তাল একটি অতি প্রাচীন ফল | পাকা তালের খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে জলীয় অংশ ৭৭.২ গ্রাম, খনিজ ০.৭ গ্রাম, আঁশ ০.৫ গ্রাম, আমিষ ০.৭ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম শর্করা ২০.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯ মিলিগ্রাম ও খাদ্য শাক্তি ৮৭ কিলোক্যালরী রয়েছে। তালের রস শ্লেষ্মানাশক। রস থেকে তৈরি তালমিসরি সর্দি কাশির মহৌষধ, যকৃতের দোষ নিবারক ও পিত্তনাশক। তালের রস বিভিন্ন প্রকার পিঠা , মিছরি ও গুড় তৈরীতে ব্যবহার হয়। সদ্য আহরিত তালের রস সুস্বাদু পানীয়। তালগাছের পাতা ও আঁশ পাখা ও অন্যান্য কুটির শিল্পজাত দ্রব্য তৈরীর জন্য ব্যবহার করা যায়। সর্বোপরি, এই গরমে তালের মিষ্টি শাঁস খাওয়ার বাজারে চাহিদা বাড়তেই থাকে | তাই, তাল চাষে (Ice apple cultivation) কৃষকরা আর্থিক দিক থেকেও লাভবান হচ্ছেন |
মাটি(Soil):
সব ধরণের মাটিতে তাল চাষ হয়ে থাকে। প্রতিকূল পরিবেশে কিছুটা অনুর্বর মাটিতেও তাল চাষ করা যায়। অন্য গাছের তুলনায় জলাবদ্ধতা ও লবনাক্ত সহিষ্ণুগুণ এ ফলের বেশি।
চাষের সময়:
আগষ্ট মাস থেকে তাল পাকতে শুরু করে এবং অক্টোবর মাস পর্যন্ত পাকা তাল পাওয়া যায়। তাল বীজ সংগ্রহ করে নির্বাচন করা প্রয়োজনীয়। তবে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নির্বাচিত মাতৃবৃক্ষ থেকে তালের বীজ সংগ্রহ করা উচিত। ভাদ্র থেকে কার্তিক মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
বপণ পদ্ধতি(Farming process):
সারি থেকে সারি ৭ মিটার এবং চারা থেকে চারা ৭ মিটার দূরত্বে রোপন করতে হবে । গর্তের আকার হবে ১ মিটার চওড়া ও ১ মিটার গভীর। গর্ত করার ১০-১৫ দিন পর প্রতি গর্তে ১৫-২০ কেজি জৈব সার, ২৫০ গ্রাম টি এস পি এবং ২০০ গ্রাম এমপি মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। বীজের মাধ্যমে তালের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। দুই ভাবে তাল গাছ লাগানো যায়।
আরও পড়ুন - White Gourd Farming: জেনে নিন বাড়ির ছাদে চালকুমড়ার সহজ চাষ পদ্ধতি
একটি পদ্বতি হলো সরাসরি বীজ বপন করে অথবা বীজতলায় চারা উৎপাদন করে চারা রোপণের মাধ্যমে এর আবাদ করা যায়। মৌসুমী বৃষ্টিপাত আরম্ভ হওয়ার পরপরই পলিব্যাগে উত্তোলিত ৩০-৩৫ সে. মি. লম্বা দু’পাতা বিশিষ্ট চারা মাঠে রোপন করা উচিত। তবে মাটিতে প্রচুর পরিমাণে আর্দ্রতা থাকলে অথবা জল সেচের ব্যবস্থা থাকলে চারা এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত লাগানো যেতে পারে।সমতল ভূমিতে অন্যান্য বৃক্ষ প্রজাতির পলিব্যাগের চারার মতোই এ চারা লাগাতে হবে। গুঁড়ো মাটি দিয়ে গর্তের ফাঁক ভরাটসহ ভালভাবে চারার গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। চারাগুলো আগাছমুক্ত রাখা ও গবাদি পশুর উপদ্রব থেবে রক্ষার ব্যবস্থা দিতে হবে। চারা রোপণের পর অন্তত প্রথম ৩ বছর রোগ-বালাই ও কীট-পতঙ্গের আক্রমণের হাত থেকে চারা রক্ষা করা প্রয়োজনীয় |
পরিচর্যা:
গাছ লাগানোর ২-১ মাসের ব্যবধানে গাছের গোড়া আগাছা মুক্ত রাখার প্রয়োজন হয়। খরা মৌসুমে গাছের গোড়ায় মাটি আগলা করে দিয়ে কচুরী পানা/খড়কুটা দিয়ে ঢেকে মালচিং ব্যবস্থা করা ভালো। পরবর্তীতে এ মালচিং দ্রবাদি পচে জৈব সার হিসাবে গাছের উপকারে আসবে। তাতে মাটিতে রস সংরক্ষিত থাকবে, আগাছা সহজেই দমন হবে। খরা মৌসুমে জল সেচ এবং বর্ষাকালে জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রয়োগ করা ভালো |
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
গাছ লাগানোর প্রথম বছর পচা গোবর-১০ কেজি, ইউরিয়া-৩০০ গ্রাম, টিএসপি-২৫০ গ্রাম এবং এমওপি-২০০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করা হলে গাছ ভালভাবে বাড়বে, ফলন বেশি দেবে। এ সারের অর্ধেক পরিমাণ বর্ষার আগে এবং বাকি অর্ধেক সার বর্ষা শেষে বছরে ২ বার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। তাল গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতি বছর ১০% হারে সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং এ প্রবৃদ্ধি ৭-৮ বছর পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে। এরপর প্রতিটা বয়স্ক গাছের জন্য পচা গোবর -২০ কেজি, ইউরিয়া -১ কেজি, টিএসপি-৯০০ গ্রাম এবং এমওপি-৮০০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করার প্রয়োজন হবে |
ফসল সংগ্রহ:
মধ্য পৌষ থেকে মধ্য চৈত্র (জানুয়ারি থেকে মার্চ) মাসে ফুল আসে এবং শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ফল পাকতে শুরু করে। প্রতি গাছে প্রায় ১৫০-২৫০ টি ফল ধরে |
আরও পড়ুন - Breeding process of Koi Fish: জেনে নিন কৈ মাছের কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি
Share your comments