শাহী পেঁপে একটি এক লিঙ্গিক জাতের পেঁপে। স্ত্রী ও পুরুষ ফুল আলাদা গাছে ধরে। স্ত্রী গাছের প্রতিটি পত্র কক্ষের একটি বোঁটায় ৩টি করে স্ত্রী ফুল আসে। অপর পক্ষে পুরুষ গাছে লম্বা বোঁটায় একসঙ্গে অনেক পুরুষ ফুল ধরে।
পেঁপের এই জাতটি দেশের সর্বত্রই চাষোপযোগী এবং শাহী পেঁপের চাষ অত্যন্ত লাভজনক। চারা লাগানোর ৩-৪ মাস পর ফুল আসে। কান্ডের খুব নিচু হতে ফল ধারণ শুরু হয়। ফুল আসার ৩-৪ মাস পর পাকা পেঁপে সংগ্রহ করা যায়। গাছের উচ্চতা ১৬০-২০০ সেমি, পাতার সংখ্যা ১৭-২০টি, পাতার বোঁটার দৈর্ঘ্য ২৪-২৮ সেমি, পাতার দৈর্ঘ্য ২৩-২৭ সেমি এবং প্রস্থ ২৪-২৮ সেমি। জাতটি প্রায় সারা বছরই ফল দিয়ে থাকে এবং রোপণের ৮-৯ মাসের মধ্যে পাকা ফল পাওয়া যায়। হেক্টরপ্রতি ফলন ৪০-৬০ টন।
তাই, এই পেঁপে চাষে (Royale Papaya cultivation) কৃষকরা আর্থিক দিক থেকে লাভবান হতে পারেন |
মাটি (Soil):
সুনিষ্কাশিত, উঁচু ও মাঝারী উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। উপযুক্ত পরিচর্যার দ্বারা প্রায় সব ধরনের মাটিতেই পেঁপের চাষ করা যায়। তবে উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ মাটি উত্তম।
বীজের হার:
২ মিটার দূরে দূরে সারি করে প্রতি সারিতে ২ মিটার দূরত্বে চারা রোপণ করলে ১ হেক্টর জমিতে ২৫০০ গাছের জন্য ৭৫০০ চারার প্রয়োজন হয়। সদ্য সংগৃহীত বীজ হলে ১৪০-১৬০ গ্রাম বীজ দিয়ে প্রয়োজনীয় চারা তৈরি করা যায়।
চারা তৈরি:
বীজ থেকে বংশবিস্তার করা হয়। পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ১৫ x ১০ সেমি আকারের ব্যাগে সমপরিমাণ বালি, মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ ভর্তি করে ব্যাগের তলায় ২-৩টি ছিদ্র করতে হবে। তারপর এতে সদ্য সংগৃহীত বীজ হলে ১টি এবং পুরোনো হলে ২-৩টি বীজ বপন কতে হবে। একটি ব্যাগে একের অধিক চারা রাখা উচিত নয়। ২০-২৫ দিন বয়সের চারায় ১-২% ইউরিয়া স্প্রে করলে চারার বৃদ্ধি ভালো হয়।
জমি তৈরী (Land preparation):
পেঁপে গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই পেঁপের জন্য নির্বাচিত জমি হতে হবে জলাবদ্ধতামুক্ত এবং সেচ সুবিধাযুক্ত। জমি বার বার চাষ ও মই দিয়ে উত্তম রূপে তৈরি করতে হবে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে বেড পদ্ধতি অবলম্বন করা উত্তম। পাশাপাশি দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেমি চওড়া এবং ২০-২৫ সেমি গভীর নালা থাকবে। নালাসহ প্রতিটি বেড ২ মিটার চওড়া এবং জমি অনযুায়ী লম্বা হবে।
গর্ত তৈরি:
চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে বেডের মাঝ বরাবর ২ মিটার দূরত্বে ৬০ x ৬০ x ৪৫ সেমি আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্ত প্রতি ১৫ কেজি পচা গোবর, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ২০ গ্রাম বরিক এসিড এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট সার প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মেশাতে হবে। সার মিশ্রিত মাটি দ্বারা গর্ত পূরণ করে সেচ দিতে হবে।
রোপণ পদ্ধতি:
চারা লাগানোর পূর্বে গর্তের মাটি উলট-পালট করে নিতে হয়। প্রতি গর্তে ৩০ সেমি দূরত্বে ত্রিভুজ আকারে ৩টি করে চারা রোপণ করতে হয়। বীজ তলায় উৎপাদিত চারার উন্মুক্ত পাতাসমূহ রোপণের পূর্বে ফেলে দিলে রোপণকৃত চারার মৃত্যু হার কমবে এবং চারা দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হবে। পলিব্যাগে উৎপাদিত চারার ক্ষেত্রে পলিব্যাগটি খুব সাবধানে অপসারণ করতে হবে যাতে মাটির বলটি ভেঙে না যায়। পড়ন্ত বিকাল চারা রোপণের সর্বোত্তম সময়। রোপণের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে চারার গোড়া যেন বীজতলা বা পলিব্যাগে মাটির যতটা গভীরে ছিল তার চেয়ে গভীরে না যায়।
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
ভালো ফলন পেতে হলে পেঁপেতে সময়মতো সার প্রয়োগ করতে হবে। উপরি হিসেবে গাছপ্রতি ৪৫০-৫০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৪৫০-৫০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের এক মাস পর হতে প্রতি মাসে গাছপ্রতি ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল আসার পর এই মাত্রা দ্বিগুন করতে হবে। মাটিতে রস না থাকলে জল সেচের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
পরিচর্যা:
পেঁপের জমি সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বর্ষা মৌসুমে আগাছা দমন করতে গিয়ে মাটি যাতে বেশি আলগা হয়ে না যায় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
সেচ:
শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজন অনুযায়ী জল সেচ দিতে হবে। সেচে ও বৃষ্টির জল যাতে জমিতে জমে না থাকে সে জন্য জল নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করতে হবে।
আরও পড়ুন - Paddy Seed Bed: ধানের বীজতলা ব্যাবস্থাপনা ও বীজ উৎপাদন পদ্ধতি
ফল সংগ্রহ:
পেঁপের অধিকাংশ জাতের ক্ষেত্রে একটি পত্রকক্ষ থেকে একাধিক ফুল আসে এবং ফল ধরে। ফল কিছুটা বড় হওয়ার পর প্রতি পত্রকক্ষে সবচেয়ে ভালো ফলটি রেখে বাকিগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে। দ্বিতীয় বা তার পরবর্তী বছরে যে পেঁপে হয় সেগুলো খুব ঠাসাঠাসি অবস্থায় থাকে। ফলে ঠিকমতো বাড়তে পারে না এবং এদের আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ছোট ফলগুলো ছাঁটাই করতে হবে। হেক্টরপ্রতি শাহী পেঁপের ফলন ৪০-৬০ টন।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Organic Farming in Bangladesh: বাংলাদেশে বাড়ছে জৈব কৃষিকাজের গুরুত্ব
Share your comments