সয়াবিন এক জনপ্রিয় পুষ্টিকর ফসল | এটি আমিষ এবং তেল সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর ফসল। সয়াবিনে আমিষের পরিমাণ অন্য যেকোন খাদ্যশস্য থেকে বেশি থাকে। ডাল জাতীয় অন্যান্য ফসল থেকেও এর পুষ্টিমান দিগুণ । তেল সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে সয়াবিন ক্যালোরি ঘাটতি মেটাতে সক্ষম। পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া এবং পরিবেশ সয়াবিন চাষের জন্য উপযোগী। স্বল্প খরচে সয়াবিন চাষ (Soybean cultivation) করা যায়। বাজারে এর চাহিদা সারাবছর থাকায়, কৃষকরা সয়াবিন চাষে আর্থিক দিক থেকে লাভবান হতে পারেন |
চাষের সময়(Time):
সয়াবিন চাষ গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীতকালেও করা যায় |
মাটি(Soil):
সব ধরনের মাটিতে সয়াবিন চাষ করা যায়। তবে পলি, দো-আঁশ মাটিতে সয়াবিন চাষ সবচেয়ে ভালো হয় |
বীজের পরিমান:
চাষের জন্য লাগে একরপ্রতি ১২ থেকে ১৬ কেজি বীজ।
আরও পড়ুন -Snake Gourd Farming: জেনে নিন চিচিঙ্গা চাষের সহজ পদ্ধতি
বপন পদ্ধতি(Plantation):
সয়াবিন সারি করে বপন করা ভালো। তবে ছিটিয়েও বোনা যায়। সারিতে বপন করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব রবি মৌসুমে ৩০ সে.মি. এবং খরিপ মৌসুমে ৪০ সে.মি. দিতে হবে। গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৫-৬ সে.মি.। বীজ বপনের গভীরতা হবে ৩-৪ সে.মি.।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
প্রতি হেক্টরে, ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া, ১৫০-১৫ কেজি টিএসপি, এমওপি ১০০-১২০ কেজি এবং ৮০-১১৫ কেজি জিপসাম মাটির সাথে প্রয়োগ করতে হবে | ছায়াযুক্ত স্থানে ১ কেজি বীজের মধ্যে ৬৫-৭৫ গ্রাম অণুজীব সার মিশিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে বীজ সাথে সাথে বপন করতে হবে। সাধারণত এই সার ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার ব্যবহারের প্রয়োজন হয়না।
সেচ:
খরিপ মৌসুমে সেচের প্রয়োজন হয়না তবে প্রয়োজনে সম্পূরক সেচ দেওয়া যেতে পারে। চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমন করতে হবে।
রোগবালাই ও দমন(Disease management system):
বিছা পোকা
এটি সয়াবিনের একটি মারাত্মক পোকা। ছোট অবস্থায় এরা দলবদ্ধভাবে থাকে। কীড়া বা বিছা হলুদ রংয়ের এবং গায়ে কাঁটা থাকে। এরা সাধারণত গাছের পাতায় আক্রমণ করে। এ পোকার কীড়া দলবদ্ধভাবে থেকে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে পাতাকে পাতলা সাদা পর্দার মতো করে ফেলে।
প্রতিকার:
পোকা দেখার সাথে সাথে গাছ থেকে পোকাসহ পাতা সংগ্রহ করে পোকা মেরে ফেলতে হবে। সেচ নালায় কেরোসিন মিশ্রিত জল থাকলে কীড়া জলে পড়ে মারা যায়। প্রতি লিটার জলে ডায়াজিনন-৬০ ইসি ২ মিলি হারে মিশিয়ে বিকালে জমি করতে হবে।
কান্ড পঁচা রোগ
এ রোগ সাধারণত স্কেলেরোশিয়াম রলফসি/ফিউজারিয়াম/রাইজোকটনিয়া নামক ছত্রাকের সাহায্যে রোগ ছড়ায়। আক্রান্ত গাছের কান্ড এবং মূলে কালো দাগ পড়ে। পরবর্তীতে চারা বা গাছ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় এবং অবশেষে মারা যায়।
প্রতিকার:
বীজ বপনের আগে ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে (২.৫ গ্রাম/কেজি) বীজ শোধন করে বীজ বপন করতে হবে। গভীরভাবে জমি চাষ করতে হবে। জমি হতে ফসলের পরিত্যক্ত আঁশ, আগাছা, আবর্জনা পরিষ্কার করে রোগের উৎস নষ্ট করতে হবে।
হলুদ মোজাইক ভাইরাস:
সয়াবিনের সবুজ পাতা ফলকের উপরিভাগে উজ্জ্বল সোনালী বা হলুদ রংয়ের চক্রাকার দাগের উপস্থিতি দেখা যায়। তখন হলদে পাতাযুক্ত আক্রান্ত গাছ সাধারণত খাটো হয়ে যায়। মেঘলা আবহাওয়ায় এ রোগটি বেড়ে যায়। জাব পোকার মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার ঘটে।
প্রতিকার:
আক্রান্ত গাছ বাছাই করে তুলে মাটির নিচে পুঁতে রাখা দরকার। রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে |
ফসল সংগ্রহ:
সয়াবিন বীজ বোনা থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত ৯০-১২০ দিন সময় লাগে। ফসল পরিপক্ক হলে শুটিসহ গাছ হলদে হয়ে আসে এবং পাতা ঝড়ে পড়তে শুরু করে। এ সময় গাছ কেটে ফসল সংগ্রহ করতে হয়।
আরও পড়ুন -Jute farming in Bangladesh: বাংলাদেশে পাট চাষে কৃষকদের ব্যাপক সাফল্য
Share your comments