বর্তমানে ক্যাপসিকাম একটি দারুন জনপ্রিয় সবজি। এটি সালাদ, সবজি, রোস্ট নানাভাবেই খাওয়া যায়। ক্যাপসিকামের অনেক ঔষধি গুন (Medicinal Properties) আছে। সাথে পুষ্টিমানের দিক থেকে ক্যাপসিকাম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সবজি। প্রতি ১০০ গ্রামে ১১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৮৭০ আইইউ ভিটামিন ‘এ’ এবং ১৭৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আছে।
ক্যাপসিকাম হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতেও সহজেই চাষ করা যায়। ছোট গাছ কিন্তু বেশি ফল পাওয়া যায়। এ কারণে হাইড্রোপনিক পদ্ধতির জন্য একটি উপযুক্ত ফসল এই ক্যাপসিকাম। আপনি আপনার ছাদে ছোট্ট একটি হাইড্রোপনিক সিস্টেমে ক্যাপসিকাম চাষ করে মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন।
এবার জেনে নেওয়া যাক হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ করবেন কীভাবে (Capsicum Cultivation in Hydroponic Method) :
চারা উৎপাদন :
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চারা উৎপাদনের জন্য প্রথমে একটি প্লেটে খবরের কাগজ বা টিস্যু পেপার বিছিয়ে তার উপর বীজ ঘন করে ছিটিয়ে দিতে হবে। এর পর বীজের উপর হালকা জল দিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে উপরে আরেকটি খবরের কাগজ বা টিস্যু পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। একদম শুকিয়ে যেন না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে হালকা জল ছিটিয়ে দিতে হবে।
বীজ অঙ্কুরিত (গজানো) হওয়া শুরু করলে বীজকে স্পঞ্জ ব্লকের (Sponge block) গর্তে স্থাপন করতে হবে। এরপর ব্লক গুলোকে পানির ট্রেতে ভাসিয়ে রাখতে হবে। যখন চারায় ২-৩টি পাতা আসবে তখন থেকে প্রতিদিন ট্রেতে ২০-৩০ মিলিলিটার খাদ্য উপাদান দ্রবণ A এবং B যোগ করতে হবে। EC এর মান ০.৫-০.৮ ds/m এর মধ্যে রাখতে হবে। চারার বয়স ২০-২৫ দিন হলে চারাগুলো কর্কসিটের মাঝে ছিদ্র করে রোপণ করতে হবে।
চারা রোপণ পদ্ধতি (Plantation Method) :
ট্রের আকার অনুযায়ী পরিমাণে মতো পানি ভরতে হবে। পানির গভীরতা ৬-৮ সেমি হতে হবে। প্রতি ১০০ লিটার পানির জন্য ১ লিটার ক্যাপসিকাম নিউট্রিয়েন্ট সলিউশন A ও B যোগ করতে হবে। দ্রবণ যোগ করার সময় প্রথমে নিউট্রিয়ন্ট A যোগ করে পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে এবং পরে খাদ্য নিউট্রিয়েন্ট সলিউশান B যোগ করে ভালোভাবে মিশাতে হবে।
দ্রবণের মিশ্রণ তৈরির পর ট্রের উপর কর্কসিট স্থাপন করতে হবে। প্রতিটি গাছ থেকে গাছ এবং সারি থেকে সারির মধ্যে ৩০ সেমি দূরত্ব রাখতে হবে। কর্কসিটের উপর এই দূরত্ব অনুযায়ী ছোট ছিদ্র করতে হবে। তারপর প্রতিটি ছিদ্রে ১টি করে চারা রোপণ করতে হবে। সাধারণত ২০-২৫ দিন পর পর ট্রেতে ১০% খাদ্য উপাদান সম্বলিত জলীয় দ্রবণ যোগ করতে হয়।
প্লাস্টিকের বালতিতে ক্যাপসিকাম চাষ (Capsicum in tub) :
যদি খুবই ছোট আকারের হাইড্রোপনিক সিস্টেমের মধ্যে ক্যাপসিকাম চাষ করতে চান তাহলে প্লাস্টিকের বালতি বেছে নিতে পারেন। এতে পাইপ, মটর এসব ঝামেরায় যেতে হবে না। এটি অত্যন্ত সহজ পদ্ধতি। আগের মতোই চারা তৈরি করে নিতে হবে। আর চারা রোপণ করবেন নিচের বর্ণনা অনুযায়ী:
বালতির উপর গোল করে কাটা কর্কশিট স্থাপন করতে হবে। মাঝের ছোট গর্তে ১টি করে চারা লাগাতে হবে। চারা রোপণের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন দ্রবণ ও গাছের গোড়ার মাঝে ২.৫৪ সেমি বা ১ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকে এবং শিকড় দ্রবণ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
সাধারণত শিকড়ের এক-তৃতীয়াংশ (তিন ভাগের এক ভাগ) পানিতে এবং দুই-তৃতীয়াংশ (তিন ভাগের দুই ভাগ) বালতির ফাঁকা জায়গা রাখতে হবে। এবার বালতিটিকে আলো ও বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রাখতে হবে।
ব্যবস্থাপনা:
গাছের বৃদ্ধির সাথে সাথে তার খাদ্য উপাদানের চাহিদা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। সাধারণত ১৫-২০ দিন পর অল্প পরিমাণ খাদ্য উপাদান মিশ্রিত দ্রবণ দ্রবণ যোগ করতে হয়। গাছের বৃদ্ধির সময় উপরের পাতা হলুদ হয়ে গেলে ৫ গ্রাম ইডিটিএ আয়রন ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ১০০ লিটার পানির জন্য ২০০ মিলি হারে প্রয়োগ করতে হবে।
গাছে ফুল আসা শুরু হলে গাছের খাবার দ্রবণের মাত্রা বাড়াতে হবে এবং এই সময় দ্রবণের EC ২.০ থেকে ২.৫ এবং পিএইচ ৬.০-৬.৫ এর মধ্যে রাখতে হবে। গাছের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে তাকে সোজা করে দাঁড়িয়ে রাখতে গাছের গোড়ায় একটি রশি বাঁধতে হবে।
পোকামাকড়ের আক্রমণ ও প্রতিকার (Pest Management) :
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে ফসলে রোগবালাই খুব কম হয়। পোকামাকড়ও তেমন হয় না। আর গ্রিনহাউস পদ্ধতি বা স্বচ্ছ পলিথিনে ঘেরা পদ্ধতিতে যদি চাষ করা হয় তাহলে রোগ ও পোকামাকড় থেকে প্রায় শতভাগ নিরাপদ থাকা যায়।
তারপরও মাঝে মাঝে লাল মাকড়সা, সাদা মাছি, থ্রিপস, লিফ মাইনার বা জাব পোকার আক্রমণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতি ১ লিটার ভার্টিমেক (লাল মাকড়সার জন্য), ১ মিলি লিটার এডমায়ার (লিফ মাইনরি, থ্রিপস এবং জাব পোকার জন্য) এবং সবিক্রন ২ মিলি লিটার (সাদা মাছির জন্য) ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর স্প্রে করলে এসব পোকামাকড় দমন করা যায়। এছাড়া ফসলের আশে পাশে হলুদ ও সাদা রঙের আঁঠাযুক্ত ফাঁদ পেতে রাখলে তাতে জাবপোকা ও থ্রিপস জাতীয় পোকা সহজেই দমন করা যায়।
ফসল সংগ্রহ:
সাধারণত চারা রোপণের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে ফুল আসতে শুরু করে। আর চারা রোপণের ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে ক্যাপসিকাম সংগ্রহ করা যায়। ফলের ঠিক নিচে ফুল ঝরে পড়ার পর ফল সংগ্রহ করতে হবে। সপ্তাহে একবার ফল সংগ্রহ করাই ভালো। বোঁটাসহ ফল সংগ্রহ করে ছায়াযুক্ত ঠাণ্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করে বাজারজাত করুন। তাতে অনেকক্ষণ ফল টাটকা থাকবে।
আরও পড়ুন - Grape Terrace Farming - সহজ পদ্ধতিতে নিজের বাড়িতেই করুন দ্রাক্ষার চাষ
প্রতিটি সুস্থ গাছে ৮-১০ টি করে ফল ধরে। প্রতিটি গাছ থেকে ৮০০-১২০০ গ্রাম পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। সাধারণত মাটিতে ক্যাপসিকাম চাষ করলে ফল সংগ্রহ করতে যতদিন সময় লাগে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে তার চেয়ে ১২-১৫ দিন আগেই ফল সংগ্রহ করা যায়।
আরও পড়ুন - Terrace Farming – বাড়ির ছাদেই করুন লেটুস শাকের চাষ, জেনে নিন চাষের পদ্ধতি
Share your comments