চাষকৃত বিভিন্ন ফসলের মধ্যে বাঁশ একটি গুরুত্বপূণ র্অর্থকরী ফসল। বাঁশের চাহিদা এবং বাজারদর প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বাঁশ গাছ অবহেলায় ফেলে রাখা উচিত নয়। ভারতে বন আইন ১৯২৭ সাল থেকে বাঁশ আহরণ, ছেদন, পরিবহন, আমদানী ও রপ্তানীতে সরকারী অনুমতিপত্রের প্রয়োজন হত, যার জন্য বাঁশ চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালে বন আইন সংশোধন করে বাঁশকে অব্যহতি দেওয়া হয় কারণ বাঁশ বৃক্ষ নয় তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ। বর্তমানে বাঁশ চাষীদের স্বার্থে এবং বাঁশ চাষ সম্প্রসারনের জন্য জাতীয় কৃষি বন এবং বাঁশ মিশন (National Agro-Forestry and Bamboo Mission) প্রকল্প রূপায়ন করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে বাঁশ দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদ হওয়ায় অন্যান্য উদ্ভিদের তুলনায় প্রায় ৩-৪ গুণ বেশি বায়ু থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড অপসৃত করতে পারে এবং ৩০-৪০% বেশি অক্সিজেন বাতাসে ছড়িয়ে বায়ু শোধনে শহায়তা করে। আবার ছোট-বড় শহরের দূষিত নদী, নালা-নর্দমার দূষিত জল শোধন করার জন্য সৌন্দর্যবর্ধক বাঁশ (Ornamental Bamboo – Bambusa wamin) রোপন করা যেতে পারে, যা দূষিত জল শোধনের পাশাপাশি শহরের বায়ু দূষণও কমাবে।
বাঁশের প্রজাতি (Variety) -
বাঁশের প্রায় ১৩৬ টি প্রজাতি রয়েছে, যা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে প্রায় ১০ টি জাত সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। আপনি কীসের জন্য বাঁশ চাষ করতে চান তা বিবেচনা করে আপনাকে প্রজাতিগুলি বাছাই করতে হবে। আপনি যদি আসবাবের জন্য বাঁশ চাষ করছেন, তবে এর সাথে সম্পর্কিত প্রজাতিগুলি বাছাই করুন।
বাঁশ গাছের পরিচর্যা পদ্ধতি (Crop Care) :
বর্ষার আগে ও পরে বছরে ২বার কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটি ঝুরঝরে রাখা প্রয়োজন যাতে ঝাড়ের চারপাশে রাইজোম, কোড়ল ও বাঁশের বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে এবং ঊৎপাদন বৃদ্ধি হয়।
বাঁশ ঝাড়ের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখতে অবাঞ্ছিত কঞ্চি বিশেষ করে গোড়ার দিকের ঘন ঠাসাঠাসি অবস্থায় বিদ্যমান কঞ্চিগুলি প্রয়োজন অনুসারে ছাঁটাই করা উচিত, রোগ-পোকা আক্রান্ত মরা বাঁশ গুলি নজরে আসা মাত্র সরিয়ে ফেলতে হবে।
সধারণত ৫ বছরের বেশি বয়সের বাঁশের গুণগত মান বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হ্রাস পায়। তাই প্রতি বছর নতুন গজানো বাঁশের গোড়ায় স্থায়ী রং দিয়ে জন্ম সাল লিখে রাখলে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী বয়সের বাঁশ কাটা ও বিক্রি করা সম্ভব হয়
কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে গ্রীষ্ম, বর্ষা ও বসন্ত কালে বাঁশের বৃদ্ধি দ্রুত হয়, এই সময় বাঁশ কাটা উচিত নয়, কারণ এই সময় বাঁশে কর্বোহাইড্রেটের পরিমান বেশি থাকে। বর্ষার পর হেমন্ত বা শীতকালে বাঁশ কাটা উচিত কারণ এই সময় বাঁশে কর্বোহাইড্রেটের পরিমান কম থাকায় সংগৃহীত বাঁশে ঘুন পোকা, উই পোকা, ছত্রাক জনিত রোগ জীবানুর আক্রমণ মজুদ করার সময় এবং ব্যবহারের পর কম পরিলক্ষিত হয়।
আরও পড়ুন - Profitable Ridge Gourd – কম খরচে ঝিঙ্গা চাষ করে দ্বিগুণ অর্থ উপার্জন করুন
বাঁশ চাষে লাভ –
বাঁশের তৈরি বোতল, কাপ-প্লেট, চামচ, কাঁটা, বাটি, থালা প্রভৃতি নানা ধরণের জিনিসের জনপ্রিয়তা চোখে পড়ার মতো৷ শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও ভারতে তৈরি এই সব জিনিসের চাহিদা প্রচুর৷ অনলাইনেও বাঁশের থেকে তৈরি জিনিস (Online Profitable Business) ক্রেতারা কিনে থাকেন৷ বর্তমান সময়ে কম সময়ে লাভ করার ইচ্ছে থাকলে (পরিবেশকে দূষিত না) করে এই ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন৷
এছাড়া যারা বাদ্যযন্ত্র (Instruments from Bamboo) তৈরির ব্যবসার সঙ্গে নিযুক্ত, তারা বাঁশকে ভালোভাবেই ব্যবহার করতে পারেন এক্ষেত্রে৷ পরিবেশ বান্ধব এইসব জিনিসপত্রের চাহিদা সারাবছরই থাকে, তাই লাভজনক ব্যবসা হিসেবে ক্রমশই এটি নিজের জায়গা করে নিচ্ছে৷প্রশিক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন -
আরও পড়ুন - Chital Fish Farming - চিতল পোনা উৎপাদন ও চাষের লাভজনক পদ্ধতি
Share your comments