Cardamum একটি Elettaria এবং Amomum প্রজাতির Zingiberaceae শ্রেণীর উদ্ভিদ যার বীজ থেকে এলাচ বা এলাইচি তৈরি হয়। এই দুই প্রজাতিই প্রধানত ভারতীয় উপমহাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দা।
এদের সাধারণত বীজের আকার অনুযায়ী চিহ্নিত করা হয়। আড়াআড়ি ব্যবচ্ছেদে এটি ত্রিভুজাকার ও লম্বালম্বি বেম আকার বিশিষ্ট, পাতলা কাগজের ন্যায় বহিরাবরণ বিশিষ্ট, এবং ছোট গোলাকার কালো বীজ সমন্বিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে ছোট এলাচগুলি হয় হালকা সবুজ বর্ণের ও বড় এলাচগুলি হয় কালো বাদামী রঙের।
এলাচের চাষের জমি (Cardamom cultivation land) -
উর্বর মাটি এবং হালকা রোদ্র-ছায়া যুক্ত জায়গায় এলাচ গাছ ভালো জন্মায়। ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় ছায়ার মধ্যে এলাচ গাছের ফলন ভালো হয়। এলাচ চাষের ক্ষেত্রে আলাদা কোনো জমির প্রয়োজন হয় না। অন্য গাছের ছায়ার নিচে অর্থাৎ মেহগনি, আকাশমনি বা এ জাতীয় বাগানের ভিতর (গাছের ছায়াযুক্ত স্থানে) অথবা বাড়ির আঙ্গিনা অথবা ফলদ বৃক্ষের বাগানে এলাচ চাষ করলে এলাচের ভালো ফলন হয়। অন্য ফসলের মাঠে এলাচ চাষ করলে ফলন ভালো পাওয়া যায় না।
চারা রোপনের হারঃ
শতক প্রতি ১৪ টি এলাচের চারা লাগে অর্থাৎ বিঘা প্রতি ( ৩৩ শতকে ) ৪৬০ টি চারা রোপণ করা যায়।
চারা রোপণের দূরত্ব (Distance for planting seedlings) -
এলাচের চারা লাইনে রোপণের জন্য চারা থেকে চারার দুরত্ব হবে ৪ হাত এবং লাইন থেকে লাইনের দুরত্ব হবে ৩.৫ ( সাড়ে তিন) হাত। এই রোপণ দূরত্ব অনুসারে এলাচের চারা রোপণ করা ভালো।
জমি তৈরি ও সার ব্যবস্থাপনা (Land preparation and fertilizer management) -
এক বিঘা বা তার উপরে জমি তৈরি করতে হলে অবশ্যই মাটির ৩ ধরনের পরীক্ষা করে নিতে হবে । প্রতিটি জেলায় সরকারি মাটি পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে মাটি পরীক্ষা করএ নিতে হবে। কৃষক পর্যায়ে মাটির প্রতিটি পরীক্ষার জন্য ৩০ টাকা ফি দিতে হবে। সেই হিসাবে ৩ টি পরীক্ষায় মোট ৯০ টাকা খরচ হবে। (ক) মাটির পিএইচ (খ) মাটিতে বলি বা স্যান্ডের পরিমাণ (গ) মাটিতে জৈব উপাদানের পরিমাণ – এই ৩ টি তথ্য অবশ্যই জানতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক পরিমাণ মতো থাকলে এলাচ উৎপাদনে তেমন কোন খরচ হয় না। শুধু মাত্র প্রথম বছরে চারা কেনার খরচ হয়, তবে পরের বছরগুলোতে আর চারার টাকা লাগে না। মাটিতে পিএইচ এর পরিমাণ ৬ এর বেশি হলে মাটির সাথে পরিমাণ মতো চুন মিশাতে হবে। যদি এটেল মাটি হয় এবং জমিতে বালির পরিমাণ কম থাকে তাহলে অতিরিক্ত বালি মেশাতে হবে। কিন্তু দোআঁশ মাটিতে কোন কিছু করতে হবে না। মাটিতে জৈব উপদানের পরিমাণ কম থাকলে পচা গোবর বা কেঁচো কম্পষ্ট সার অতিরিক্ত প্রয়োগ করতে হবে।
এছাড়াও জমি তৈরির সময় চাষের সঙ্গে টিএসপি, প্রতি শতকে মাটিতে ৫০০ গ্রাম, পটাশ প্রতি শতকে ৫০০ গ্রাম। দানাদার কীটনাশক যেমন (ফুরাডান বা কার্বফুরান) ১ বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ২ কেজি পরিমাণ প্রয়োগ করতে হবে। তারপর ১ দিন পর সেচ দিয়ে জমি ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। যেন জমির সাথে সারগুলো ভালোভাবে মিশে যেতে পারে। ভালো ফলন পেতে হলে এর ১৪ দিন পরে ২ ফিট চওড়া ও দেড়ফিট গভীর গর্ত করে গোবর সার বা জৈব সার প্রয়োগ করে সাথে দানাদার কীটনাশক ( প্রতি গর্তের গোবরের সাথে ২০০ গ্রাম ) অবশ্যই দিতে হবে।এছাড়াও চারা রোপণের ২০-২৫ দিনের মধ্যে একই হারে ইউরিয়া- পটাশ সার দিতে হবে। তবে পরবর্তীতে কেবল ডিএপি সার প্রযোজ্য।
পরিচর্যাঃ
চারা রোপণের ৩ বছর পর শীতকালে এলাচ সংগ্রহের পর পুরাতন গাছ ছাটাই করতে হবে। অবাঞ্চিত মরা গাছ,পাতা ছাটাই না করলে ভালো ফলন হয় না। শীতকালে এলাচ গাছে ফুল ও ফল হয় না। তাই শীতকালে মরা গাছ ও দূর্বল গাছ ছাটাই করাই উত্তম।
গাছ প্রতি ফলনঃ
এলাচের চারা রোপণের ২য় বৎসরে কিছু গাছে এলাচ ধরা শুরু করলেও রোপণের ৩য় বৎসর থেকে এলাচের গাছে ফলন দেওয়া শুরু হবে। প্রায় প্রতি ঝোপ থেকে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম এমনকি ১ কেজির উপরে ফলন পাওয়া যাবে। ৩ বৎসর পরে ১ বিঘা বা ৩৩ শতক জমি থেকে ৯০০ থেকে ১০০০ কেজি বা ১ টন ফলন পাওয়া যাবে। সেই হিসাবে ১ বিঘা জমি থাকে বছরে ১০ লক্ষ টাকার এলাচ উৎপাদন করা সম্ভব।
ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণঃ
বাংলায় আষাঢ় মাসে এলাচের এই জাতগুলোর ফুল আসে এবং ভাদ্র ও আশ্বিন মাসের শেষের দিকে এলাচ পরিপক্ক হয়। তখন বাগান থেকে কাঁচা এলাচ সংগ্রহ করে রোদে শুকাতে হয় অথবা বেশি পরিমাণে উৎপাদন করলে ড্রায়ার মেশিনের সাহায্যে শুকাতে হয়। বর্ষাকালে হয়ে থাকে বলে এলাচ না শুকিয়ে ঘরে রাখলে পচন ধরার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এলাচ ফল পরিপক্ক হলে ফলগুলো দেখতে কিছুটা সবুজের উপর লালচে হবে।
আরও পড়ুন - Rambutan Fruit Cultivation: জানুন কিভাবে বিদেশি ফল পুষ্টিগুণসম্পন্ন রাম্বুটানের চাষ করবেন
এলাচের বাজার মূল্যঃ
এলাচের বর্তমান বাজার মূল্য ১৩০০ টাকা/ কেজি। যদি পাইকারী দামে এলাচ বিক্রয় ধরা হয় ১০০০ টাকা, তবে বিঘা প্রতি উৎপাদান হয় সর্বনিম্ন ৬০০ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১০০০ কেজি। সেই হিসাবে বিঘা প্রতি ১০০০×১০০০=১০,০০,০০০/ (দশ লক্ষ টাকা) আয় করা সম্ভব। এখন পর্যন্ত এমন কোন ফল বা ফসল বাংলাদেশে নাই যাতে প্রতি বিঘায় আয় হবে ১০ লক্ষ টাকা।
Kharif Crop - আগত খারিফ মরসুমে পেঁয়াজ চাষে বিভিন্ন রোগের প্রতিকার করবেন কীভাবে?
Share your comments