানা, স্ট্র্যানজা, ডাস্টি, ফ্রেডোরেলা, ভেস্তা, সাভানা, দ্বি-বর্ণ: শিমার ইত্যাদি।
প্রয়োজনীয় ক্ষেত : জারবেরা চাষের জন্য একটি সুসজ্জিত পলি হাউস ব্যবহার করা হয়, যেখানে সমস্ত যন্ত্র যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অধীনে স্থাপন করা হয় এবং উদ্ভিদের প্রয়োজনের ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই জাতীয় পলি হাউসের জন্য ড্রিপ এবং স্প্রিংকলার সেচ ব্যবস্থা থাকে, উচ্চ ফলনের জন্য ফার্টিগেশন এবং পিপিসি প্রয়োগ করতে হবে। এগুলি ছাড়াও আলো, তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফ্যান, ফগারস, গারনেটস, শেড নেট, পোকার প্রুফ নেট সহ প্রাকৃতিক বায়ুচলাচল করতে পারে ইত্যাদির মতো অন্যান্য সুবিধাগুলিও এতে যুক্ত রয়েছে। কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং সহজেই সমস্ত প্রযুক্তি পদ্ধতি সঠিকভাবে কাজ করার জন্য, সকল যন্ত্রপাতি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের পরে নিয়মিত চেক করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।
জলবায়ু : এই গাছটি খুবই সংবেদনশীল। জারবেরা চাষের জন্য হালকা তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার প্রয়োজন হয়। উদ্ভিদটি বেডে রোপণ করার সময় দিনের বেলায় ২২-২৫ ডিগ্রী এবং রাতে ১৮-২০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার প্রয়োজন। তবে এরপর উদ্ভিদটির বৃদ্ধি থেকে শুরু করে পরিণত স্তর অর্থাৎ ফুল পর্যন্ত সময়কালে যথাক্রমে দিনে ২০-২৫ ডিগ্রী এবং রাতের বেলায় ১২-১৬ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। শীতের মরসুমে খোলা আবহাওয়ায় এটি ভালভাবে বৃদ্ধি পায়, তবে অন্য মরশুমে বিশেষত গ্রীষ্মে এটির যত্ন নেওয়া উচিত। তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড -এর উপরে এবং ১২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড- এর নীচে হলে, এই পরিস্থিতিতে উদ্ভিদটির জীবন ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
পার্শ্ব বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা দিনের মধ্যে সকাল ৬ টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে এবং বাকি সময় বন্ধ রাখতে হবে। অর্থাৎ যখন বাইরের তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড -এর নীচে নেমে যায়, তখন পার্শ্ব বায়ুচলাচল বন্ধ করা উচিত, একইভাবে বাইরের তাপমাত্রা যখন ৩৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড -এর উপরে পৌঁছায়, তখন ফগার্স, ফ্যান এবং গারনেট প্রভৃতির প্রযুক্তিগুলি সকাল দশটা থেকে দুপুর দু’টা পর্যন্ত কার্যক্ষম পর্যায়ে রাখতে হবে। দিনে ৮০-৮৫ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতা উদ্ভিদটির বৃদ্ধির জন্য উপকারী। গ্রীষ্মের সময় অধিক তীব্রতা হ্রাস করার উদ্দেশ্যে পলিহাউসের অভ্যন্তরে অতিরিক্ত শেড (৩০-৩৫ % সবুজ শেড নেট) সরবরাহ করতে হবে। গ্রীষ্মের মাসগুলিতে, সকালের দিকে একদিন অন্তর হাতে করে বেডে জল দিতে হবে, এর ফলে উদ্ভিদের সতেজতা দীর্ঘক্ষণ বজায় থাকবে এবং পোকামাকড়ের সংখ্যাও হ্রাস পাবে। এছাড়া এই প্রক্রিয়ার ফলে পলিহাউসে উদ্ভিদগুলি গোড়া শুকিয়ে যাওয়া ও পচা থেকে রক্ষিত হবে।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
তথ্যসূত্র – ড. তাপস কুমার চৌধুরী
Share your comments