গাঁদা (Marigold flower) যে শুধু শীতকালেই চাষ হয় তা নয়, বর্তমানে গাঁদা ফুল গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালেও চাষ হচ্ছে সমানতালে | পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ফুলের মধ্যে গাঁদা ফুল চাষ করে কৃষকরা ব্যাপক সফলতা অর্জন করছেন | শুধু চাষাবাদই নয় পশ্চিমবঙ্গের ফুল এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে। তাই যে কেউ-ই নিজেকে একজন আর্দশ ফুল চাষি হিসেবে গড়ে তুলে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। বর্তমানে ঋতু ভিত্তিক তিন জাতের গাঁদা ফুলের চাষ করা হয়। এগুলো হলো গরম, বর্ষা এবং শীত এই তিন জাতের। ফুলের চাষ এবং অন্যান্য ফসলের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় ফুল চাষই অধিক লাভজনক।
মাটি নির্বাচন(Soil):
সাধারণত এঁটেল বা দো-আঁশ মাটি ফুল চাষের জন্য বেশি উপযোগী। যে জমিতে ফুল চাষ করা হবে, লক্ষ্য রাখতে হবে তা যেন নিচু না হয়। অর্থাৎ জমিতে যেন জল জমে না থাকে। পাশাপাশি জমিতে সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
মাটি তৈরী:
জমি নির্বাচন করার পর জমিতে ৩/৪টা চাষ দিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। মাটি যেন ঝুরঝুরে ও ছোট টুকরো হয়। শেষ চাষের আগে জমিতে গোবর সার দিতে পারলে ভাল হয়। মাটির নিচে প্রচুর কেঁচো থাকে যা গাছ কেটে নষ্ট করে দেয়। তাই শেষ চাষের আগে মাটিতে কেঁচোনাশক যে কোন ওষুধ দিতে হবে। তারপর মই দিয়ে মাটি সমান করে দিতে হবে।
আরও পড়ুন - Seaweed Farming: জেনে নিন সামুদ্রিক শৈবাল চাষ পদ্ধতি
চারা রোপন পদ্ধতি(Plantation):
যে দিন চারা রোপন করা হবে, সে দিনই জমিতে শেষ চাষ এবং কেঁচো মারার ওষুধ দিয়ে দুপুরের দিকে সেচ দিয়ে সমস্ত জমি ভেজাতে হবে। তারপর বিকালে যখন রোদের তাপ কমে যাবে তখন চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণ করার সময় সারিবদ্ধভাবে রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের জন্য সারি থেকে সারির দুরত্ব হবে ২ হাত এবং চারা থেকে চারার দুরত্ব হবে ৬ ইঞ্চি। চারাগুলো লাগানোর আগে পাত্রে জল নিয়ে ২ চা চামচ "ডায়াথেন এম-৪৫" ওষুধ মিশিয়ে চারাগুলো ঐ জলে ভিজিয়ে ৫/৬ মিনিট পর তুলে লাগালে চারার মৃত্যু হার অনেকাংশে কম হয়।
পরিচর্যা:
ফুলের চারা লাগানোর পর তার সঠিক পরিচর্যাটাই হচ্ছে মূল কাজ। চারা লাগানোর পর ৮/১০ দিন কোন কিছু না করাই ভালো। এর পর যদি জমি শুকিয়ে যায় অর্থাৎ যদি মনে হয় মাটিতে পর্যাপ্ত রস নেই তাহলে সেচ দিতে হবে। সেচটা সাধারণত খুব ভোরে অথবা সন্ধার আগে দিতে হবে। কারণ এসময় প্রচন্ড রোদে জমির মাটি গরম থাকে। ঐ অবস্থায় জমিতে সেচ দিলে চারার খুব ক্ষতি হয়। এইজন্য জমির মাটি ঠান্ডা থাকা অবস্থায় সেচ দেওয়া ভালো। ১৫/২০ দিন পর চারা মাটিতে লেগে যায়, একটু বড়ও হয়।
তখন গাছে ওষুধ এবং সার দেওয়া শুরু করতে হয়। শুধু "ডায়াথেন এম-৪৫" এবং "রোভরাল" এই দুই প্রকার ওষুধ দিলেই চলে। গাছকে তাড়াতাড়ি বৃদ্ধির জন্য "থিওভিট " ওষুধ দিতে হয়। ১০ লিটার জলে প্রতিটি ওষুধ ২ চা-চামচ করে মিশিয়ে স্প্রে করে দিতে হয়। এ সময় মাটিতে জো হলে এবং আগাছা বেশি হলে নিড়ানী দিয়ে শুধু গাছের গোড়া এবং কোদাল দিয়ে সমস্ত জমি কুপিয়ে দিতে হয়। তারপর প্রতি বিঘা জমিতে ২০ কেজি হারে ডিএমপি সার শুধু গাছের সারির মধ্য দিয়ে ছিটিয়ে দিয়ে সেচ দিতে হবে।
রোগবালাই ও দমন(Disease management system):
পাতায় ও ফুলে দাগ ও ধ্বসা –
অল্টারনেরিয়া; সারকোস্পোরা ও সেপ্টোরিয়া স্পিসিস ছত্রাকের জন্য এই রোগের আবির্ভাব হয় |কুয়াশা ও শিশিরের আর্দ্রতায় গাঁদা গাছের পাতায় বাদামী দাগ পরে পচা কালো রূপ নেয়।অল্টারনেরিয়া ছত্রাকের দাগে গোল রিঙের মত কালো দাগ পরে। বেশী আক্রমণে ফুলেও বাদামী দাগ ও ধ্বসা ফলন পুরো নষ্ট করে। মাঠে যত গাঁদাচাষ হয় তার প্রধান শত্রু এই রোগ।
প্রতিকার:
কার্বেন্ডাজিম + ম্যান্কোজেবের মিশ্র ছত্রাকনাশক ১.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে আঠা সহযোগে স্প্রে।
পাউডারি মিলডিউ –
পাতার উপরে সাদা পাউডারের মত ছত্রাকে গাছ দুর্বল হয়ে মারা পরে।
প্রতিকার:
কার্বেন্ডাজিম + ম্যান্কোজেবের মিশ্র ছত্রাকনাশক ১.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে আঠা সহযোগে স্প্রে।
ফুল সংগ্রহ:
সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে গরম জাতীয় গাছ থেকে ৭৫/৮০ দিনের মধ্যেই ফুল সংগ্রহ করা সম্ভব। প্রথম অবস্থায় ফুলের আকার কিছুটা ছোট হবে। গাছটা যখন পরিপূর্ণ হবে তখন ফুলের আকার বড় হবে।
আরও পড়ুন -শেড নেট পদ্ধতিতে পান চাষে বিঘা প্রতি ব্যাপক আয়ের সুযোগ
Share your comments