বেবীকর্ন স্বল্পমেয়াদী ফসল এবং যে কোন মরশুমে চাষের উপযোগী হওয়ায় ফসল বৈচিত্র্যকরণে ব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এবং বছরের বিভিন্ন সময়ে শস্য পর্যায়ে বেবীকর্ন চাষ করা যাবে। বেবীকর্নের সাথে ডাল শস্য, সবজী, ফুল প্রভৃতি চাষে ভালো লাভ পাওয়া যায়। বেবীকর্নের চাষের সাথে একত্রে ফসল চাষ চাষীদের উদ্বুদ্ধ করবে, এতে ফসল চাষের নিবিড়তা বাড়বে। বছরে ৩-৪ বার বেবীকর্নের চাষ করা যেতে পারে। জৈব চাষে এই ফসলটি বিশেষভাবে মানানসই। স্বল্পমেয়াদী ফসল হওয়ায় সার, কীটনাশকের ব্যবহার ও সেচের প্রয়োজন অন্যান্য ফসলের থেকে অনেক কম দরকার হয়। এই ফসল চাষ করে রাজ্যের কৃষকেরা নিজেদের আর্থিক উন্নতি করতে পারেন। এছাড়াও আরও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার সম্ভবনা আছে।
বড় বড় হোটেলে, শহরের বাজারগুলিতে বেবীকর্নের আধিপত্য চোখে পড়ার মতো।এ রাজ্যে তাই বেবীকর্নের যোগান মেটাতে বেবীকর্ন চাষের পরিধিও দ্রুত বাড়াতে হবে।
কর্মসংস্থানের সুযোগ – বেবীকর্ন চাষ কৃষকদের অর্থনৈতিক বলিষ্ঠতার পাশাপাশি, গ্রামীণ মহিলা ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করবে। এর ফলে ক্রেতা সহজে ও সুলভে বাজারে বেবীকর্ন পাবে। সমবায় ভিত্তিতে ব্লক স্তরে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভবনা তৈরী হবে।
বেবীকর্নের আন্তর্জাতিক বাজার – পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বেবীকর্নের বিপুল চাহিদা ও বাজার আছে। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী এশিয়ার দেশগুলিতে বেবীকর্ন খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বেবীকর্ন চাষ বিশ্বের কৃষি চালচিত্রে এক নবতম সংযোজন। বিশ্বে প্রথম ১৯৭০ সালে থাইল্যান্ডের কৃষকেরা বেবীকর্ন চাষ ও উৎপাদিত ফসলের বহির্বাণিজ্যের সূচনা করেন। থাইল্যান্ডে বছরে প্রায় ২ লক্ষ টন বেবীকর্ন উৎপন্ন হয় এবং এর প্রায় ৬০ শতাংশ পৃথিবীর ৩০ টি দেশে বিপণন হয়ে থাকে। থাইল্যান্ড ছাড়া তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, চীন, জাম্বিয়া, জিম্বাবোয়, গুয়াতেমালা, কোস্টারিকা, নিরাকাগুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বেবীকর্নের ভালো চাষ হয়ে থাকে এবং এই দেশগুলি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, যেমন – আমেরিকা, কানাডা, জাপান, ভারত, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবে বেবীকর্ন রপ্তানি করে থাকে। উল্লেখযোগ্য জাপান ও ভারতে বেবীকর্নের ভালো চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। আমাদের দেশে অন্ধ্রপ্রদেশ, মেঘালয়, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে বেবীকর্নের চাষের প্রসার ও জনপ্রিয়তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বেবীকর্নের স্যুপ, পকোড়া, মোরব্বা, জ্যাম, লাড্ডু, বরফি, আচার, তরকারী প্রভৃতি যথেষ্ট সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এই চাষ বাঙালীর রসনায় কিছু বৈচিত্র্য আনবে।
বেবীকর্নের চাষের এলাকা বৃদ্ধি বিভিন্ন ছোট ছোট শিল্প গড়তে সাহায্য করবে। বিশেষ করে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের বৃদ্ধি হবে। রাজ্যের কিছু মানুষ আর্থিক দিক দিয়ে বলীয়ান হবে। বেবীকর্নের চাষে গ্রামের মানুষ বহুভাবে উপকৃত হবে।
বর্তমানে বেবীকর্ন জাতীয় ভুট্টা খাদ্য হিসাবে বাঙালীর হেঁসেলে নিঃশব্দে জায়গা করে নিয়েছে। এ রাজ্যের বড় বড় শহরের বাজারগুলিতে বেবীকর্নের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বেবীকর্নের যোগান অপ্রতুল। বেবীকর্ন চাষে যথেষ্ট লাভের সম্ভবনা আছে, যা এ রাজ্যের দরিদ্র চাষীদের অর্থকরী উন্নতির পথ দেখাতে পারে।
তথ্যসূত্র - ইকবাল দরগাই
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
Share your comments