টম্যাটো তো আমরা সবাই খেয়েছি, কিন্তু চেরি টম্যাটো অথবা সুই চেরি টম্যাটো আমরা ক'জন খেয়েছি? তবে অনেক মানুষই আজকাল সুইট চেরি টম্যাটো নিয়ে অবগত হয়েছেন। বহু ঘরে এই বিশেষ প্রজাতির টম্যাটো রান্নার স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করাও হচ্ছে। দেখতে ভীষণই সুন্দর, এবং খেতেও স্বাদু এই টম্যাটো অনেকটা আঙুরের মতন দেখতে হলেও, পুষ্টিগুণে কিন্তু এটি অনন্য। উচ্চ ফলনশীল, পচন কম এবং বাজারে চাহিদা দিনকে দিন বাড়তে থাকায়, সুইট চেরি টম্যাটো চাষে বহু কৃষক বর্তমানে বিনিয়োগ করছেন। খুবই অল্প বিনিয়োগে এই টম্যাটো চাষ করা যায় এবং মুনাফা এর প্রচুর হওয়ায় বহু তরুণ চাষিও এখন এই চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমাদের দেশ তথা রাজ্যরও জলবায়ু এই টম্যাটো চাষে উপযুক্ত হওয়ায়, চাষিরাও এই টম্যাটো চাষ করে খুশি।
সুইট চেরি টম্যাটো চাষে উপযুক্ত মাটি ও জলবায়ু (Soil and Climate)
চেরি টমেটোর সব মাটিতে চাষ করা যায়। দো-আশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি বেশি এই চাষের পক্ষে বেশি উপযোগী। সাধারণত ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা টমেটোর ফলনের জন্য অধিক উপযোগী।
জমি তৈরী (Land Preparation)
বীজ বপনের ১৫-২০ দিন পর চারা রোপণের উপযুক্ত হয়। জমি ভালোভাবে চাষ করে এবং মই দিয়ে মাটি প্রথমে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। । চারা রোপণের দূরত্ব সারি থেকে সারি ৫৫-৬০ সেন্টিমিটার, চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪০-৪৫ সেন্টিমিটার হওয়া উচিত। নভেম্বর থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চারা রোপন করার উপযুক্ত সময়।
উপযুক্ত সার (Fertilizer)
গোবর বা কম্পোস্ট সার বিঘা প্রতি ৭০০-৮০০ কেজি হারে এই টম্যাটো চাষে দিতে হবে। টিএসপি, ইউরিয়ার পরিবর্তে ডিএপি ৮০ থেকে ৯০ কেজি। এমপি ৩০ থেকে ৪০ কেজি। তবে এমওপি সার ৩-৪ বারে প্রয়োগ করা ভাল।
পরিচর্যা (Caring)
টম্যাটো গাছ লতানো উদ্ভিদ তাই গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথেই মাচান করে দেওয়া উচিত এবং গাছ শক্ত লাঠির সাথে বেঁধে দেওয়া উচিত। নিয়মিত নিড়ানী দিয়ে মাটির উপরিভাগ আলগা করে দিতে হবে যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাস প্রবেশের সুবিধাসহ মাটি রস বেশিদিন ধরে রাখতে পারবে। কম করে ৪ থেকে ৬ বার সেচ দিতে হবে।
রোগবালাই প্রতিকার (Disease management system)
টমেটোর প্রধান শত্রু, জাব পোকা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। জাব পোকা গাছে মোজাইক রোগ ছড়ায়। এ পোকা দমনে ১০০০ লিটার জলের সাথে রগোর এল-৪০/ সাইফানন ৫৭ ইসি বা ক্লাসিক-২০ ইসি মিশিয়ে প্রতি হেক্টর জমিতে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে। অন্যদিকে ফল ছিদ্রকারী পোকার শুককীট টমেটো ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে ফলন নষ্ট করে ফেলে। এই পোকা দমনের জন্য প্রথমত আক্রান্ত পাতা ও ফল সংগ্রহ করে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিতে হবে। যদি বেশি পরিমাণে আক্রান্ত হয় তবে ফরাটাপ বা কেয়ার-৫০ এসপি ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার জলের সাথে মিশিয়ে সারা ক্ষেতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। এছাড়াও বাইকাও-১ প্রয়োগ করে পোকা দমন করা যেতে পারে।
দাবি নিয়ে বলা যায় এই প্রজাতির টম্যাটো চাষ করলে চাষিভাইরা ঠকবেন না, বরং আর্থিক দিক থেকে অন্যান্য চাষের থেকে অধিক লাভবান হবেন। বাজারে চাহিদা থাকায়, এই চাষে যে সহজেই লক্ষ্মী লাভ হবে এই নিয়ে কোনও দ্বিধা নেই।
আরও পড়ুন: Organic Farming in Sustainable Agriculture কৃষিব্যবস্থার জন্য অর্গানিক চাষের ভূমিকা
Share your comments