তরমুজ, সুস্বাদু এবং উপকারী একটি ফল৷ গরমে তরমুজের জোগান বেশি হলেও সারাবছরই এখন পাওয়া যায়৷ এটি অর্থকরীও, তাই তরমুজ চাষে অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করছেন৷ তবে তরমুজ চাষের আগে দেখে নেওয়া যাক আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী এই ফল৷
একনজরে তরমুজের উপকারিতা- তরমুজের মধ্যে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, সি এবং বি, যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে শরীরে বাড়তি শক্তির জোগান দেয়৷ তরমুজে জলের পরিমাণ প্রচুর মাত্রায় থাকায় তা গরমে শরীরকে যেমন ঠাণ্ডা রাখে তেমনই খাবার হজমে সাহায্য করে, দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্য৷ এতে ক্যালোরির পরিমাণ কম এবং তরমুজ শরীরে ফ্যাট জমতে দেয় না৷
এছাড়া তরমুজ বয়স্কদের জন্যও খুব প্রয়োজনীয় একটি ফল৷ যাদের হাঁপানির সমস্যার রয়েছে তাদের জন্য বিশেষ উপকারী৷ এছাড়া এটি হাড় মজবুত করতে যেমন সাহায্য করে তেমনই আবার দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতেও এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম৷
বহুগুণে সমৃদ্ধ এমন একটি ফল আপনি চাইলে বাড়ির ছাদেই চাষ করে ফেলতে পারবেন৷ কীভাবে? দেখে নিন-
তরমুজ চাষের জন্য শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু সবচেয়ে ভালো সময়৷ শীতের শেষের দিকে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়েও বীজ বপন করা যায়, তবে সেক্ষেত্রে তরমুজের বীজ ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত জলে ভিজিয়ে রেখে মাটির পাত্রে বালির ভিতরে রেখে দিলে ২-৩ দিনের মধ্যেই তার থেকে অঙ্কুর বেরিয়ে আসবে।
অঙ্কুরোদ্গম হলেই দেরি না করে তা রোপন করতে হবে। ছাদে তরমুজ চাষে যে টব নেবেন তার সাইজ কমপক্ষে দেড় ফুট বাই দেড় ফুট হতে হবে৷ অতিরিক্ত জল নিষ্কাশনের জন্য টবের নীচে ফুটে করে দিতে হবে৷ জৈব উপাদানে ভরপুর বেলে-দোআঁশ মাটি প্রয়োজন তরমুজ চাষের জন্য৷ একভাগ মাটি, একভাগ জৈব সার ভালোভাবে মিশিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে৷ বীজ বপনের পর প্রতিদিন নিয়ম করে পরিমিত জল দিতে হবে৷ তবে কোনওভাবেই গোড়ায় জল জমতে দেওয়া যাবে না৷ জৈব সার সমৃদ্ধ মাটিতে বীজ বপন করলেও, যেহেতু এই গাছে জৈব সার বেশি পরিমাণে লাগে তাই পরেও মাঝে মাঝে এই সার দিতে হবে৷ প্রায় এক মাস পর মাটিটা একটু করে খুঁচিয়ে আলগা করে দিতে হবে যাতে ঝুরঝুরে ভাব বজায় থাকে৷
সাধারণত জাত এবং আবহাওয়ার এর ভালো ফলন নির্ভর করে৷ ফল হতে প্রায় মাস তিনেক বা তারও বেশি সময় লেগে যায়৷ তবে তরমুজের সূক্ষ্ম রোম পড়ে গিয়ে তা চকচকে হয়ে উঠলে বুঝতে হবে তা পরিপক্ক হয়ে গিয়েছে৷ মাটির দিকে থাকা অংশটি কিছুটা হলুদ বর্ণ হয়ে উঠবে৷ তা ছাড়া এর গায়ে টোকা দিয়েও এটি পেকেছে কিনা তা বোঝা সম্ভব৷
নিম্নে তরমুজের কিছু হাইব্রিড বীজের নাম তুল ধরা হল-
চেতন (এনএস ৭০০)- এই বীজের তরমুজ ২.৫-৩.৫ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়৷ ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে পরিপক্ক হয়ে ওঠে৷
এন এস ৩৯- এই বীজের তরমুজের ওজন প্রায় ৪-৫ কেজি হয়৷ এর বাইরের দিকটি উজ্জ্বল গাঢ় সবুজ বর্ণের হয়৷ তার ওপর লম্বা লম্বা দাগ থাকে৷ এটিও প্রায় ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে ভালো ফলন দেয়৷
এন এস ৭০১ (আই বি ফোর)- এই বীজের তরমুজ গাঢ় নীলচে সবুজ হয়৷ ২.৫-৩ কেজির এই তরমুজ হতে ৬০-৬৫ দিন সময় লাগে৷
ব্ল্যাক ক্যান্ডি- গাঢ় সবুজ এই তরমুজ হতে সময় লাগে প্রায় ৬৫-৭০ দিন৷ এটি ডিম্বাকৃতি হয়৷ এর ভিতরটি গাঢ় লাল বর্ণের হয়৷ ওজন প্রায় ২-৩ কেজি হয়৷
ব্ল্যাক স্টার- গোলাকার এই তরমুজ হতে প্রায় ৭০ দিন সময় লাগে৷ ওজন ৫-৬কেজি হয়৷
কাসাটা- এই তরমুজ হতে প্রায় সময় লাগে ৭০-৮০ দিন৷ ওজন ৮-১০কেজি হয়৷
শক্কর প্লাস- খুবই মিষ্টি এই তরমুজের ওজন প্রায় ৩.৬কেজি হয় এবং এটি পরিপক্ক হতে সময় নেয় প্রায় ৬৫ দিন৷
এমএইচবডব্লিউ ৪ (সন্ত্রুপ্তি)- এই তরমুজের বাইরের অংশ কালচে সবুজ এবং ভিতরটি গাঢ় লাল হয়৷ এর ওজন প্রায় ৪-৬ কেজি হয়৷
তবে তরমুজের বেশ কিছু রোগ এবং তার প্রতিকার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে৷ যেমন, ঢলে পড়া রোগ- এই সমস্যা গাছে যে কোনও সময় দেখা দিতে পারে৷ হঠাৎ করে গাছের পাতা বাদামি হলুদ বা হতে শুরু করবে এবং ধীরে ধীরে পুরো গাছটিই মারা যাবে৷ এক্ষেত্রে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে৷ যাতে এই সমস্যা গাছের না হয় তার জন্য ব্যাভিস্টিন ২মিলিলিটার এক লিটার জলে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে পারেন৷
সাদা গুঁড়ো রোগ- গাছের পাতায় বিভিন্ন স্থানে সাদা সাদা দাগ হতে শুরু করে৷ ধীরে ধীরে তা সমগ্র গাছে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, ফল ঝরে যায় এবং গাছটি নষ্ট হয়ে যায়৷ ১০লিটার জলে ২০গ্রাম থিয়োভিট বা ১০ গ্রাম ক্যালিক্সিন মিশিয়ে টানা দু সপ্তাহ স্প্রে করতে হবে৷
গোড়া পচা রোগ- তরমুজের গোড়ার চারিদিক ভিজে ভিজে হয়ে পচে যায়৷ ধীরে ধীরে সমগ্র গাছটি নেতিয়ে পড়ে৷ অবশেষে গাছটি মারা যায়৷ এই সমস্যা থেকে গাছকে বাঁচাতে, প্রতি লিটার জলে ছত্রাকনাশক (ব্যাভিস্টিন) ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে মাটির চারিদিকে স্প্রে করে দিতে হবে৷
বর্ষা চ্যাটার্জি
Share your comments