হলুদ মসলা হিসেবে একটি জনপ্রিয়, বহুল ব্যবহৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। আমাদের প্রতিদিনের রান্নায় হলুদের ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি। মসলা হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও অনেক ধরণের প্রসাধনী কাজে, রং শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে হলুদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও হলুদের সবথেকে বড় গুন্ হলো ভেষজ বা ঔষধি গুন |
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে হলুদের জুড়ি মেলা ভার | এই হলুদের চাহিদাও সারাবছর বাজারে আকাশছোঁয়া | এই নিবন্ধে হলুদ চাষের (Turmeric Cultivation) পদ্ধতি, রোগ দমন ও অন্যান্য খুঁটিনাটি আলোচনা করা হলো;
মাটি (Soil):
সব ধরণের মাটিতে চাষ করা গেলেও উর্বর দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি হলুদের জন্য ভালো। যে কোন ফলের বাগানের শুরুতে সাথী ফসল হিসেবে হলুদ চাষ লাভজনক। আবার সম্পূর্ণ ছায়াযুক্ত ফলের বাগানে চাষ করলে ফলন খুবই অল্প হবে, তবে অর্ধেক ছায়া অর্ধেক আলো এমন বড় ফলের বাগানে চাষ করালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
বীজ বপণ:
চৈত্র মাস কন্দ লাগানোর উপযুক্ত সময়। সাধারণত, ১৫-২০ গ্রাম ওজনের ১-২টি ঝুঁড়ি বিশিষ্ট কন্দ লাগাতে হয়। ৫০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে সারি করে ২৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে ৫-৭ সেন্টিমিটার গভীরে কন্দ লাগাতে হয়। প্রতি হেক্টরে ২৫০০ কেজি কন্দ প্রয়োজন হয়। কন্দ লাগানোর পর ভেলী করে দিতে হয়।
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
মূলত, জমির উর্বরতার উপর সারের পরিমাণ নির্ভর করে। সাধারণত, প্রতি হেক্টরে সারের পরিমাণ হলো গোবর ৪-৬ টন, ইউরিয়া ২০০-২৪০ কেজি, টিএসপি ১৭০-১৯০ কেজি, এমওপি ১৬০-১৮০ কেজি, জিপসাম ১০৫-১২০ কেজি ও জিংক সালফেট ২-৩ কেজি। জমি তৈরির সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট ও ৮০ কেজি এমওপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। কন্দ লাগানোর ৫০-৬০ দিন পর ১০০-১২০ কেজি ইউরিয়া, ভেলী হালকাভাবে কুপিয়ে প্রয়োগ করে আবার ভেলী করে দিতে হয়। প্রথম কিস্তির ৫০-৬০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং আরও ৫০-৬০ দিন পর তৃতীয় কিস্তির সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তির উপরি সার হিসেবে প্রতি হেক্টরে প্রতিবারে ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া ও ৪০-৪৫ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তির সার সারির মাঝে প্রয়োগ করে কোঁদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে এবং সামান্য মাটি ভেলীতে দিতে হবে।
সেচ:
মাটিতে রস না থাকলে মাঝে মাঝে সেচ দিতে হবে। বৃষ্টির জল যাতে গাছের গোড়ায় না জমে সেজন্য নালা করে জল বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আগাছা জন্মালে তা পরিষ্কার করতে হবে। তবে সার উপরি প্রয়োগের সময় আগাছা পরিষ্কার করে প্রয়োগ করা ভালো।
রোগ ও প্রতিকার (Disease management system):
হলুদের মাঝরা পোকা:
কান্ড আক্রমণ করে বলে গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। ফলে উৎপাদন কম হয়। এ পোকার মথ কমলা হলুদ রঙের এবং পাখার উপর কালো বর্ণের ফোটা থাকে। পোকা কান্ড ছিদ্র করে ভিতরের দিকে খায় বলে পাতা হলুদ হয়ে যায়। অনেক সময় ডেড হার্ট লক্ষণ দেখা যায়। আক্রান্ত কান্ডে ছিদ্র ও কীড়ার মল দেখা যায়। আর্দ্র আবহাওয়ায় এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়।
প্রতিকার:
আক্রান্ত ডগা তুলে ফেলা ও সম্ভব হলে পোকার কীড়া ধরে মেরা ফেলতে হবে |চাষের সময় দানাদার কীটনাশক যেমন কারটাপ ৪ জি ব্যবহার করতে হবে। অধিক আক্রমণে অনুমোদিত কীটনাশক যেমন-রিজেন্ট ১ মিলি/লিটার, মার্শাল ৩ মিলি/লিটার, কারটাপ ২.৮ গ্রাম/ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
বিছা পোকা:
এ পোকার কীড়া ছোট অবস্থায় একত্রে থাকে ও বড় হলে পুরো মাঠে ছড়িয়ে পড়ে বিধায় প্রাথমিক অবস্থায় এদের দমন করা উচিৎ। এটি মথ জাতীয় পোকা এবং কীড়ার শরীর লোমে ঢাকা থাকে। কীড়াগুলো ক্ষতিকারক। এ পোকার আক্রমণ পাতা ও গাছের নরম অংশ খায়। আক্রমনের মাত্রা বেশি হলে পুরো গাছ পাতা বিহীন হয়।
প্রতিকার:
আলোর ফাঁদ দিয়ে মথ আকৃষ্ট করে মারা। কীড়া দলবদ্ধ থাকাকালীন সংগ্রহ করে হাত দিয়ে পিষে মারা। ক্ষেতের মাঝে কঞ্চি পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করলে মথ, কীড়া ইত্যাদি ধরে খায়। শিকারী গান্ধী ও পরজীবী পোকা সংরক্ষণ। আক্রান্ত ক্ষেতের চারিদিকে নালা করে কেরোসিন মিশ্রিত জল রাখলে কীড়াগুলো ঐ জলে পড়ে মারা যায়। সময়মত আগাছা ও মরা পাতা পরিষ্কার করা।
আরও পড়ুন - Sapota or Chiku Farming: আপনিও কি সবেদা চাষে ইচ্ছুক? জেনে নিন চাষের নিয়ম
ফসল সংগ্রহ:
সাধারণত লাগানোর ৯-১০ মাস পর পাতা শুকিয়ে গেলে হলুদ সংগ্রহ করা হয়। প্রতি হেক্টরে ২৫-৩০ টন কাঁচা হলুদ পাওয়া যায়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Pengba Fish Farming: বাড়তি উপার্জন চান? রুই কাতলার সাথেই চাষ করুন পেংবা
Share your comments