বাঙ্গি বা খরবুজা এক ধরনের শসা জাতীয় ফল। এটি অর্থকরী ফসল। স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টি গুণে ভরপুর এ ফল। একে সাধারনত খরমুজ, কাঁকুড় ও ফুটি নামে ও ডাকা হয়ে থাকে। প্রায় সব এলাকাতেই এটি জন্মে থাকে। এর চাহিদা প্রচুর। তরমুজের পরেই এর চাহিদা রয়েছে বাজারে। কাঁচা অবস্থায় একে সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমানে খাদ্য আঁশ রয়েছে। যার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। বাঙ্গি বা খরবুজা একটু বেশি পরিমানে পেকে গেলে ফেটে যায়।
জলবায়ু ও মাটি(Soil & climate):
শুষ্ক ও উষ্ণ ধরনের জলবায়ু বাঙ্গি বা খরবুজা চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। তাই বাঙ্গি বা খরবুজা চাষের জন্য উর্বর বেলে দোআঁশ ও পলি মাটি বিশেষ উপযোগী।
সময়:
বাঙ্গি বা খরবুজা গ্রীষ্মকালীন ফল। তাই মার্চ মাস থেকে এপ্রিল মাসে বীজ বপন করতে হয়। বৃষ্টিতে এ চারার ক্ষতি হয় তাই বর্ষার সময় এটি চাষ করা উচিত নয়।
চারা রোপণ:
চারা রোপন করার জন্য জমি তৈরি করে নিতে হবে। জমিতে আড়াআড়ি চাষ করে নিতে হবে এবং মই দিয়ে জমি তৈরি করে নিতে হবে। বাঙ্গি বা খরবুজার জাত ভেদে নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বীজ বপন করা যায়। বীজ বপনের জন্য প্রায় ৫ ফুট থেকে ৬.৬৭ ফুট দূরত্বে ১.৩৩ ফুট চওড়া করে ও গভীর করে মাদা তৈরি করতে হবে।
আরও পড়ুন -Cyclone Gulab Update: সাগরে ফুঁসছে ঘূর্ণিঝড় গুলাব, কবে-কোথায় আছড়ে পড়বে? দেখে নিন তথ্য
প্রতি মাদায় ৪ থেকে ৫ টি করে বীজ বুনতে হবে। চারা গজানোর পর ২ থেকে ৩ টি করে রেখে বাকি চারা গুলো তুলে ফেলতে হবে। বাঙ্গি বা খরবুজা গাছ এক ধরনের লতানো গাছ তাই গাছ বেশি ঘন ঘন রাখা উচিত না, যতটা সম্ভব পাতলা রাখতে হবে জমি। এ গাছ খুব কম সময় বাচে। একবার ফল ধরার দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত জমি থেকে বাঙ্গি বা খরবুজা তোলা যাবে।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
প্রতি শতাংশে গোবর সার ৪০ কেজি, ইউরিয়া সার দিতে হবে ২৫০ গ্রাম, টিএসপি সার ৩০০ গ্রাম এবং পটাশ ২০০ গ্রাম দিতে হবে | জমি তৈরির সময় জমিতে অর্ধেক সার দিয়ে দিতে হবে। আর বাকি অর্ধেক সার মাদায় প্রয়োগ করতে হবে। মাদায় প্রয়োগের ক্ষেত্রে অর্ধেক জৈব সার ও পুরো টিএসপি সার মাদায় প্রয়োগ করতে হবে। গাছ একটু বড় হলে ইউরিয়া সার ও পটাশ সার মাদার আশেপাশের মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে তারপর প্রয়োগ করতে হবে। সার দেওয়ার পর যদি মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা যায় তাহলে জমিতে সেচ দিতে হবে।
সেচ প্রয়োগ:
বাঙ্গি বা খরবুজা গাছ তাপ ও ক্ষরা সহ্য করতে পারে। কিন্তু ভালো ফলন পেতে হলে শুকনা মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে। গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। এবং গোড়া পচা রোগ দেখা দিতে পারে।
রোগ ও পোকামাকড় দমন(Disease management system):
বাঙ্গি বা খরবুজাতে সবচেয়ে বেশি হয় হোয়াইট মোল্ড রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে বাঙ্গি বা খরবুজা পচে যায়। এর জন্য প্রপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাক নাশক ব্যবহার করতে হবে। এটি জলে মিশিয়ে ১০ দিন পর্যন্ত পরপর তিন বার বিকেলের শেষে দিকে গাছে স্প্রে করে দিতে হবে। এছাড়া ও বাঙ্গি বা খরবুজা কাঠাল পোকা , থ্রিপস পোকা, ব্লাক রট রোগ ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে। বাঙ্গি বা খরবুজা গাছে ফলের মাছি নামক এক ধরনের পোকা আক্রমণ হয়ে থাকে। এ পোকা দমনের জন্য সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে।
ফলন:
জাত অনুযায়ী শতাংশ প্রতি জমিতে ৮০-১০০ কেজি বাঙ্গি বা খরবুজা ফলন হয়ে থাকে। প্রতিটি ফলের ওজন প্রায় ১-৪ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন -Worm control in agricultural field: জেনে নিন কৃমির উপদ্রব থেকে ফসল রক্ষার উপায়
Share your comments