নারকেল, শুধুমাত্র ফল হিসাবে নয় এর সমস্ত অংশই বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়।, তা সে পাতাই হোক বা ফলের খোল, ছিবড়েই হোক বা মূল গাছ - সমস্তটাই ব্যবহার্য, তাই এটিকে কল্পবৃক্ষ বা কল্পতরু হিসাবেও অভিহিত করা হয়। আর যে সব রাজ্যে কম-বেশি নারকেল চাষ হয়ে থাকে তার মধ্যে রয়েছে আন্দামান, লাক্ষাদ্বীপ, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ইত্যাদি। গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল হওয়ার দরুণ আমাদের রাজ্যে বাণিজ্যিকভাবে নারকেল চাষ যথেষ্ট লাভজনক।
স্থায়ী বাগানে নারকেল চাষ (Coconut Cultivation) :
মাটি:-
মূলত বেলে, দোয়াঁশ বা উপকূলবর্তী বেলে মাটি বা নদীর সন্নিহিত এলাকার মাটি এই ফসল চাষের জন্য উপযুক্ত।
জাত:- গাছের উচ্চতার তারতম্যের উপর ভিত্তি করে নারকেলের জাতকে দুভাগে ভাগ করা হয়-
লম্বা জাত: কল্পমিত্র, কল্যাণী নারকেল,ইস্ট কোস্ট টল, দেশি লম্বা, হাজারি।
বেঁটে জাত: কেরালা বেঁটে, হলুদ বেঁটে, মালয়লাম হলুদ বেঁটে।
সংকর জাত: চন্দ্রকল্প, কেরাচন্দ্র, কেরাশঙ্করা
বীজ সংগ্রহ ও বংশবিস্তার:-
নারকেলের বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হয়। ২৫-৩০ বছর বয়সি উচ্চফলনশীল গাছ বছরে ৮০টি ফল দেয়। সুস্থ, নীরোগ ও কমপক্ষে ৩৫টি সবুজ পাতাযুক্ত মা-গাছ থেকে বীজ নেওয়া হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারি-মে মাসে উৎপাদিত ১১-১২ মাস বয়সের ও ১২০০ গ্রাম ওজনের ফল বীজ হিসাবে আদর্শ। বর্ষার পরেই সারি থেকে সারি ১ ফুট দূরত্বে ও ১৫ ইঞ্চি দূরত্বে প্রতিটি বীজ লাগাতে হবে। বীজতলা সাধারণত লম্বায় ২৫ ফুট ও চওড়ায় ৫ ফুট হয়ে থাকে। বর্ষায় জল জমার সম্ভাবনা থাকলে বীজতলাগুলি ৬-১২ ইঞ্চি উঁচু করে দেওয়া যেতে পারে। বীজতলায় ২-৩ দিন অন্তর হালকা সেচ দিতে হবে এবং যতটা সম্ভব আগাছামুক্ত রাখতে হবে। ৯-১২ মাসের মধ্যে বীজ থেকে রোপণযোগ্য উপযুক্ত চারা তৈরি হয়ে যায়।
চারা নির্বাচন:-
মূলজমিতে রোপণের জন্য বাছাই করা চারা সতেজ, নীরোগ, লম্বা জাতের ক্ষেত্রে গোড়ার পরিধি ১০ সেমি ও বেঁটে জাতের ক্ষেত্রে ১২ সেমি হওয়া প্রয়োজন। চারাতে কম করে ৬-৮টি পাতা থাকা প্রয়োজন, যার ২-৩টি পাতা সম্পূর্ণ খুলে থাকা আবশ্যক।
আরও পড়ুন - Climate Smart Agriculture - এই মরসুমে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ ও তার পরিচর্যা পদ্ধতি
মূল জমি:-
খোলামেলা সারাদিন রোদ থাকা ও জল নিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত জমি চারা রোপণের জন্য বেছে নিতে হবে। রোপণের একমাস আগে বর্গাকার পদ্ধতিতে গর্ত খোঁড়া হয়। ১মি দৈর্ঘ্য × ১মি চওড়া × ১মি গভীর মাপের গর্ত করে দু-সপ্তাহ রোদ খাইয়ে গর্তের উপরের মাটির সঙ্গে ২০ কেজি গোবর সার, ৫০০ গ্রা নিমখোল, ২৫০ গ্রা হাড় গুঁড়ো ও ২৫ গ্রা সোহাগা মিশিয়ে তা গর্তের নীচের অংশ ভরাট করতে হবে এবং নীচের মাটি দিয়ে গর্তের উপরে অংশ ভরাট করতে হবে। একটি উদ্ভিদ থেকে অপর উদ্ভিদ ও এক সারি থেকে অপর সারিতে ৭.৫ সেমি দূরত্বে গাছ রোপন করা উচিত। কম দূরত্বে চারা রোপণ করলে গাছ বেঁকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সার প্রয়োগ (Fertilizer application)-
সাধারণত বীজ লাগানোর ৬-৭ বছরের মধ্যে ফলন শুরু হয়। ভালো ফলন পেতে প্রতিটি ফলন্ত গাছে বছরে দু'বার বর্ষার আগে ও পরে প্রতি বারে ৪০ কেজি জৈব সার, ৫০০-৬০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৭০০-৮০০ গ্রাম সিঙ্গেল সুপার ফসফেট ও ৮০০-৯০০ গ্রাম মিউরিয়েট অফ পটাশ দিতে হবে। প্রতিটি ফলন্ত গাছে প্রথম বছরের দ্বিগুণ সার দ্বিতীয় বছরে ও তিনগুণ সার তৃতীয় বছরে দিতে হবে। এ ভাবে প্রথম ৫ বছরে সারের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫ বছর পর আর সারের পরিমাণ না বাড়িয়ে ঐ মাত্রাতেই প্রতি বছর বর্ষার আগে ও পরে সার দিতে হবে। বয়স অনুযায়ী গাছের চারপাশে গোড়া থেকে ১-২ মি. দূরত্বে ৩০সেমি গভীর, ৪৫সেমি চওড়া নালা কেটে বয়স অনুযায়ী সার প্রয়োগ করা হয় ও প্রয়োজনে হালকা সেচ প্রয়োগ করা হয়।
নারকেল চাষে রোগ ও কীট নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (Disease & Pest management) -
পরিচর্যা:-
অনুসেচ ব্যবস্থাপনায় বিন্দু সেচ পদ্ধতিতে সেচ প্রদান অধিক লাভজনক। আচ্ছাদন দিয়ে গাছের গোড়ার আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। গাছের কাঁচা পাতা অযথা কাটা চলবেনা, শুধুমাত্র শুকনো পাতা-কাঁদি কাটা যেতে পারে। রোপণের প্রথম দুবছর গাছে ছায়া প্রদান ও সুরক্ষিত রাখতে বেড়া দেওয়া আবশ্যক।
আরও পড়ুন - Greater yam - আধুনিক পদ্ধতিতে গাছ আলু চাষ করে দ্বিগুণ মুনাফা অর্জন করুন
Share your comments