‘ড্রাগন ফল’-এই নামটি শুনলে বা ফলটি দেখলে আগে অনেকেই কম বেশি অবাক হতেন৷ কিন্তু এই ফলের জনপ্রিয়তা বর্তমানে এতোটাই বেড়েছে যে, এই ফল সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা রয়েছে অনেকেরই৷ মূলত থাইল্যান্ড, আমেরিকায় এই ফল খাওয়ার প্রচলন বেশি থাকলেও এখন এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এর চাষও হচ্ছে বিভিন্ন দেশে৷
এক নজরে এই ফলের গুণাগুণ- ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টের উপস্থিতির ফলে এই ফল ত্বককে উজ্জ্বলতা প্রদান করে৷ এই ফলে উপস্থিত ক্যারোটিন টিউমার ধ্বংস করতে সহায়তা করে৷ এই ফল নিয়মিত খেলে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে৷ এই ফল পরিপাক প্রক্রিয়া সঠিক রাখে, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম থেকে মেলে মুক্তি৷ এতে প্রয়োজনীয় খনিজ প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা হাড়কে দৃঢ় করে তোলে৷ পাশাপাশি এই ফল স্নায়ুতন্ত্রও ঠিক রাল এবং এটি দাঁতও মজবুত করতে সাহায্য করে৷
উল্লেখ্য, ড্রাগন ফলের গুণাগুণ যেমন প্রচুর, তেমনই এই ফল চাষে উপার্জনের সম্ভাবনাও বেশ ভালো৷ এমনকি আপনি চাইলে এটি বাড়ির ছাদে টবে বা ড্রামেও ফলাতে পারেন৷ তবে তা ২০ ইঞ্চির হলে ভালো হয়৷ এতে গাছটির শিকড় ছড়িয়ে পড়ার যথেষ্ট জায়গা পাবে এবং ফলনও ভালো হবে৷ প্রায় সব ধরণের মাটিতেই ড্রাগন ফল চাষ করতে পারেন৷ তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে-দোআঁশ মাটিতে এর ফলন সবথেকে ভালো হয়৷ মূলত, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এর ফলন সবথেকে ভালো হয়৷
মৃত্তিকা প্রস্তুতি - প্রথমে বেলে, দোআঁশ, পটাশ সার, টি.এস.পি, গোবর সার একসঙ্গে মিশিয়ে জল দিয়ে টবের মধ্যে প্রায় ১২ দিনের মতো রেখে দিতে হবে৷ কিছুদিন পর এই মিশ্রণটি পুনরায় ভালো করে নেড়ে তা ফের ৫ দিন রেখে দিতে হবে৷ নির্দিষ্ট সময়ের পর মাটি ঝরঝুরে হলে বুঝবেন তা তৈরি হয়ে গিয়েছে৷ এবার তা টবে দিয়ে তাতে ড্রাগনের চারা রোপন করুন৷ টব বা ড্রাম যাই ব্যবহার করবেন, তার নিচে চার থেকে পাঁচটি ছিদ্র করে দিতে হবে জল নিকাশের জন্য৷
পরিচর্যা- এটি ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ, তাই এতে যেমন জল কম লাগে, তেমনই রোদ প্রয়োজন হয় অনেকটাই৷ সুতরাং, লক্ষ্য রাখতে হবে গোড়ায় যেন জল না জমে যায়৷ ড্রাগনের চারা একটু বড় হয়ে এলে তাতে একটি খুঁটি পুঁতে দিতে হবে উদ্ভিদের ভার ধরে রাখার জন্য৷ এটি লতানো প্রকৃতির উদ্ভিদ হওয়ায় শক্ত খুঁটির প্রয়োজন হয়৷ এর পচন লাগা রোধ করতে কার্বেন্ডাজিম + ম্যানকোজেব (২-৩ গ্রাম/লি.) জলে মিশিয়ে এবং পোকা থেকে রক্ষা করতে ডাইমিথয়েড অথবা ক্লোরপাইরিফস অথবা সাইপারমেথ্রিন + ক্লোরপাইরিফস ১-২ এম.এল/লি. জলে ভালো করে মিশিয়ে স্প্রে করে দিতে হবে৷ এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী করার জন্যে দ্রবণে ষ্টিকিং ব্যবহার করে তা প্রয়োগ করতে পারেন। ষ্টিকিং স্থানীয় দোকানে না পেলে এর পরিবর্তে দ্রবণে কোন শ্যাম্পু মিশিয়ে (দ্রবণ তৈরির সময়) তা প্রয়োগ করুন।
ফল- ড্রাগন গাছে সাদা ও হলুদ রঙের লম্বাটে ফুল হয়৷ ভালো পরিচর্যা পেলে ৭-৮ মাসের মধ্যে গাছে ফল ধরতে শুরু করবে৷ একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছে প্রায় ২৫-১০০ টা ফল হতে পারে এবং ২ বছরের গাছ ফল দিতে পারে প্রায় ২০ টির মতো৷ পাকা ফল গাছে ৫ দিন পর্যন্ত রাখা যেতে পারে৷ প্রায় ৫০ বছর একক একটি ফলের গাছ বাঁচতে পারে৷ দ্রুত বর্ধনশীল এই উদ্ভিদের ফলন শেষে এর শাখা প্রশাখা কিছুটা ছেঁটে দিতে হবে যাতে পরবর্তী সময়ে ফলন অধিক হয়।
এই ফলের পুষ্টিগুণ যেহেতু প্রচুর তাই এর বাজারমূল্যও অন্যান্য ফলের থেকে অনেক বেশি৷ আর বাড়ির ছাদে এই ফল চাষ করায় এর থেকে আপনার অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের পন্থাও উন্মোচিত হবে।
বর্ষা চ্যাটার্জ্জী ও
স্বপ্নম সেন
Share your comments