আমফানের পর বিপর্যস্ত বাংলা। বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ধানজমিগুলি। বিপর্যস্ত সুন্দরবনের চিত্রটাও আলাদা কিছু নয়। বরং আরও খারাপ বলা যেতে পারে। সমুদ্রের জল ঢুকে চাষের জমিগুলিকে করে তুলেছে নোনতা, যা পশ্চিমবঙ্গের ধানচাষের একেবারেই উপযুক্ত নয়। কিন্তু দমে যাননি সেখানকার কৃষকরা। ধান চাষে এই অপূরণীয় ক্ষতি ঢাকতে এবার তাঁরা শরণাপন্ন হয়েছে কেরলের। আমদানি করা হয়েছে পোক্কালি ধান বীজের, যা এই নোনা জলে বপন করা সম্ভব।
পোক্কালি ধান বীজ আমদানি (Import of Pokkali rice seed) -
দক্ষিণ ২৪ পরগণার দু’জন চাষী সম্প্রতি পোক্কালি ধান বীজ আমদানি করেছেন। গত ২০ মে পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে আমফান ঘূর্ণিঝড়। বহু ধান জমির ক্ষতি হয় ঝড়ের তাণ্ডবে। সুন্দরবনের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যায়। কারণ সাগরের নোনা জল ঢুকে ধানজমিগুলিকে কার্যত ধানচাষের অযোগ্য করে দেয়। কিন্তু এই নোনা জমিতে যে ধানচাষ সম্ভব তা প্রমাণের জন্যই এই দুই ব্যক্তি পোক্কালি নামের বিশেষ বীজ আমদানি করেছে কেরালা থেকে। তাঁরা আশা করছেন এই বীজ ধানচাষে এক নতুন পথের হদিশ দিতে পারবে।
পোক্কালি ধান নোনা জলেই চাষ সম্ভব। কেরালার উপকূলবর্তী আলাপ্পুঝা, এরনাকুলাম এবং থ্রিসুর জেলায় এই পোক্কালি ধানের চাষ হয়। ধানচাষ নোনা জলে করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু পোক্কালি ধান চাষ সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করার লক্ষ্যে। পোক্কালির এই বিশেষত্বের জন্যই এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) ট্যাগ এবং এই ধানবীজ নিয়ে চলছে বহু গবেষণা।
এই অসম্ভবকে সম্ভব করার লক্ষ্যে যাঁরা নেমেছেন, তাঁরা হলেন রামকুমার মন্ডল এবং ক্ষুদিরাম হালদার। এঁরা সুন্দরবনের মথুরাপুর গ্রামের ব্লক-২-এর বাসিন্দা। আপাতত পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য জমির একাংশে পোক্কালির চাষ শুরু করেছেন তাঁরা। এই ধানবীজ যে নোনা জলে বপন সম্ভব, তা তাঁরা জানতে পেরেছিলেন ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোস্যাইটি থেকে। সুন্দরবনের এটি একটি সায়েন্স ক্লাব।
কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইএসইআর)-এর প্রখ্যাত পরিবেশবিদ সৌমিত্র ব্যানার্জী জানিয়েছেন, বিশেষত্বের জন্যই পোক্কালি আজ খবরে। শুধু তাই নয়, কেরলের ওই অঞ্চলের মানুষও এই ধানচাষকে বাঁচিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। ডঃ ব্যানার্জী জানিয়েছেন, সায়েন্স সোস্যাইটি সুন্দরবনের অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। সেখানে নোনা জল ধানজমিগুলিতে ঢুকে যাওয়ায় সেই জমিগুলিও ক্ষতির মুখে। সুন্দরবনের প্রায় ৮০ শতাংশ ধানজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যেই সেই জন্যই পোক্কালিকে বিকল্প হিসেবে সেখানে ব্যবহারের চেষ্টা শুরু হয়েছে। যদি পোক্কালির পরীক্ষা নিরীক্ষা সফল হয়, তাহলে সেখানকার কৃষকদের অবস্থার উন্নতি হবে। ইতিমধ্যেই পোক্কালি সম্পর্কে ভালোই ফলাফল পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভাইট্টিল্লা-১১ প্রকার -
কেরলে পোক্কালিকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব নিয়েছে পোক্কালি সংরক্ষণ সমিতি। সেখান থেকে ফ্রান্সিস কালাথুংগাল পাঁচ কিলো ভাইট্টিল্লা-১১ প্রকারের পোক্কালি পাঠিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। ফ্রান্সিস জানিয়েছেন, সুন্দরবনে ইতিমধ্যেই পোক্কালি চাষ সাফল্য পেতে শুরু করেছে। যা কেরলেও পোক্কালি চাষ করাকে উৎসাহ যুগিয়েছে। রাইস রিসার্চ সেন্টারের ডঃ এ.কে. শ্রীলথা জানিয়েছেন, ভাইট্টিল্লার কেরল অ্যাগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি পোক্কালির এই ভাইট্টিল্লা ১১-এর ধরন আবিষ্কার করেছে। বপনের ১১০ দিনের মধ্যে এই ধান ফলে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কেরলের জনপ্রিয় জ্যোতি চালকে টপকে গিয়েছে পোক্কালি।
পোক্কালি সম্পর্কে সবিস্তারে জানতে যোগাযোগ করুন কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে।
ত্রয়ী মুখার্জী
Image source - Google
Related link - (Pink ballworm) মহারাষ্ট্রে পিঙ্ক বলওয়ার্মের হানায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা তুলাচাষে
(Vegetable Seed Sowing Calendar) কৃষকদের জন্য সবজি বীজ বপনের ক্যালেন্ডার ২০২০-২১
এই কয়েকটি বাজরা (Millet Varieties) থেকে পেতে পারেন ভালো ফসল