জানুন বিশেষ গ্রাফটিং ও কাটিং পদ্ধতিতে 'প্যাশন ফল' এর চাষ কৌশল ('Passion Fruit' Cultivation)

('Passion Fruit' Cultivation) প্যাশন ফলের বীজকে আবৃত করে থাকা হলুদ, জিলাটিনাস, সুগন্ধিযুক্ত পাল্পকে পানিতে দ্রবীভূত করে খুবই উপাদেয় শরবৎ প্রস্তত করা যায়। এটিকে অন্যান্য জুসের সাথেও মিশ্রিত করে খাওয়া যায়।

KJ Staff
KJ Staff
'Passion Fruit' Cultivation
Passion Fruit (Image Source - Google)

প্যাশন ফলের  বৈজ্ঞানিক নাম Passiflora edulis। এটি একটি স্বল্প পরিচিত ফল। প্যাশন ফল বহুবর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। অনেকের কাছে এটি ট্যাং ফল নামে পরিচিত। 

প্যাশন ফলের বীজকে আবৃত করে থাকা হলুদ, জিলাটিনাস, সুগন্ধিযুক্ত পাল্পকে পানিতে দ্রবীভূত করে খুবই উপাদেয় শরবৎ প্রস্তত করা যায়। এটিকে অন্যান্য জুসের সাথেও মিশ্রিত করে খাওয়া যায়। 

বংশবিস্তারঃ

প্যাশন ফলের বংশবিস্তার তিন ভাবে করা যায় তার মধ্যে অন্যতম কাটিং ও গ্রাফটিং।

কাটিং দ্বারাঃ

৩-৪ টি পর্ব বিশিষ্ট শাখা কেটে বংশবিস্তার করা যায়। কাটিং করার সময় শাখার নীচের পর্ব হতে ১-২ সেমি. নীচে তেরেসা করে কাট দিয়ে নীচের পর্বসহ বীজ তলার মাটিতে ৪৫ ডিগ্রী কোন করে উত্তর-দক্ষিণ দিকে মুখ করে মাটিতে রোপণ করতে হবে। কাটিং রোপণের সময় উপরের অংশে ১-২ টি পাতা রেখে বাকি পাতা ফেলে দিতে হবে। ৩৫-৫০ দিন বয়সের মধ্যে কাটিং এর সফলতা লক্ষ্য করা যায়। ৩-৫ মাস বয়সের চারা রোপণের উপযুক্ত হয়। কাটিং করার উপযুক্ত সময় মে-আগষ্ট। কাটিং এর চারায় মাতৃ গুনাগুন বজায় রাখে।

গ্রাফটিং দ্বারা:

গ্রাফটিং বর্তমানে প্যাশন ফলে কেফট গ্রাফটিং এর মাধ্যমেও বংশবিস্তার করা যায়। তবে কাটিং এর মাধ্যমে বংশবিস্তার করা সহজ। কাটিং ও গ্রাফটিং এর মাধ্যমে বংশবিস্তার করলে মাতৃ গুনাগুন বজায় থাকে। তবে টিস্যু কালচারের মাধ্যমেও প্যাশন ফলের বংশবিস্তার করা সম্ভব।

চারা রোপণ ও সার ব্যবস্থাপনাঃ

চারা রোপণের জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে মে-আগষ্ট। ২-৪ মি. x ২.৫-৫.০ মি. দূরত্বে এ ফলের চারা রোপণ করা হয়। রোপণের জন্য ৫০ x ৫০  x ৫০ সেমি. আকারের গর্ত তৈরি করে প্রতি গর্তে ২০-২৫ কেজি পঁচা গোবর, ২০০-৩০০ ইউরিয়া ও টিএসপি এবং ৪০০-৫০০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করা হয়। চারা রোপণের পর মাটিতে উপযুক্ত আর্দ্রতা রাখার জন্য সেচ দিতে হবে। তবে ভালো ফলনের জন্য ফুল আসা ও ফলের বিকাশের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকা দরকার। ফলে খরা মৌসুমেও সেচ প্রদান করা প্রয়োজন। তবে বর্ষাকালে যেন গাছের গোড়ায় পানি জমতে না পারে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

আন্তঃপরিচর্যাঃ

প্যাশন ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য মাচা তৈরি করা হয়ে থাকে। চারার গোড়ায় খুঁটি পুঁতে গাছ উঠিয়ে দেওয়া হয়। গাছ মাটির উপর উঠলে গাছের অগ্রভাগ কেটে দেওয়া হয় যাতে শাখা বের হয় এবং সমস্ত মাচা ছড়িয়ে পড়ে। মাটি থেকে মাচা পর্যন্ত গাছের কাণ্ডে কোন শাখা বের হলে তা কেটে দেওয়া হয়। বাড়ির আশে পাশে মাচা তৈরি করে বা বড় ফলের গাছে বা সবজির বেড়ায় উঠিয়ে দিতে হবে। গাছের গোড়ায় সব সময় আগাছা দমন করতে হবে। তবে প্যাশন ফলের বাগানে ইদুরের উপদ্রব বেশি দেখা দিলে তা দমন করতে হবে।

ডাল ছাঁটাইকরণঃ

গাছের গোড়া থেকে ১.৫- ২.০ মিটার পর্যস্ত কোন ডালপালা রাখা যায় না। তাই এ সমস্ত ডালা সব সময় কেটে দেওয়া ভালো। যেহেতু নতুন শাখায় বেশি ফুল ও ফল উৎপন্ন হয় তাই প্রতি বছর নিয়মিত কিছু শাখা প্রশাখা কেটে দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে পুরাতন ও মরা ডাল কেটে দিতে হয়। এতে রোগ বালাই কম হবে। শীতকালই ডাল ছাঁটাইকরণের উপযুক্ত সময়।

ফলের পরিপক্কতাঃ

প্যাশন ফলে বছরে দুইবার ফল পাওয়া যায়। প্রথমবার মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে এবং জুন-আগষ্ট মাসে ফল পাওয়া যায়। দ্বিতীয়বার জুলাই-আগষ্ট মাসে ফুল আসে এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে ফল পাওয়া যায়। গাছ লাগানোর ১৪-২০ মাসের মধ্যেই ফল পাওয়া যায়। প্যাশন ফুল পর-পরাগী, ফুল দুপুরে উন্মুক্ত হয় এবং সন্ধ্যায় বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের মাছি, মৌমাছি, বোলতা ইত্যাদি দ্বারা পরাগায়ন সম্পন্ন হয়। তবে হাত দিয়ে পরাগায়ন করা যায়। এতে সফলতার হার অনেক বেশি। ফুল থেকে কুঁড়ি হতে ১৭-৪৬ দিন সময় লাগে। ফুল থেকে ফল পরিপক্ক হতে সময় লাগে ৬০-৯০ দিন।

রোগ ও পোকা-মাকড়ঃ

রোগঃ

প্যাশন ফলের গাছ উইডনেস ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। এ রোগে আক্রান্ত পাতা বিবর্ণ হয়ে যায় ও আকারে ছোট হয়। এছাড়া সেপটোরিয়া স্পট, ব্রাউন স্পট, ফাইটোপথোরা ব্লাইট, অলটারনারিয়া স্পট ও গোড়া পচা রোগ দেখা যায়। ম্যানকোজেব গ্রুপের যেকোন ছত্রাক নাশক দিয়ে এ রোগ দমন করা যায়।

পোকা মাকড়ঃ

কচি ফলে মাছিপোকা ছিদ্র করে ডিম পাড়ে, এতে ফল কুঁচকে যায় এবং ফলের আকার বিকৃত হয়ে অপরিপক্ক অবস্থায় ঝরে পড়ে। এছাড়াও মিলিবাগ ও মাইট দ্বারাও গাছ আক্রান্ত হতে পারে। মার্বেল আকৃতি হলে ম্যালাথিয়ন/ডেসিস/সুমিথিয়ন (২ মিলি/ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করে পোকা দমন করা যায়।

ফলনঃ

১৮-২০ মাস বয়সের একটি গাছে ১০০-২০০ টি ফল পাওয়া যায় অর্থাৎ গাছ প্রতি ৫-১০ কেজি।

আরও পড়ুন - জানুন আমের কিছু বিশেষ জাত ও তার পরিপক্কতার সময় সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য (Some Special Varieties Of Mango)

Published On: 06 February 2021, 10:26 PM English Summary: Know the cultivation techniques of 'Passion Fruit' with special grafting and cutting methods

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters