ফুটি একটি অতি পরিচিত ফল | এই ফুটিকে মেলনও বলা হয় | Cantaloupe (ফুটি) যার আরো কিছু নাম রক মেলন, সুইট মেলন, মাস্ক মেলন, হানী ডিউ বলে থাকে | এই ফল চাষে আর্থিক লাভ হয় ভালোই |
এই নিবন্ধে ফুটি চাষের (Melon Cultivation) বিস্তারিত পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো;
চাষের সময়:
এই বীজ বপনের সঠিক সময় গরমের সময় , শীত আসার পূর্বে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এবং মার্চ থেকে জুন (বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে- বীজ থেকে চারা হবার পরে যাতে অতিবৃষ্টির জলের মধ্যে এই গাছ না পড়ে) |
মাটি (Soil):
যে কোন ভালো মানের মাটি যেমন -বেলে মাটি, বেলে-দোয়াশ মাটি, দোয়াশ মাটিতে এই চাষ উপযোগী | লক্ষ্য রাখতে হবে, মাটি অবশ্যই ঝুরঝুরে হতে হবে যাতে তলদেশ পর্যন্ত সেচের ব্যবস্থা হয়, মাটির উপরের অংশে কোনভাবেই জল জমতে দেওয়া যাবেনা |
বপন:
ছাদে বাগান করার ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি টবে বা এমন মাপের যে কোন পাত্রে ২ টি অর্ধ ইঞ্চি মাটির নিচে এই বীজ বপন করতে হবে। মাটি পরিমানে কম হলেও এর মধ্যে যথেষ্ট পরিমান জৈবসার এবং জৈব উপাদান বিদ্যমান থাকতে হবে। পাত্রের মাটি সব সময় ঝুরঝুরে রাখতে হবে এবং ভালো হবে টব বা পাত্রের মাটির উপরের অংশ কোণ প্লাটিক কাগজ বা ভালো গেঞ্জির কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখলে।
বানিজ্যিকভাবে জমিতে করলে মাটিকে উঁচু করে বীজ বপন করতে হবে এবং সেচের জন্য ড্রেইন ব্যবস্থা রাখা যাতে গাছের গোড়ায় অতিরিক্ত জল না জমে এবং এক একটি চারার দূরত্ব হবে দেড় থেকে ২ (দুই) ফিট এবং এক একটি মাদাতে – ২-৩ টি বীজ বপন করতে হবে। বীজ অথবা চারা রোপণ শেষে হালকা সেচ দিতে হবে।
বীজ অঙ্কুরোদ্গম:
৫-১০ দিনের মধ্যে অনেক সময় তাপমাত্রা কম হলে ১২-১৫ দিন সময় লাগে বীজের অঙ্কুরোদ্গম হতে |
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
মাটি তৈরি করার সময় জৈবসার এবং জৈব উপাদান ভালো ভাবে মিশ্রিত করতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমানে নাট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং সালফার এর উপস্থিতি আছে | প্রয়োজনে সার প্রয়োগের পূর্বে মাটি পরীক্ষা করে নিতে হতে হবে | বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার আগে আর যারা ছাদে চাষ করবেন তারা ভার্মি কম্পোষ্ট প্রয়োগ করতে পারেন এবং ফসফেট, ফসফরাস ও সালফার আছে এমন মিশ্র সার প্রয়োগ করা যেতে পারে |
পরিচর্যা:
জমিতে চারা অবশ্যই উঁচুতে থাকতে হবে এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে অতিরিক্ত জল না জমে। মাটির উপরের অংশ অবশ্যই মালচিং করতে হবে। যেহতু এটি একটি লতা জাতীয় গাছ এবং এর লতা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় তাই এর লতা ধারণের জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। ২ ভাবে এই ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে | মাচা পদ্ধতি এবং মাটিতে খড়কুটো বিছিয়ে দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে |
সেচ:
চারা অংকুরোদ্গমন হবার পর থেকে ২-৩ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে এবং কোন অবস্থাতেই সেচ এমন দেওয়া যাবে না যে পাত্রে অথবা চারা নিচে অনেক জল জমে থাকে। ফুল আসার সাথে সাথে সেচ ব্যবস্থা প্রতি ১ দিন পর পর দিতে পারলে ভালো | ২ দিন -৩ দিনের দিন দিলেও হবে |
রোগবালাই ও দমন (Disease management system):
এই ফলে হলুদ মাছি পোকা এসে গাছের পাতা ফুটো করে দেয় এবং কান্ড এবং পাতার রস চুষে রস টেনে গাছের ক্ষতি করে | এবং ফল আসার পরে ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হয় তাতে গাছের ফল পচা রোগের সৃষ্টি হয় এবং ফল পচে যায় | এর থেকে রেহাই পেতে হলে মাটি এবং গাছ প্রতিনিয়ত লক্ষ্য রাখতে হবে, মাছি যাতে না আসে তার জন্য প্রায়শ জৈব বালাইনাশক দিতে হবে না পেলে নিকটস্থ কৃষি কর্মকর্তাকে দেখিয়ে পোকার জন্য ঔষধ নিতে পারেন আর ফল যাতে ছিদ্র না করতে পাড়ে তার জন্য ফল আসার সাথে সাথেই আপনার গাছের ফলটি প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিতে পারেন|
আরও পড়ুন - Watermelon Farming: জেনে নিন তরমুজ চাষ পদ্ধতি ও সঠিক উপায়ে পরিচর্যা
ফল সংগ্রহ:
এই ফল গাছের সঠিকভাবে চাষাবাদ এবং নিয়মিত ফুলের পরাগায়ন ভালো মত হলে এক একটি গাছ থেকে ৮ থেকে ১২ টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। ফলের আকৃতিগত ভাবে গোলাকার হবে এবং এক একটি ফল ওজনে ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম অনেক ক্ষেত্রে এর চেয়ে ও বেশী ওজন হতে পাড়ে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - কালোজিরা চাষ থেকেও হতে পারে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন, জানুন চাষের পদ্ধতি
Share your comments