আঙুর (Vitis vinifera) এক প্রকারের ফল যা লতা জাতীয় দ্রাক্ষালতা (Grape Fruit) গাছ থেকে পাওয়া যায়। আঙুর একটি অতীব পরিচিত ফল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। এটা একটা বহুবর্ষজীবি বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ যা সুস্বাদু রসালো ফল দিয়ে থাকে। এতে রয়েছে ভিটামিন বি, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন৷ এটি যেমন ফল হিসেবে খাওয়া হয় তেমনি এটা হতে জ্যাম, জেলি, ভিনেগার, জুস ও বীজ হতে তেল তৈরি করা যায়। কিন্তু আমদের দেশে এই আঙুরের তেমন চাষ হয় না। তবে বর্তমানে বেশ কিছু যায়গায় আঙুরের চাষ করা হচ্ছে।
আপনি চাইলে এই রসালো সুমিষ্ট ফলটি আপনি আপনার বাড়ির চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় বা উঠোনে চাষ করতে পারেন। আসুন জেনে নেই কিভাবে এই গাছ চাষ করবেন।
মাটি তৈরি (Soil Preparation) :
আঙুর চাষের জন্য কিছু মাটি বাছাই করতে হয়। এক্ষেত্রে দো-আঁশযুক্ত লালমাটি অথবা জৈব সার সমৃদ্ধ কাঁকর জাতীয় মাটি এছাড়াও পাহাড়ের পাললিক মাটিতে আপনি আঙুর চাষের জন্য বাছাই করতে পারেন। কারণ এতে আঙুর চাষ ভালো হয়।
টবের আকৃতি বাছাই :
আঙুর একটি অতিলতানো গাছের ফল। সাধারণত আঙুর চাষের জন্য আপনি ছোট টব বা পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আপনি মাঝারি সাইজের টব বা বড় বোতল বা অন্য কোন পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। আপনি ইচ্ছা করলে আপনার বাড়ির উঠোনে বা আঙ্গিনায় মাচা করে এই আঙুরের চাষ করতে পারেন।
রোপনের সঠিক সময়:
রুট কাটিং পদ্ধতি ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে করা হয়।
বীজ বপন ও জল সেচ :
আঙুর লাগানোর ক্ষেত্রে আপনাকে সর্বপ্রথম চারা সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটস্থ নার্সারীতে যোগাযোগ করতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে যেখানে প্রচুর সূর্যের আলো পড়ে এমন যায়গায় আঙুর চারা লাগাতে হবে। এরপর আঙুর চারা গোড়ার মাটির বলসহ গর্তে রোপন করতে হবে। চারা লাগানোর পর একটি কাঠি গেড়ে গাছকে বেঁধে দিতে হবে এবং হালকা পানি সেচ দিতে হবে।
সঠিক নিয়মে আঙুর চাষাবাদ কৌশল:
আঙুর চারা লাগানোর পর এর বৃদ্ধির জন্য সময়মতো বাড়তি সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর একবছর পর আঙুর গাছ ছাটাই করতে হবে। গাছ ছাটাই করার অন্তত সাত দিন আগে গাছের গোড়ায় হালকা সেচ দিতে হবে। খেয়াল রাখবেন আঙুর গাছে পটাশ সার ব্যবহার করলে আঙ্গুর মিষ্টি হয় এবং রোগ বালাইয়ের উপদ্রব কম হয়।
সারের পরিমাণ ও সার প্রয়োগ:
আঙুর গাছে সাধারণত আপনি বাড়িতে তৈরি জৈব সার দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি মাটির সঙ্গে গোবর ও ইটের গুঁড়া মিশিয়ে দিতে পারেন। এছাড়াও আপনি আঙুর গাছে অজৈব সার নিয়মিত দিতে পারেন।
পোকামাকড় দমন ও কীটনাশক:
আঙুর গাছে সাধারণত পিঁপড়া ও বিভিন্ন ধরণের পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে। এসব পিঁপড়া ও পোকামাকড়ের হাত থেকে আঙুর গাছ কে রক্ষ করতে হলে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করে দিতে হবে।
পোকার আক্রমণ -
গুবরে পোকা :
এরা কচি পাতা খেয়ে ফেলে। পাতার শিরার অংশ বাকি রেখে পুরো পাতা খেয়ে থাকে।
দমন : ম্যালাথিয়ন৪০০ মিলি প্রতি ১৫০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে৷
থ্রিপস এবং জ্যাসিড :
এরা মূলত পাতা ও ফলের রস শোষন করে। পাতার নিচের অংশের রস খেয়ে ফলে ফলে পাতার উপরে সাদা দাগ পড়ে।
দমন: ম্যালাথিয়ন ৪৮০০ মিলি প্রতি ১৫০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
হলুদ ও লাল বোলতা :
পরিপক্ক ফলকে ছিদ্র করে এবং খেয়ে ফেলে।
দমন: কুইনাফোস ৬০০ মিলি প্রতি ১৫০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
বাগানের যত্ন ও পরিচর্যা:
যেহেতু আঙুর গাছ লতা জাতীয় গাছ তাই উদ্ভিদ একটু বড় হলেই এটাকে সঠিক ভাবে বাড়ার জন্য মাচা করে দিতে হবে। শীতকাল আসলেই আঙুর গাছের সব পাতা ঝরে যায় এ সময় গাছটিকে দেখলে মনে হবে যেন গাছটি মরে গেছে। কিন্তু বসন্ত শুরু হওয়ার পর আঙুর গাছে ফুল-ফল ধরতে শুরু করে। এজন্য প্রতিবার গাছের ফল সংগ্রহের পর গাছ সঠিক ভাবে ছাটাই করতে হবে।
সংগ্রহ :
আঙুর ফল মূলত যখন ফল পরিপক্কভাবে পাকে তখনই ফল সংগ্রহ করতে হয়। তবে এপ্রিল-মে মাসে ফুল দেখা দেয় এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে পুরোপুরি ভাবে আঙুর ফল পাকে। সাধারণত গ্রীষ্মকালে আঙুর ফল সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যেন আঙুর ফল পাকতে পাকতে বর্ষাকাল না চলে আসে। কারণ বর্ষা চলে এলে ফল মিষ্টি হয় না।
সঠিক ভাবে পরিচর্যা করা হলে এক একটি আঙুর গাছ কমপক্ষে ৩০ বছর ফলন দিতে পারে। আর একটি গাছ থেকে আপনি কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ কেজি ফল পেতে পারেন।
আরও পড়ুন - কুমড়ো গোত্রীয় ফসলে সম্ভাব্য রোগ ও তার প্রতিকার (Pumpkin Crops Management)
Share your comments