এই 20টি ব্যবস্থা পোল্ট্রি খামারকে বার্ড ফ্লু থেকে নিরাপদ রাখবে! ভার্মি কম্পোস্ট ইউনিটের জন্য ৫০% পর্যন্ত ভর্তুকি পাওয়া যাবে, শীঘ্রই আবেদন করুন এই হাইব্রিড জাতের টমেটো 900 কুইন্টাল প্রতি হেক্টর ফলন দেবে দুধের সঠিক সময় বেছে নিলে উৎপাদন বাড়বে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
Updated on: 10 June, 2020 4:28 PM IST

#বর্ষা ২০২০, আগত খারিফ মরসুম আর এই মরসুমের প্রধান ফসলই হল ধান। কৃষি ক্ষেত্রে ধান চাষের পদ্ধতি অনেকটাই অঞ্চল ভিত্তিক। বিভিন্ন জায়গার কৃষকরা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু সরকারী কৃষি বিভাগ সহ নানা সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান যেমন ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইন্সটিটিউড প্রতিনিয়ত গবেষণা করে চলেছে প্রতিটি চাষের ক্ষেত্রে সঠিক এবং উন্নত পদ্ধতি উদ্ভাবন করার। এই প্রতিবেদনে আপনাদের সামনে তুলে ধরব সেই সমস্ত ব্যবস্থাপনা যে গুলি ধান চাষের ক্ষেত্রে জমিতে চারা প্রতিস্থাপনের আগে পর্যন্ত করা উচিৎ। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত তথ্য,

মাটির গঠনবিন্যাস: ধানের ফসলের জন্য বালুকাময় মাটি একেবারেই উপযুক্ত নয় তাই অনুগ্রহ করে প্রকৃত অবস্থা জানতে জমির মাটির পরীক্ষা করা উচিৎ।

মাটি অবস্থা: ভিন্ন উৎপাদনশীলতার হলেও প্রায় সব ধরনের মৃত্তিকাতে ধান চাষ করা হয়। তবে, ভাল জলের ধারণ ক্ষমতা, প্রচুর পরিমাণে কাদা এবং জৈব পদার্থ যুক্ত মাটি ধান চাষের জন্য আদর্শ বলে মনে করা হয়।

মাটির চিকিৎসা: অনুগ্রহ করে আপনার ক্ষেতের মাটির আম্লিকতা পরীক্ষা করে দেখুন,যদি আপনার জমির মাটির আম্লিকতা ৫ এর চেয়ে কম হয় বা ৮-এর থেকে বেশি হয়, তবে সরকারী উপদেশ অনুযায়ী মাটির সংশোধন করা উচিৎ। যদি মাটির আম্লিকতা উচ্চ হয় তবে সুপারিশকৃত পরিমাণ অনুযায়ী জিপ্সামের প্রয়োগ করা উচিৎ।

আদর্শ আবহাওয়া: প্রচুর জল সরবরাহ, উচ্চ আর্দ্রতা, দীর্ঘায়িত সূর্যকিরণ এবং ২০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা আপনার ধানের ফসলের জন্য উপযুক্ত।

বীজ বপনের সময়: আউশ ধান চাষের উপযুক্ত সময় মে-জুনের প্রাক খরিফ মৌসুম এবং আমন ধানের চাষের উপযুক্ত সময় জুন-জুলাইয়ের বর্ষা মৌসুমে।

বীজের গুণগতমান : নিবন্ধিত ব্যাপারী থেকে প্রত্যয়িত/পরীক্ষিত বীজ ক্রয় করা উচিৎ। বীজ ক্রয় করার সময়  এই সংক্রান্ত বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। দয়া করে বীজ কম্পোনি দ্বারা সরবরাহিত ধানের বপনের আগে DFU(ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা) পড়ুন। সার্টিফাইড বীজ ব্যাগে বীজ উৎপাদনকারী এবং বীজ কোম্পানী উভয় থেকে ট্যাগযুক্ত থাকতে হবে:

১) বীজের অঙ্কুরোদগমের শতকরা হার (৯০-৯৫%)

২) বীজের উৎপাদন তারিখ

৩) নিষ্ক্রিয় উপকরণ (অন্যান্য বীজ ইত্যাদি) এবং রোগ কীটপতঙ্গ থেকে মুক্ত।

কীট প্রতিরোধক ব্যবস্থাপনা (Pest management): স্টেম বোররের, লিফ ফোল্ডার, গাল মিডজ, বিপিএইচ এবং অন্যান্য পোকামাকড় কার্যকরী ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য দয়া করে বারবার একই কীটনাশক ব্যবহার করবেন না।

স্প্রেইং পরিকল্পনা: সব উল্লিখিত রাসায়নিক উচ্চমানের স্প্রেয়ারের জন্য, যেখানে স্বাভাবিক স্প্রে-এর পরিমাপ ৮০০-১০০০ লি/ হেক্টর।  স্প্রেয়ারের দক্ষতা অনুযায়ী  স্প্রের পরিমাপ পরিবর্তিত করা যেতে পারে। ফসলে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ কমানোর জন্য স্প্রে দ্রবনের নিয়ন্ত্রিত ব্যাবহার করা উচিত।

সারের ব্যবহার: দয়া করে অতিরিক্ত সার ব্যবহার করবেন না এটি কীটপতঙ্গ আক্রমণ বাড়ায়।

বীজের প্রাথমিক সংশোধন: বীজ বপন করার আগে লবণাক্ত জলে বীজের সংশোধন অপরিহার্য, দয়া করে ছোট এবং মাঝারি আকারের চালের বীজের জন্য ১০ লিটার জলের মধ্যে ১.৬৫ কেজি লবণ এবং বড় আকারের বীজের জন্য ১০ লিটার জলে ২.৫ কেজি লবণ দ্রবীভূত করা উচিত। জলে ভাসমান বীজ সরিয়ে ফেলুন এবং নিচে জমে থাকা অবশিষ্ট বীজগুলি সংগ্রহ করে, পরিস্কার জলে ৩-৪ বার ধুয়ে বপনের জন্য ব্যবহার করা উচিৎ। এভাবে ৩০-৪০ কেজি বীজ ১০ লিটার জলে সংশোধন করা উচিৎ।

লবণ জল সংশোধনের পরে দয়া করে সংশোধিত বীজের রাসায়নিক বা জৈবিক সংশোধন করা উচিৎ।

বীজের রাসায়নিক সংশোধন পদ্ধতি: বাছাই করা বীজ সাথে ২.৫ গ্রাম থিরাম (Thiram) 75% WS বা ২.৫ গ্রাম কার্বেন্ডেজিম (Carbendazim) 50% WP বা ২.৫ গ্রাম মানকজেব (Mancozeb) 75% WP প্রতি কেজি বীজের সাথে মিশ্রিত করা উচিত।

বীজের জৈবিক সংশোধন পদ্ধতি:  জৈব আগাছানাশকের ক্ষেত্রে বাছাই করা বীজ সাথে, ত্রিকোডার্মা ভাইরাড ৪ গ্রাম / লিটার জলে মিশিয়ে ব্যবহার করা উচিত।

বীজের পরিমাণ:

  • ছড়িয়ে বীজ বপন পদ্ধতির ক্ষেত্রে- ক্ষুদ্র বীজের জন্য ২৮-৩২ কেজি / একর, মাঝারি বীজের জন্য ৩২-৩৬ কেজি / একর এবং বড় বীজের জন্য ৩৮ কেজি / একর ব্যবহার করা উচিৎ।
  • ধানের সারিবদ্ধ বপন পদ্ধতির ক্ষেত্রে - ক্ষুদ্র বীজের জন্য ২৪-২৬ কেজি / একর, মাঝারি বীজের জন্য ২৬-২৮ কেজি / একর এবং বড় বীজের জন্য ২৮-৩০ কেজি / একর ব্যবহার করা উচিৎ।
  • বীজতলার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে - ক্ষুদ্র বীজের জন্য ১৪-১৬ কেজি / একর, মাঝারি বীজের জন্য ১৮-২০ কেজি / একর এবং বড় বীজের জন্য ২০-২৪ কেজি / একর ব্যবহার করা উচিৎ। যদি ধান চাষের জন্য সংকর বা হাইব্রিড বীজতলা প্রস্তুত করেন তবে ৬-৮ কেজি বীজ / একর ব্যবহার করা উচিৎ।

বীজতলার আকার: এক একর জমি চাষের জন্য বীজতলা ০.১ একর বা ৬ কাঠা হতে হবে। বীজতলা ৪ ফুট প্রশস্ত এবং প্রয়োজন অনুযায়ী দীর্ঘ হওয়া উচিত। বীজের অঙ্কুরোদগম সহজতর করার জন্য প্রতিটি বীজতলা ১ ফুট প্রস্থ এবং ৪ ইঞ্চি গভীরতার নালা দ্বারা ঘেরা উচিত।

বীজতলায় সারের প্রয়োগ: বীজতলা তৈরি করার সময় প্রতি 0.১ একরে বা ৫ কাটায় ১ টন গোবর সার বা কম্পোস্ট সার, ২ কেজি  নাইট্রোজেন, ২ কেজি ফসফেট এবং ২ কেজি পটাশ ব্যবহার করা উচিৎ।

বীজ বপন: দয়া করে সংশোধিত এবং অঙ্কুরিত বীজগুলি উপযুক্ত পরিমানে সুষমভাবে বীজতলার জমিতে ছড়িয়ে দিন। বীজতলায় ২৪ ঘন্টার জন্য জল জমিয়ে রাখা উচিত। বীজতলায় প্রতি ১ দিনের ব্যবধানে জলসেচ করা উচিৎ কিন্তু বীজতলায় জলের মাত্রা ২-৫ সেন্টিমিটার বেশি থাকা উচিত না।

বীজতলায় কীটনাশকের প্রয়োগ:  বীজতলা পর্যায়ে কীটনাশকের প্রয়োগ রোগ ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই যা সঠিক সময় গুরুত্বপূর্ণ  প্রতিরোধের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

স্ট্যেম বোরার বা মাজরা পোকা নিয়ন্ত্রন: স্টেম বোরার বা মাজরা পোকা  এবং অন্যান্য কীট নিয়ন্ত্রণের জন্য বপনের ১১-১২ দিন আগে বীজতলায় দয়া করে ৫ কেজি কার্বোফুরান ৩ জি (Carbofuran 3 G) বা ১.৫ কেজি  কার্টাপ ৪ জি (Cartap 4 G) প্রতি  ০.১ একর পিছু প্রয়োগ করা উচিৎ।

ব্লাস্ট রোগের নিয়ন্ত্রন: ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য বীজ বপনের ৪-১০ দিন আগে বীজতলায় দয়া করে ২০ গ্রাম কার্বেন্দামিম 50WP প্রতি ০.১ একর পিছু প্রয়োগ করা উচিৎ।

আগাছা নিয়ন্ত্রন:  দয়া করে নার্সারিতে বীজ বপনের তিন দিন পর স্প্রে করা উচিৎ ১১০-১২০ মিলি বাটাকলার 50 ইসি বা ৫০ মিলি সোফিট (প্রিটিলাক্লোর - pretilachlor) 37.5 ইসি  বা  ৬ গ্রাম সাথী (পাইরাজোসফ্লুরন -Pyrazosulfuron)।

চারা প্রতিস্থাপন :  বীজতলায় ধানের বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর চারাগাছগুলি ৩ থেকে ৪ পাতা পর্যায় পৌঁছালে প্রধান কৃষিজমির মধ্যে প্রতিস্থাপনের জন্য রোপণ করা উচিৎ।

প্রতিস্থাপনের পূর্বে চারার সংশোধন: বীজতলা থেকে তোলার পর চারাগাছের মূল  শিউডোমোনাস ফ্লোরোসেন্স ৮ (Pseudomonas fluorescens 8)-এ সাধারণত ৩০ মিনিট  বা ০.১% কার্বেনডিজে 50 ডব্লিউপি (carbendazine 50 W.P.)-এ ১২ ঘন্টা পর্যন্ত ডুবিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করা উচিৎ।

সৈকত মান্না

Related link - সরকারের ৩৩ শতাংশ ভর্তুকি ৭ লক্ষ পর্যন্ত লোণ (Gov. subsidy- Livestock) পশুপালকদের জন্য

কৃষকরা পাবেন ফার্ম যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম (farm equipment) ক্রয়ে সরকারের থেকে 80% পর্যন্ত ভর্তুকি

English Summary: How to prepare seedings for paddy cultivation
Published on: 10 June 2020, 04:24 IST