তরমুজ (Watermelon ) একটি গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু ফল। ঠান্ডা তরমুজ গ্রীষ্মকালে বেশ জনপ্রিয়। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি খেলে দেহের অক্সিডেটিভ স্ট্রেসজনিত অসুস্থতা কমে। এই ফলটি নিয়মিত খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে না। আজ আমরা জানব এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
তরমুজ চাষের পদ্ধতি (Watermelon Cultivation) -
১. জমি তৈরি -
প্রয়োজন মতো চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। জমি তৈরির পর সার প্রয়োগ করে চারা লাগানো উচিত।
২. বীজ বপন সময় -
ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী। বীজ বোনার জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম পক্ষ সর্বোত্তম।
৩. রোপণ পদ্ধতি -
সাধারণত মাঠে সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতি প্রচলিত থাকলেও এখন আগে চারা তৈরি করে জমিতে চারা রোপণ করাই উত্তম।
৪. বীজ বপন -
সাধারণত প্রতি সারিতে ৪-৫টি বীজ বপন করা হয়। বপনের ৮-১০ দিন আগে জমি তৈরি করে মাটিতে সার মিশাতে হয়। দু মিটার দূরে দূরে সারি করতে হয়। প্রতি সারি ৫০ সেমি. প্রশস্ত ও ৩০ সেমি. গভীর হওয়া বাঞ্চনীয়।
৫. চারা রোপণ -
বীজ বপণের চেয়ে তরমুজ চাষের জন্য চারা রোপণ করা উত্তম। এতে বীজের অপচয় কম হয়। চারা তৈরির জন্য ছোট ছোট পলিথিনের ব্যাগে বালি ও পচা গোবর সার ভর্তি করে প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ বপন করা হয়। ৩০-৩৫ দিন বয়সের ৫-৬ পাতাবিশিষ্ট একটি চারা মাঠে রোপণ করা হয়।
৬. বীজের পরিমাণ -
প্রতি একরে ৩৫০-৪০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
৭. সার প্রয়োগ (Fertilizer application) -
তরমুজের জমিতে নিম্নোক্ত হারে সার প্রয়োগ করা যেতে পারে-
সারঃ একর প্রতি
-
গোবর/কম্পোস্ট ৮ টন সব
-
টিএসপি ৪০ কেজি সব
-
মুক্তাপ্লাস (জিংক সালফেট) ৫ কেজি সব
-
ম্যাগপ্লাস (ম্যাগনেসিয়াম সালফেট) ৯-১০ কেজি সব
-
হেসালফ (৮০% সালফার) ৩ কেজি সব
-
কার্বোফুরান/ফিপ্রোনিল জাতীয় দানাদার ১০-১২ কেজি সব
পরবর্তী পরিচর্যা হিসাবে -
১ম কিস্তি- (চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর)- ইউরিয়া- ৪০ কেজি- এমপি ৩২ কেজি
২য় কিস্তি- (প্রথম ফুল ফোটার সময়)- ইউরিয়া- ২৫ কেজি- এমপি ৩২ কেজি
৩য় কিস্তি- (ফল ধারণের সময়)- ইউরিয়া- ২৫ কেজি- এমপি ৩২ কেজি
৪র্থ কিস্তি- (ফল ধারণের ১৫-২০ দিন পর)- ইউরিয়া- ২৫ কেজি- এমপি ৩২ কেজি
৮.বীজের অঙ্কুরোদগম -
শীতকালে খুব ঠাণ্ডা থাকলে বীজ ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে গোবর মাটির ভেতরে কিংবা মাটির পাত্রে রক্ষিত বালির ভেতরে রেখে দিলে ২-৩ দিনের মধ্যে বীজ অঙ্কুরিত হয়। বীজের অঙ্কুর দেখা দিলেই বীজ তলায় অথবা মাঠে স্থানান্তর করা ভালো।
আরও পড়ুন - Kashmiri Apple Kul - অনুর্বর জমিতে ও কাশ্মীরি আপেল কুল চাষ , জেনে নিন চাষের পদ্ধতি
৯. অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা -
শুকনো মৌসুমে সেচ দেওয়া খুব প্রয়োজন। গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রতিটি গাছে ৩-৪টির বেশি ফল রাখতে নেই। গাছের শাখার মাঝামাঝি গিটে যে ফল হয় সেটি রাখতে হয়। চারটি শাখায় চারটি ফলই যথেষ্ট। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে ৩০টি পাতার জন্য মাত্র একটি ফল রাখা উচিত।
১০. পরাগায়ন -
সকালবেলা স্ত্রী ও পুরুষ ফুল ফোটার সাথে সাথে স্ত্রী ফুলকে পুরুষ ফুল দিয়ে পরাগায়িত করে দিলে ফলন ভালো হয়।
আরও পড়ুন - Greater yam - আধুনিক পদ্ধতিতে গাছ আলু চাষ করে দ্বিগুণ মুনাফা অর্জন করুন
Share your comments