পশ্চিমবঙ্গের চা শিল্প: দার্জিলিং থেকে ডুয়ার্স পর্যন্ত

পশ্চিমবঙ্গের নাম শুনলেই যে ক'টি জিনিস মনে আসে, তার মধ্যে অন্যতম হলো চা। রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে সমতল ভূমি পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে চা বাগান। "দার্জিলিং চা" বিশ্বের বাজারে একটি স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃত, আর ডুয়ার্স ও তেরাই অঞ্চলের চা দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। এই ব্লগে আমরা জানব পশ্চিমবঙ্গের চা শিল্পের ইতিহাস, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, চাষপদ্ধতি, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার কথা।

KJ Staff
KJ Staff

পশ্চিমবঙ্গের নাম শুনলেই যে ক'টি জিনিস মনে আসে, তার মধ্যে অন্যতম হলো চা। রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে সমতল ভূমি পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে চা বাগান। "দার্জিলিং চা" বিশ্বের বাজারে একটি স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃত, আর ডুয়ার্স ও তেরাই অঞ্চলের চা দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। এই ব্লগে আমরা জানব পশ্চিমবঙ্গের চা শিল্পের ইতিহাস, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, চাষপদ্ধতি, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার কথা।

ইতিহাসের পাতায় পশ্চিমবঙ্গের চা

ভারতে ব্রিটিশদের হাত ধরে চা শিল্পের সূচনা হয় ১৯শ শতকের গোড়ার দিকে। দার্জিলিং অঞ্চলে প্রথম চা বাগান গড়ে ওঠে ১৮৪১ সালে, ড. আর্কিবল্ড ক্যামেল নামক এক ব্রিটিশ আধিকারিকের উদ্যোগে। এরপর ধীরে ধীরে ডুয়ার্স ও তেরাই অঞ্চলেও চা চাষ শুরু হয়। চা চাষের উপযুক্ত জলবায়ু, মাটির গঠন ও ভূ-প্রকৃতিগত বৈচিত্র্য পশ্চিমবঙ্গকে চা উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে।

দার্জিলিং চা: হিমালয়ের সোনালী স্বাদ

দার্জিলিং চা-কে বলা হয় "চায়ের শ্যাম্পেন"। হালকা রঙ, সূক্ষ্ম সুবাস ও ফ্লোরাল স্বাদের জন্য এটি আন্তর্জাতিক বাজারে অতি মূল্যবান। দার্জিলিং জেলার প্রায় ৮৭টি চা বাগানে বছরে প্রায় ৮–১০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপন্ন হয়। এই চা মূলত "অর্থোডক্স" পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয়, যা হাতে করে প্রক্রিয়াজাত হয়।

দার্জিলিং চা GI Tag (Geographical Indication) প্রাপ্ত, যার মানে হলো এই চা শুধুমাত্র দার্জিলিং অঞ্চলেই উৎপাদিত হতে পারে।

ডুয়ার্স ও তেরাই: পরিমাণে এগিয়ে

ডুয়ার্সতেরাই অঞ্চল পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশে অবস্থিত, যা মূলত সমতল ভূমি। এই অঞ্চলে বছরে গড়ে ২১০–২৪০ সেমি বৃষ্টিপাত হয় এবং মাটির উর্বরতা চা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত। ডুয়ার্স অঞ্চলে প্রায় ১৫০টিরও বেশি চা বাগান রয়েছে এবং এখান থেকে বছরে প্রায় ১৮০–২০০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপন্ন হয়, যা ভারতের মোট উৎপাদনের প্রায় ২০%।

ডুয়ার্সের চা মূলত "CTC" (Crush, Tear, Curl) পদ্ধতিতে তৈরি হয়, যা দুধ চায়ের জন্য আদর্শ।

 শ্রমিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট

চা শিল্প পশ্চিমবঙ্গের লক্ষাধিক মানুষকে কর্মসংস্থান দেয়। বিশেষত আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের বহু মানুষ চা বাগানে কাজ করেন। তবে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসনের ব্যবস্থা নিয়ে বহুদিন ধরেই প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন চা বাগানে এখনও পরিকাঠামোর ঘাটতি ও শ্রমিক অধিকারের অভাব লক্ষ্য করা যায়।

চ্যালেঞ্জ ও সংকট

পশ্চিমবঙ্গের চা শিল্প বর্তমানে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি:

  • আন্তর্জাতিক বাজারে দার্জিলিং চায়ের চাহিদা কমে যাওয়া
  • জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উৎপাদন হ্রাস
  • শ্রমিক অসন্তোষ ও বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • নতুন প্রজন্মের চা চাষে আগ্রহের অভাব
  • মিশ্র মানের কারণে বাজার হারানো

 সম্ভাবনার পথ           

তবে সব কিছুর পরেও পশ্চিমবঙ্গের চা শিল্পে এখনো অনেক সম্ভাবনা আছে:

  • জৈব চা (Organic Tea) উৎপাদন বৃদ্ধি
  • পর্যটনের সঙ্গে চা শিল্পের সংযোগ (Tea Tourism)
  • ব্র্যান্ডিং ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণ
  • ক্ষুদ্র চা চাষিদের সহায়তা ও প্রশিক্ষণ প্রদান
  • স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে দার্জিলিং চায়ের প্রচার

"দার্জিলিং থেকে ডুয়ার্স" — এই বিস্তৃত ভূখণ্ড শুধু প্রকৃতির নয়, চায়ের এক বৈচিত্র্যময় জগত। পশ্চিমবঙ্গের চা শিল্প শুধু অর্থনীতির অংশ নয়, এটি রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও। সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তি ও শ্রমিক কল্যাণের মাধ্যমে এই শিল্প আবারও তার স্বর্ণযুগে ফিরতে পারে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে দার্জিলিং চায়ের এক চুমুক যেন বাংলার গর্বের স্বাদ নিয়ে আসে।

Published On: 13 May 2025, 04:22 PM English Summary: West Bengal's Tea Industry: From Darjeeling to Dooars

Like this article?

Hey! I am KJ Staff . Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters