পেঁপে আমাদের রাজ্যে প্রভূত পরিমাণে চাষ হয়। এটি এমন একটি ফল যা মানুষ কাচা তথা সবুজ অবস্থায় সব্জি হিসেবে এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসাবে খেয়ে থাকে। এর অনেক ভেষজ গুণও রয়েছে। পেঁপের বেশ কিছু জাতের মাঝে বর্তমানে হাইব্রিড জাতের পেঁপের চাষ এখন বেশি হচ্ছে। ভালো লাভ থাকায় পেঁপে চাষে চাষিরা বেশি ঝুঁকে পড়ছে ।
হাইব্রিড পেঁপে জাতের বৈশিষ্ট্য (Hybrid variety) -
১.হাইব্রিড গাছ গুলির মধ্যে প্রত্যেকটি গাছে পেঁপে ধরে ।
২.রেড লেডি জাতের পেঁপে গাছ সর্বচ্চো ১০ ফিট হয়।
৩.গাছের উচ্চতা ৬০-৮০ সেমি হলে ফল ধরা শুরু হয়।
৪. প্রতিটি গাছে ৫০-১২০ পর্যন্ত ফল ধরে।
৫. ৫-৬ মাসের মধ্য ফুল আসে এবং প্রথম ফল পাওয়া যায় ৭-৯ মাসের মধ্য।
৬. এই জাতের পেঁপে গুলি বেশ বড়।
৭. ফলের রং লাল-সবুজ।
৮. এক একটি ফলের ওজন ১.৫ থেকে ২ কেজি।
৯. ফলের মাংস বেশ পুরু, গাঢ় লাল রঙের, স্বাদেও বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধিযুক্ত।
১০. কাঁচা ও পাকা উভয়ভাবে বাজারজাত করা যায়।
১১. এই জাতের পেঁপে পাকা অবস্থায় সহজে নষ্ট হয় না। ফলে দূর দুরান্তে সহজেই বাজারজাত করা যায়।
১২. এই জাতের পেঁপে রিং স্পট ভাইরাস রোগ সহনশীল।
১৩. এই জাতের পেঁপের জীবনকাল ২ বছরের অধিক।
আসুন জেনে নেই এর চাষ পদ্ধতি (Cultivation method) -
চারা তৈরিঃ
বীজ থেকে বংশ বিস্তার করা যায়। বীজের প্যাকেট কেটে ২ ঘন্টা রোদে শুকানোর পর ঠান্ডা জায়গায় রেখে ঠান্ডা করে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা পানিতে ভেজানোর পর পলেথিন ব্যাগে চারা তৈরি করতে হবে। পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপনের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ৫X৬ সেমি আকারের ব্যাগে সম পরিমাণ বেলে দোআঁশ মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ ভর্তি করে, ব্যাগের তলায় ২-৩ টি ছিদ্র করতে হবে। তারপর এতে সদ্য সংগৃহীত বীজ হলে একটি এবং পুরাতন বীজ হলে ২টি বীজ বপন করতে হবে। ১টি ব্যাগে এক এর অধিক চারা রাখা উচিত নয়।
রোপনের সময়ঃ
আশ্বিন (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) এবং পৌষ (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) মাস পেঁপের বীজ বপনের উত্তম সময়। বপনের ৪০-৫০ দিন পর চারা রোপণের উপযোগী।
চারা রোপণঃ
১.৫ থেকে ২ মাস বয়সের চারা রোপণ করা যায়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ২ মিটার। ২ মিটার দূরে দূরে ৬০X৬০X৬০ সেমি আকারে গর্ত করে চারা রোপণের ১৫ দিন পূর্বে গর্তের মাটিতে সার মিশাতে হবে। পানি নিষ্কাশনের জন্য ২ সারির মাঝখানে ৫০ সেমি নালা রাখতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
চারা লাগানোর পর নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস অন্তর প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুণ হবে। শেষ ফল সংগ্রহের আগেও সার দিতে হবে।
ফলনঃ
উন্নত হাইব্রিড জাতের প্রতিটি পেঁপে গাছ থেকে প্রায় ৫০-১২০ টি ফল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - Cardamom Farming - কম খরচে এলাচ চাষ করে আয় করুন অধিক অর্থ
পেঁপে গাছের পরিচর্যাঃ
বাগান সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গাছের গোড়া থেকে আগাছা তুলে ফেলে দিতে হবে। গাছের গোড়ার মাটি কোদাল দিয়ে হালকা করে দিতে হবে। গাছে অতিরিক্ত ফল ধরলে কিছু ফল ছিড়ে নিয়ে হালকা করে দিলে, বাকি ফল গুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। পেঁপে গাছে বিভিন্ন হরমোন প্রয়োগ করে বেশ সুফল পাওয়া যায়।
ফল সংগ্রহঃ
পেঁপে গাছে সাধারণত ৫-৬ মাসের মধ্য ফুল আসে এবং প্রথম ফল পাওয়া যায় ৭-৯ মাসের মধ্যে। পুষ্ট হওয়ার সময় কোন কোন ফলে হলুদ রং ধারন করবে। পুষ্ট ফলে কিছু দিয়ে খোচা দিলে ফল থেকে পানির মতো তরল আঠা বের হবে। অপুষ্ট ফল থেকে দুধের মতো ঘন আঠা বের হবে।
আরও পড়ুন - Crop Care - বর্ষায় ফলবাগান সঠিক পদ্ধতিতে পরিচর্যা পদ্ধতি
Share your comments