সামগ্রিক ভাবে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে কৃষকের লভ্যাংশের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে বৈজ্ঞানিক প্রথায় ও আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করার সঙ্গে সঙ্গে কিছু খুটিনাটি বিষয়েও আমাদের সচেতন থাকতে হবে। সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে মিলবে শতভাগ সফলতা। আমন ধানের বীজ বাছাই, বীজ শোধন ও বীজতলা তৈরী নিয়ে রইল বিস্তারিত তথ্য। প্রাথমিক পর্যায়ে আমন ধান চাষ নিয়ে আলোচনা করা যাক।
বীজের হার - ১ বিঘা জমির জন্য : সরু ধান ৪-৫ কেজি
মাঝারি ধান ৫-৭ কেজি
মোটা ধান ৭-৮ কেজি
বীজ বাছাই (seed selection) -
সুস্থ সবল চারা তৈরীর জন্য বীজ বাছাই এবং বীজ শোধন একাত্ত জরুরী। বীজ বাছাইয়ের মধ্যে দিয়ে অপুষ্ট, অর্ধপুষ্ট এবং চিটে ধানকে বেছে ফেলা যায়। সেক্ষেত্রে দুর্বল গাছ না হওয়ার কারণে বীজতলায় চারাদের মধ্যে অকারণে প্রতিযোগীতা কম হয়, চারা ভালো হয়। বীজ বাছাইয়ের জন্য ১০ লিটার জলে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে দ্রবণ তৈরী করে তাতে বীজ ফেলতে হবে। ভেসে থাকা অপুষ্ট ধান ফেলে দিয়ে তলায় পড়ে থাকা ভালো বীজকে তুলে নিয়ে পরিষ্কার জলে ধুয়ে ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে। এইরকম ১০ লিটার দ্রবণে ৩০-৪০ কেজি বীজ ধান বাছাই করা যায়।
বীজ শোধন - রোগমুক্ত সবল চারার জন্য বীজশোধন বাঞ্ছনীয় প্রতি কেজি বীজের জন্য ২.৫-৩ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম (ব্যাভিস্টিন) বা ৩ গ্রাম ট্রাইসাইক্লাজোল (বীম/ট্রুপার) বা ৫ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ব্যবহার করতে হবে।
ধানের জাত :
৭০-৮০ দিন - হীরা, ক্ষনিকা, ম্নেহা - গড় ফলন বিঘা প্রতি ৪০০ কেজি বা ৮ বস্তা।
১০০-১১৫ দিন - রেনু নয়নমনি, আই আর ৬৪, তুলসী - গড় ফলন বিঘা প্রতি ৪৫০-৫০০ কেজি বা ৮-৯ বস্তা।
১১৫-১২৫ দিন - রত্না, ললাট, ক্ষিতীশ, শতাব্দী, রঞ্জন - গড় ফলন বিঘা প্রতি ৫০০-৫৫০ কেজি বা ১০-১২ বস্তা।
১২৫-১৪০ দিন -স্বর্ণ, সাম্বামাসুরী, স্বর্ণ সাব ১, প্রতীক্ষা, রণজিৎ, শ্যামলী, সোনামনি - গড় ফলন বিঘা প্রতি ৫৫০-৬০০ কেজি বা ১১-১৩ বস্তা।
হাইব্রীড ধান (১২০-১৪০ দিন) - প্রো-আ্যাগ্রো-৬৪৪৪, কে আর এইচ-২, সি এন এইচ আর-৩, ডি আর আর এইচ-১।
সুগন্ধী ধান - গোপাল ভোগ, গোবিন্দভোগ, রাধুনী পাগল ইত্যাদি।
বীজতলা তৈরী (seedbed preparation) –
সাধারণ ভাবে সুস্থ-সবল চারার জন্য বীজতলা হওয়া উচিত মূল জমির-১০ ভাগের ১ ভাগ। সঠিক ভাবে পরিচর্যা করার জন্য সুবিধামত লম্বা এবং চওড়া ৪ ফুট হওয়া উচিত, যাতে উভয় দিক থেকে হাত দিয়ে বীজতলার মাঝবরাবর ছোওয়া যায়। প্রতি খন্ডের চারপাশে ৩০ সেমি চওড়া ও ১০ সেমি গভীর নালা থাকা উচিত। বীজতলায় বীজ দেওয়ার প্রথম দিন ২৪ ঘন্টা জলে ডুবিয়ে জল বার করে দিতে হবে। বীজতলায় যতটা বেশী সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। ফলে মাটিতে ফাঁপ থাকবে এবং চারা তোলার সময় শিকড় ছিড়বে না। প্রতি কাঠা বীজতলার জন্য ১.৫ কেজি ইউরিয়া + ২ কেজি এস.এস.পি + ৫০০ গ্রাম এম.ও.পি প্রয়োগ করতে হবে। শুকনো বীজতলায় চারা ভাঙ্গার ৭ দিন আগে আর কাদা বীজতলায় বোনার ১৮-২০ দিন পর প্রতি লিটার জলে যে কোন একটা ওষুধ যেমন ফসফামিডান ১.৫ মিলি, আযাসিফেট ০.৭৫ গ্রাম, কারটাপ ১ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে প্রয়োজন ভিত্তিক। তাছাড়া দানাদার কীটনাশক হিসেবে ১০ শতক বীজতলায় ৫ কেজি কার্বোফিউরান দেওয়া যায়। বীজতলায় বাদামী দাগ বা ঝলসা প্রবণ এলাকায় ট্রাইসাইক্লাজোল ০.৫ গ্রাম বা কাসুগামাইসিন ২ মিলি প্রতি লিটার জলে স্প্রে করতে হবে।
অনেক ক্ষেত্রেই ধানের বীজতলায় আগাছা দমন একটা প্রকট সমস্যা। সেক্ষেত্রে আগাছানাশক হিসেবে বিস পাইরিব্যাক সোডিয়াম (নমিনি গোল্ড/তারাক/আ্যাডোরা/ম্যাচো) ৩৫ মিলি/বিঘা বা প্রোটিলাক্লোর + সেফনার (সফিট/ইরেজ এন) ১৭০ মিলি/বিঘা জমির জন্য বীজ বোনার ১ দিন পর আর্দ্র মাটিতে স্প্রে করতে হবে।
ড. কিরনময় বাড়ৈ (বরিষ্ঠ বিজ্ঞানী, হাওড়া কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র)
Related Link - #বর্ষা ২০২০- ধান উৎপাদনে (West Bengal paddy production) এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ
প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা (PMFBY)- খারিফ ফসলের জন্য আবেদনের শেষ তারিখ ৩১ শে জুলাই
কৃষকবন্ধু প্রকল্প (Krishakbandhu Online Application) অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া, ২০২০
Share your comments