কুল খুব রসালো ও সুস্বাদু একটি ফল। কুল বেশ জনপ্রিয় ও অতি-পরিচিত ফল | এই নিবন্ধে কুল চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
মাটি(Soil):
প্রায় যে কোন ধরনের মাটিতেই কুল চাষ করা যায়। তবে কুল গাছ লবনাক্ততা ও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে তাই ক্ষার যুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি কুল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ ধরনের মাটিতে কুলের ভালো ফলন হয়।
বংশ বিস্তার:
কুল গাছ বীজ এবং কলমের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে থাকে। কলমের মাধ্যমে যে চারা তৈরি হয় তাতে বংশগত গুনাগুন বজায় থাকে। বীজ থেকে যদি চারা উৎপাদন করা হয় তবে সেই বীজকে ভেজা গরম বালির মধ্যে দেড় থেকে দুই মাস রেখে দিতে হয় তাহলে চারা তাড়াতাড়ি গজাবে।
আর তা না হলে চারা গজাতে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় লেগে যায়। কলম থেকে চারা তৈরি করতে হলে আগে বাছাই কৃত স্থানে বীজ বপন করতে হবে। তারপর চারা তৈরি করে তার উপর বাডিং এর মাধ্যমে কলম তৈরি করে নিতে হবে।
জমি তৈরি:
কুল যদি বাগান আকারে চাষ করা হয় তাহলে চাষের জন্য উচু ও মাঝারি উচু জমি ভালো হবে। এছাড়া ও বাড়ির আনাচে কানাচে, পুকুরের পাড়ে বা আঙিনায় ও কুল চাষ করা যায়।
মাদা তৈরি:
কুল চাষে মাদা তৈরি করে নিতে হবে। সারিতে চাষ করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ১২ ফুট এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৬ ফুট নিতে হবে। এবং ২×২×২ ফুট গভীর করে গর্ত তৈরি করতে হবে।
আরও পড়ুন -Karamcha Farming: এই পদ্ধতিতে করমচা চাষে ফলন হবে দ্বিগুন
এই গর্তের মাটির সাথে ১৫-২০ কেজি পচা গোবর সার, ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম এমওপি, ১০০ গ্রাম সরিষার খৈল, ও ১০ গ্রাম সোহাগা ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর এটি ৭ দিন রেখে দিতে হবে। ৭ দিন পর এই সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে গর্তটি ভরাট করে দিতে হবে।
রোপণ:
বাগান আকারে কুল চাষের জন্য বর্গাকারে চারা রোপণ করতে হবে। চারার রোপণ দূরত্ব ৬ থেকে ৭ মিটার হতে হবে। কুলের জাত ও স্থান ভেদে চারার দূরত্ব কম বেশি হতে পারে। চারা রোপন করার এক মাস আগে ১×১×১ মি আকারের গর্ত তৈরি করে নিতে হবে।
চারা রোপন সময়:
মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এবং শ্রাবণ মাসের মাঝ থেকে ভাদ্র মাসের মাঝ পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়।
সার প্রয়োগ:
চারা রোপণ করার আগে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। পচা গোবর ২০-২৫ কেজি, ইউরিয়া সার ২০০-২৫০ গ্রাম, টিএসপি ২০০-২৫০ গ্রাম এবং এমপি সার ২৪৫-২৫৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। বছরে দুই থেকে তিন কিস্তিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। ফল ধরা থেকে শুরু করে, ফল সংগ্রহ এবং বর্ষাকাল এর পর সার প্রয়োগ করা উচিত।
ছাঁটাই:
গাছ ছাটাই করার ক্ষেত্রে শক্ত যে শাখা গুলো আছে সেগুলো গোড়া থেকে না কেটে কিছু অংশ রেখে অগ্রভাগ কেটে ফেলতে হবে। তাছাড়া অপেক্ষাকৃত দুর্বল, রোগাক্রান্ত ও পোকা মাকড় আক্রান্ত ডালগুলো বাছাই করে সেগুলো গোড়া থেকে কেটে পাতলা করে দিতে হবে। নতুন গজানো ডালগুলোর মধ্যে যে গুলো ভালো সেগুলো রেখে বাকি গুলো কেটে ফেলতে হবে। গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে গাছের প্রয়োজন অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসের দিকে যদি হালকা করে কিছু ডাল কেটে দেয়া হয় তাহলে গাছে ভালো কুল ধরে।
ফসল সংগ্রহ:
পৌষ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফল পাওয়া যায়। ফলের রঙ হালকা সবুজ বা হলদে হলে ফল সংগ্রহ করতে হবে।
আরও পড়ুন -Jayanti Rohu Fish Farming: জয়ন্তী রুই মাছ চাষে আপনিও হবেন লাভবান , শিখে নিন কৌশল
Share your comments