বেগুন (Eggplant) গাছ প্রায় ৪০ থেকে ১৫০ সেমি দীর্ঘ হয়। পাতাগুলো ঘন এবং প্রায় ১০ থেকে ২০ সেমি দীর্ঘ ও ৫ থেকে ১০সেমি প্রশস্ত হয়। বুনো বেগুন গাছ আরো বড় হতে পারে। বেগুনের ফুল সাদা হতে গোলাপী বর্ণের হয়। পাঁচটি পাপড়ি থাকে। বেগুনের ফল বেগুনী বা সাদা বর্ণের হয়। ফল অনেকটা লম্বাটে নলাকৃতির হয়ে থাকে। ফলের ভিতরে অনেকগুলো নরম বীজ থাকে।
বেগুন গাছে আক্রমণকারী জ্যাসিড পোকার আক্রমণে বেগুন গাছের পাতা পোড়া ও হলুদ হয়ে যায় ।
এই রোগে যা করণীয় তা নীচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল (Jacid Insect attack) -
বেগুন গাছে জ্যাসিড পোকার আক্রমণ বেশি হলে পাতার কিনারা পুড়ে যায় ও পুরো পাতা হলুদ হয়ে যায়। গাছ দুর্বল হয়ে ফলন কমিয়ে দেয়। গাছের সম্পূর্ণ পাতা ঝরে পরতে পারে।
পোকার বৈশিষ্ট্য ও ক্ষতির ধরনঃ
পূর্ণবয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক পোকা পাতার রস চুষে খেয়ে গাছকে দুর্বল করে ফেলে। পাতার রস চুষার সময় এদের লালা গ্রন্থি থেকে বিষাক্ত রস বেরিয়ে আসে যা গাছের পাতাকে প্রথমে কুকড়িয়ে ফেলে পরে ঐ পাতার কিনারা লাল হয়ে যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে সম্পূর্ণ পাতা লাল হয়ে যায় এবং অবশেষে পাতা ঝরে পড়ে। পোকা আক্রান্ত পাতা পুড়ে যাওয়ার মত দেখায়। এই পোকা বেগুন গাছে মাইকোপ্লাজমা রোগ ছড়াতেও সাহায্য করে। এই পোকা গাছের পাতার রস খাওয়ার পাশা পাশি মধুর মত এক রকম রস বের করে। এই রস পাতায় আটকে গেলে তাতে সুটি মোল্ড নামক এক প্রকার কালো রং এর ছত্রাক জন্মায় ফলে গাছের সালোকসংশ্লেষণ ক্রিয়া বিঘ্নিত হয়।
বেগুন গাছে জ্যাসিড পোকা দমন: এ পোকা দমনের জন্য প্রাথমিকভাবে পাতা উল্টিয়ে হাত দ্বারা টিপে মারা উচিত অথবা প্রতি লিটার পানিতে এক চিমটি সাবানের গুড়া মিশিয়ে স্প্রে করুন।
দমন ব্যবস্থাপনা (Suppression management) -
নিম বীজের নির্যাস প্রয়োগ করে বেগুনের জ্যাসিড পোকা অত্যন্ত কার্যকরীভাবে দমন করা সম্ভব। বিশেষত, শুষ্ক মৌসুমে (ফেব্রুয়ারী-এপ্রিল) বেগুন গাছে যখন জ্যাসিড পোকার আক্রমণের হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে দেখা যায় সে সময় ১০ দিন পরপর ৩-৪ বার নিম বীজের নির্যাস প্রয়োগ করে এ পোকা দমন করা সম্ভব। প্রথমত নিম বীজকে অল্প পরিমাণে ভেঙ্গে নিতে হবে। উক্ত আধা ভাঙ্গা নিম বীজ পরবর্তীতে ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে ( ৫০ গ্রাম পরিমাণ নিম বীজ ১ লিটার পরিমাণ পানিতে ভিজাতে হবে)। উক্ত নিম বীজের নির্যাস মিশ্রিত পানি পরবর্তীতে জ্যাসিড আক্রান্ত গাছসমূহে স্প্রে মেশিনের সাহায্যে প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত পাতার নিচের দিকে স্প্রে করতে হবে।
বেশি আক্রমণ হলে রিপকর্ড, একতারা, এডমায়ার, ইমিটাফ, টাফগর, সুইটপ্রিম ইত্যাদির যেকোন একটি ব্যবহার করুন। প্রতি লিটার পানিতে ৮ থেকে ১০ ফোঁটা হিসেবে জলে মিশিয়ে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য -
বেগুন গাছের পাতা যাতে নেতিয়ে না পড়ে সেদিকে নিয়মিত নজর রাখতে হবে ।। প্রয়োজন মতন দৈনিক জলের ব্যবস্থা করুন।।
বেগুন গাছ ক্রমাগত নেতিয়ে পড়লে বেগুন ফেটে যায়। এমনকি বেগুন তেতো হয়ে যায়। বেগুন বড় হয় না। ছোট অবস্থায় শক্ত হয়ে যায়। তাই এমনভাবে পানি সেচ দিতে হবে যাতে করে বেগুন গাছ নেতিয়ে না পরে।
আরও পড়ুন - জেনে নিন সজিনার গুনাগুন এবং তার কাটিং রোপণ পদ্ধতি সম্পর্কে (Moringa Cultivation)
Share your comments