আঙুর (Grape farming) একটি অতীব পরিচিত ফল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। এটি একটা বহুবর্ষজীবি বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ যা সুস্বাদু রসালো ফল দিয়ে থাকে। এতে রয়েছে ভিটামিন বি, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন ৷
আমদের দেশে এই আঙুরের তেমন চাষ হয় না। তবে বর্তমানে বেশ কিছু যায়গায় আঙুরের চাষ করা হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ করা হয় বিশেষত অর্থ উপার্জনের জন্য। এর লতা চিরসবুজ, তবে এই উদ্ভিদের পাতা বছরে একবারই ঝরে। শুধু উষ্ণ এবং শুষ্ক আবহাওয়াতে এর চাষ সম্ভব।
মৃত্তিকা (Soil) -
আঙ্গুর চাষের জন্য সর্বোত্তম হল ভাল জৈব পদার্থের সংমিশ্রণ সহ দোআঁশ এবং বেলে দোআঁশ মৃত্তিকা। দুর্বল, শুকনো, ক্ষারযুক্ত মাটি একেবারেই অনুপযুক্ত। পিএইচ ৮.৭-এর চেয়ে কম এবং ইসি ১.৫ মিমি/সেন্টিমিটার, ক্যালসিয়াম কার্বনেট ১০ শতাংশ এবং চুনের ঘনত্ব ২০ শতাংশ –এরকম জমিতে আঙ্গুরের ফলন ভালো হয়।
দূরত্ব -
নিফিন পদ্ধতি অনুসারে যদি আঙ্গুর চাষ করা হয়, তবে কমপক্ষে ৩*৩ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে উদ্ভিদ রোপণ করুন। একইভাবে, যদি আরবার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, তবে ৫*৩ মিটার দূরত্ব রাখা প্রয়োজন। এর বীজের গভীরতা রাখতে হবে ১ মি.।
সেচ (Irrigation) -
আঙুরের চাষে উন্নত ফলন সেচের উপর নির্ভরশীল। এর প্রথম সেচকার্য ছাঁটাইয়ের পরে ফেব্রুয়ারি মাসে করা উচিত এবং দ্বিতীয় সেচ প্রদান করতে হবে মার্চের প্রথম সপ্তাহে। লক্ষ্য রাখতে হবে, মাটির জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা যেন ভালো হয়। নাহলে উদ্ভিদের গোড়ায় জল জমে গোড়া পচা-র মত রোগ দেখা দিতে পারে।
সারের পরিমাণ ও সার প্রয়োগ:
আঙুর গাছে সাধারণত আপনি বাড়িতে তৈরি জৈব সার দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি মাটির সঙ্গে গোবর ও ইটের গুঁড়া মিশিয়ে দিতে পারেন। এছাড়াও আপনি আঙুর গাছে অজৈব সার নিয়মিত দিতে পারেন।
পোকামাকড় দমন ও কীটনাশক (Disease Management) :
আঙুর গাছে সাধারণত পিঁপড়া ও বিভিন্ন ধরণের পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে। এসব পিঁপড়া ও পোকামাকড়ের হাত থেকে আঙুর গাছ কে রক্ষ করতে হলে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করে দিতে হবে।
পোকার আক্রমণ -
গুবরে পোকা : এরা কচি পাতা খেয়ে ফেলে। পাতার শিরার অংশ বাকি রেখে পুরো পাতা খেয়ে থাকে।
দমন : ম্যালাথিয়ন ৪০০ মিলি প্রতি ১৫০ লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে৷
থ্রিপস এবং জ্যাসিড :
এরা মূলত পাতা ও ফলের রস শোষন করে। পাতার নিচের অংশের রস খেয়ে ফলে ফলে পাতার উপরে সাদা দাগ পড়ে।
দমন: ম্যালাথিয়ন ৪০০ মিলি প্রতি ১৫০ লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন -Banana disease management: কিভাবে পোকার হাত থেকে কলা গাছ বাঁচাবেন? পড়ুন নিবন্ধটি
হলুদ ও লাল বোলতা :
পরিপক্ক ফলকে ছিদ্র করে এবং খেয়ে ফেলে।
দমন: কুইনাফোস ৬০০ মিলি প্রতি ১৫০ লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
বাগানের যত্ন ও পরিচর্যা :
যেহেতু আঙুর গাছ লতা জাতীয় গাছ তাই উদ্ভিদ একটু বড় হলেই এটাকে সঠিক ভাবে বাড়ার জন্য মাচা করে দিতে হবে। শীতকাল আসলেই আঙুর গাছের সব পাতা ঝরে যায় এ সময় গাছটিকে দেখলে মনে হবে যেন গাছটি মরে গেছে। কিন্তু বসন্ত শুরু হওয়ার পর আঙুর গাছে ফুল-ফল ধরতে শুরু করে। এজন্য প্রতিবার গাছের ফল সংগ্রহের পর গাছ সঠিক ভাবে ছাটাই করতে হবে।
আরও পড়ুন - Tobacco Cultivation: জেনে নিন তামাক চাষের সম্পূর্ণ পদ্ধতি ও পরিচর্যা
Share your comments