টমেটো বিশ্বের অন্যতম শীতকালিন সবজি। আকর্ষনীয়তা, স্বাদ, অধিক পুষ্টিমান, বহুবিধ উপায়ে ব্যবহার উপযোগীতার কারনে সর্বত্রই এটি জনপ্রিয়। প্রক্রিয়াজাত উপযোগী সব্জির মধ্যে টমেটোর স্থান সর্বোচ্চ। টমেটো সবজি হলেও এতে ফলের সমুদয় গুনাগুন বিদ্যমান এবং ফলের ন্যায় রান্না ছাড়াও খাওয়া যায়। টমেটোতে প্রচুর পরিমানে আমিষ, শর্করা, ক্যালসিয়ামসহ ভিটামিন “এ” ও “সি” বিদ্যমান। এছাড়া টমেটোতে হৃদরোগ ও ক্যান্সার নিরাময়ক পটাসিয়াম ও লাইকোপেন পাওয়া যায়।
বর্তমানে পাহাড়ি অঞ্চলেও টমেটোর চাষ করা হচ্ছে | এই চাষে অনেক কৃষকই আগ্রহী |
জেনে নিন, আধুনিক পদ্ধতিতে পাহাড়ি অঞ্চলে টমেটোর চাষ (Ruck Tomato farming);
চাষের সময়:
টমেটো দীর্ঘ মেয়াদী ফসল। বীজ বপন হতে ফল পাকা পর্যন্ত প্রায় ১০০ দিন সময় লাগে। রবি মৌসুমে টমেটো চাষের জন্য সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তারের মধ্যে বীজতলায় বীজ বপন করতে হবে এবং নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মুল জমিতে চারা রোপন করতে হবে। তাহলে ভাল ফলন পাওয়া সম্ভব। তবে জুলাই-আগষ্ট মাসে বীজ বপন করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে মূল জমিতে চারা রোপন করা যেতে পারে |
বীজতলা তৈরী ও চারা উৎপাদন :
টমেটোর বীজতলা তৈরীর জন্য ছায়ামুক্ত সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ মাটি বেশি উপযুক্ত। মাটি ভালভাবে চাষ-মই দিয়ে ঝুরঝুরে করে আর্বজনা পচা বা গোবর সার এবং পরিমানমত রাসায়নিক সার মাটির সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। বীজ বপনের পুর্বে ৩ মিটার দৈঘ্য ও ১ মিটার প্রস্থ আকারের বেড তৈরী করতে হবে এবং ২ বেডের মাঝে ২৫-৩০ সে:মি: নালা রাখতে হবে। বীজতলায় বীজ বপনের পর মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। প্রতি বিঘা জমির জন্য ৩৫-৪০ গ্রাম বীজ বপন করতে হবে। বীজতলায় চারা গজালে রোদ ও বৃষ্টির হাত থেকে চারা রক্ষার জন্য চালার ব্যবস্থা করতে হবে। বীজতলায় চারার বয়স ৪-৫ সপ্তাহ হলে মূল জমিতে রোপণ করতে হবে। চারা ছোট ও অল্প বয়সের হলে ভাল ফলন পাওযা যায়।
চাষের জমি তৈরী (Soil):
টমেটো চাষের জন্য জমি ভালভাবে চাষ-মই দিয়ে ঝুরঝুরে করতে হবে। প্রয়োজনীয় পরিমান জৈব সার ও রাসায়নিক সার চারা রোপণের আগে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। টমেটোর চারা রোপণের সময় সারি থেকে সারির দুরত্ব ৮০-৯০ সে:মি: এবং চারা থেকে চারার দুরত্ব হবে ৫০-৬০ সে:মি:। চারা রোপণের পর ৫-৭ দিন ঝাঝরি দিয়ে চারার গোড়ায় হালকা সেচ দিতে হবে।
সার প্রয়োগ :
জমি তৈরীর সময় জৈব সার ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। টমেটো চাষে পর্যাপ্ত পরিমানে জৈবসার হিসাবে সবুজ সার, আর্বজনা পচা সার বা গোবর সার ব্যবহার করতে হবে কারণ জৈব সার হলো মাটির প্রাণ। প্রতি বিঘা জমির জন্য আবর্জনা পচা বা গোবর সার ১-১.৫ টন, টিএসপি ৪০-৪৫ কেজি, এমওপি ২৫-৩০ কেজি, জীপসাম ২০-২৫ কেজি, ইউরিয়া ১৫-২০ কেজি, বোরণ সার ১ কেজি হারে প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরীর সময় প্রথম চাষে অর্ধেক পরিমান জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে এবং বাকী অর্ধেক জৈব সার ও রাসায়নিক সার মাটির শেষ চাষের সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। মাটি ভালভাবে সমতল করে চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের পর প্রথম কিস্তি ১৫-২০ দিন, দ্বিতীয় কিস্তি ৩৫-৪০ দিন এবং তৃতীয় কিস্তি ৫০-৬০ দিন পর পর প্রতি বিঘা জমির জন্য ইউরিয়া ৯-১০ কেজি এবং এমওপি ৫-৬ কেজি হারে মিশিয়ে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। রাসায়নিক সার গাছের গোড়া থেকে ১০-১৫ সে:মি: দুরত্বে প্রয়োগ করতে হবে এবং মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের পর অবশ্যই জল সেচ দিতে হবে।
আগাছা দমন:
আগাছা ফসলের প্রধান শত্রু। আগাছা ফসলের খাদ্যে ভাগ বসায় এবং গাছকে দুর্বল করে ফেলে। তাই নিড়ানী দিয়ে আগাছা পরিস্কার করে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে নিড়ানির আঘাতে গাছের শিকড় কেটে না যায়। আবার মাঝে মাঝে নিড়ানি দিয়ে ক্ষেতের মাটি আলগা করে দিতে হবে, এতে আলো বাতাস চলাচল বৃদ্ধি পাবে। এতে গাছের শিকড় বৃদ্ধি পাবে, শিকড় মজবুদ হবে এবং ফলনও বেশী পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন - ভেষজ চাষের নতুন দিগন্ত একাঙ্গী চাষ, সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা
ফসল সংগ্রহ :
টমেটো পরিপক্ক হলে সংগ্রহ করতে হবে। সংগ্রহ করে বাতাস চলাচল করতে পারে এমন স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে এবং পাকা শুরু হলে বাজারজাত করতে হবে। টমেটো জাতভেদে বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১৫ টন পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Zucchini farming: স্বল্প ব্যয়ে জুকিনি চাষে উপার্জন করুন দ্বিগুন অর্থ
Share your comments