প্রায় দুই বছর ধরে চলতে থাকা করোনা অতিমারীর আবহে ক্ষতিগ্র্রস্থ সকলে। গোটা বিশ্ব জুড়ে নেমে আসা এই দুর্বিপাকে, চাকরি থেকে ব্যবসা, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, কৃষি থেকে শিল্প সব ক্ষেত্রই মুখোমুখি হয়েছে এক অনিশ্চয়তার। স্বাভাবিক ভাবেই কৃষি সংক্রান্ত কাজ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যও করোনা দুর্বিপাকে অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল। ফসলের দাম ঠিকঠাক না পেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বহু কৃষক। অনেক কৃষক চলে গেছেন দেনার দায়ে। বিশ্বের প্ৰত্যেকটা দেশের কৃষি সমাজে হাহাকার বিগত করোনার বছরটির ছিল সবথেকে দুঃখের বিষয়। তবে ফসল উৎপাদনে গোটা বিশ্ব অনেকটা নিচে নেমে গেলেও, ভারতে হয়েছে তার ঠিক উল্টো। কৃষকদের অভাবের মধ্যেও অত্যন্ত পরিশ্রম দেশের ফসল উৎপাদনকে এক অসাধারণ জায়গায় নিয়ে গেছে।
কৃষি প্রযুক্তির উন্নতি হওয়ার ফলে, কয়েক বছর ধরেই ভারতে বিপুল পরিমাণে ফসল উৎপাদন হচ্ছিল, কিন্তু চলতি অর্থবছরে যেন এই ফসল উৎপাদনের জায়গার শ্রীবৃদ্ধি দ্বিগুণ হয়ে উঠল। ভারতের কৃষি সমাজ বরাবরই দেশের মানুষকে আশার আলো দেখিয়ে এসেছে। এই বছরটাতেও তার অনথ্যা ঘটেনি। অতিমারীর এই কঠোর সময়েও ফসল উৎপাদনে এক স্বর্ণযুগের সূচনা ঘটিয়েছে দেশের কৃষকরা।
বাগানজাত ফসল উৎপাদনে শ্রী বৃদ্ধি লাভ ( Horticulture Production)
সম্প্রতি ভারত সরকারের কৃষি মন্ত্রক ২০২০-২১ অর্থ বর্ষের দেশের বাগানজাত ফসল উৎপাদনের হিসাব প্রকাশ করেছে। যাতে দেখা গেছে, অন্য বছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থ বৎসরে দেশে সবথেকে বেশি বাগান জাত ফসলের উৎপাদন হয়েছে। ৩২৯.৮৬ মিলিয়ন টনের এই বাগানজাত ফসল উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ২.৯৩% বেশি বলে জানা গেছে। সবজি, মশলা, ওষধি ফসল এবং সুগন্ধি ফসলের উৎপাদনের পরিমাণও বেড়েছে বলে জানা গেছে। ফুলের চাষ ও উৎপাদন এই অতিমারীকালে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফুল উৎপাদনের পরিমাণ গত বারের তুলনায় ৭.১৭% কমে এসেছে।
ফলের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের অর্থবর্ষে যেখানে ফলের উৎপাদন হয়েছিল ১০২.০৮ মিলিয়ন টন, সেখানে এই বছরে ফলের উৎপাদন ১০২.৭৬ মিলিয়ন টন। স্বাভাবিক ভাবেই আগের বছরের থেকে এই বছর ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। সবজির উৎপাদন গত বছরের তুলনায় এই বছর ৪.৪২% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে সবজির উৎপাদন ছিল ১৮৮.২৮ মিলিয়ন টন, সেই তুলনায় এই বছরে উৎপাদন হয়েছে ১৯৬.২৭ মিলিয়ন টন। পেঁয়াজের উৎপাদন গত বছরে ছিল ২৬.০৯মিলিয়ন টন, এই বছরে তা হয়েছে ২৬.৯২ মিলিয়ন টন।
সবথেকে বড় বিষয় দেশে আলু উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ১০.৫৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর এই উৎপাদন ছিল ৪৮.৫৬ মিলিয়ন টন, এই বছরে আলুর উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৫৩.৬৯ মিলিয়ন টন। টমেটোর উৎপাদন গতবছরে যেখানে ছিল ২০.৫৫ মিলিয়ন টন, এই বছরে সেই উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২১.০০ মিলিয়ন টন। সরকারি সূত্রে প্রাপ্ত এই হিসাব অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মশলাজাত ফসল উৎপাদনের বৃদ্ধিও এই বছরে আশানুরূপ। গত বছর যেখানে মশলার উৎপাদন ছিল ১০.১৪ মিলিয়ন টন, সেখানে এই বছর মশলার উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ১০.৫৪ মিলিয়ন টন।
আরও পড়ুন: Hilsa Fish Farming: ইলিশ মাছ চাষ পদ্ধতির কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য
প্রায় ৩.৯৩% এই উৎপাদন বৃদ্ধি চাষিদের অত্যন্ত পরিশ্রমের ফল, সে বিষয়ে কোনও দ্বিধা নেই। ওষধি ফসলের উৎপাদনও গত বছরের তুলনায় ৬.১১% বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা অতিমারীরর জন্য ফুল উৎপাদন ভালো মতন ধাক্কা খেলেও, খাদ্য ফসল উৎপাদন কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হয়নি।
দেশের কৃষক সমাজের এই অনন্য নজিরকে প্রত্যেক ভারতবাসীর সম্মান জানানো অবশ্য কর্তব্য। অতিমারীর সময়েও যাতে দেশবাসীর খাদ্য সমস্যা না হয়, তার জন্য রাত দিন এক করে এই কৃষকরা ফসল উৎপাদন করেছেন। অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা-- এই চারটি অত্যাবশকীয় অধিকারের প্রথমটি যাতে দেশবাসীর জন্য সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করতে কোনও রকমের কার্পণ্য করেননি দেশের চাষি ভাইয়েরা।
আরও পড়ুন: Increasing Clean Milk production: গরুর খাঁটি দুধ উৎপাদন বাড়ানোর সহজ কিছু পদ্ধতি
Share your comments