প্রথাগত তেউড়ের তুলনায় টিস্যু কালচার কলার সুবিধা থাকায় অনেকেই এই পদ্ধতিতে কলা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে টিস্যু কালচার কলার চাষ করলে কৃষকের উপার্জনও অধিক হয়। তবে চাষের একটি প্রধান অঙ্গ রোগ ও কীটপতঙ্গের ব্যবস্থাপনা। জেনে নিন কলার বিশেষ কিছু রোগ ও তার ব্যবস্থাপনার মাধ্যম সম্পর্কে।
টিস্যু কালচার কলার রোগ ও তার নিয়ন্ত্রণ –
রোগ - পোকা নিয়ন্ত্রণ - কলার প্রধান কীটশত্রুগুলি হল পাতা ও ফলের ক্ষত সৃষ্টিকারী পোকা, কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, শেকড়ে আক্রমণকারী কৃমি, ইত্যাদি। কীটপতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ধরণের উপর নির্ভর করে কীট নিয়ন্ত্রণের জন্য ০.০৪ % এন্ডোসালফান, ০.১ % কার্বারিল বা ০.৫ % মনোক্রটোফস ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যাবে।
কলার গুরুতর রোগগুলি হল - ঢলে পড়া রোগ, বা ছত্রাকঘটিত পানামা উইল্ট (ফিউজারিয়াম অক্সিসপোরাম) ও ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট, পাতায় দাগ ও পুড়ে যাওয়া রোগ, লিফ - স্পট (সিগাটোগা) এবং ভাইরাস ঘটিত রোগ, যেমন বাঞ্চি-টপ, স্ট্রেক ভাইরাস, ব্র্যাকট মোজাইক ভাইরাস, ইত্যাদি।
পানামা উইল্ট - এটি একটি মাটিবাহিত ছত্রাকজনিত রোগ এবং শিকড়ের মাধ্যমে গাছের দেহে প্রবেশ করে। প্রাথমিক লক্ষণগুলি হ'ল পাতার ব্লেড এবং পেটিওল সহ নীচের পাতাগুলি হলুদ হওয়া। পাতাগুলি সিউডোস্টেমের চারদিকে ঝুলে থাকে এবং শুকিয়ে যায়। রোগাক্রান্ত গাছের সিউডোস্টেমে হলুদ বর্ণের থেকে লালচে রেখাগুলি রাইজমের দিকে রঙের ঘনত্বের সাথে লক্ষণীয়।
নিয়ন্ত্রণ: চারা রোপণের ৬ মাস পরে কার্বেনডাজিম (১০ গ্রাম / ১০ লিটার জল) দ্রবণে দ্রবীভূত করার পরে মাসে দু'বার প্রয়োগ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে জৈবসার প্রয়োগ যেমন, ট্রাইকোডার্মা ভিড়িডি বা সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স কার্যকর।
পাতার দাগ - প্রাথমিক লক্ষণগুলি হল পাতায় হালকা হলুদ বর্ণের দাগ।
নিয়ন্ত্রণ: ডিথেন এম -৪৫পরিমাণ মতো জলে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে পারেন। এছাড়া কপার অক্সি ক্লোরাইড (৩গ্রাম/লিটার) অথবা থায়োফ্যানেট মিথাইল ১গ্রাম/লি. জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ভাইরাস ঘটিত রোগ, যেমন বাঞ্চি-টপ, স্ট্রেক ভাইরাস, ব্র্যাকট মোজাইক ভাইরাস, ইত্যাদি ছত্রাক সংক্রমণের ক্ষেত্রে ১ % বোর্দো (Bordeaux) এর সাথে কপার অক্সিক্লোরাইড ৩ গ্রাম / লি. জলে অথবা কার্বেন্ডাজিম ১০ গ্রাম / ১০ লি. জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
সর্বোপরি বলা যায়, টিস্যু কালচার জি নাইন (গ্র্যান্ড নাইন) কলার উৎকৃষ্ট গুণমানের জন্য কীটপতঙ্গের আক্রমণ মুক্ত ও রোগ-পোকা মুক্ত স্বাস্থ্যকর চারা রোপণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে মনে রাখতে হবে, চারা সম্পূর্ণ রোগমুক্ত হলেও, লাগানোর পর পরিবেশে রোগ-জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে অথবা সঠিক পদ্ধতিতে পরিচর্যা না করলে রোগ-পোকার সংক্রমণ ঘটতে পারে। তাই চাষের সময়কালে চাষীদের যত্নবান হতে হবে এবং সঠিক ভাবে উদ্ভিদটির পর্যাপ্ত খেয়াল রাখতে হবে।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
তথ্যসূত্র - শুভদীপ নাথ (সহ উদ্যানপালন আধিকারিক, উত্তর ২৪ পরগণা)
Share your comments